সংসদে আরপিও সংশোধনী বিল পাস
যুদ্ধাপরাধের মামলায় দন্ডিতদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা, প্রার্থীর নির্বাচনী খরচ ১৫ লাখ টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকায় বৃদ্ধি, দলীয় প্রধানের দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের ব্যয় নির্বাচনী খরচের আওতা বহির্ভূত রাখা, মনোনয়ন বঞ্চিতদের প্রার্থীতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিলের বিধান এবং দলে যোগ দেয়ার পর তিন বছর পার না হলে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যে বিধান ছিল তা রহিত করার বিধান সংযোজনসহ বেশ কিছু সংশোধনী এনে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২’ এর সংশোধনীর জন্য সংসদে উত্থাপিত ‘রিপ্রেজেন্টেশন অব দি পিপল (এমেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০১৩’ নামে বিলটি সংসদে পাস হয়েছে।
সোমবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিরোধী দলের সদস্যরা সংসদে উপস্থিত না থাকায় বিলটির ওপর জনমত যাছাই ও বাছাই কমিটিতে প্রেরণের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়নি।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে উত্থাপিত হয় এবং গত রবিবার সংসদীয় কমিটি বিলটি পাসের সুপারিশ করে সংসদে রিপোর্ট দেয়। সংসদীয় কমিটি তাদের সুপারিশে দলীয় প্রার্থী হওয়ার জন্য নূন্যতম ৩ বছর ওই দলের সদস্য থাকার বাধ্য-বাধকতার বিধান বিলুপ্ত করার একটি উপক্রমিক যুক্ত করে দেয়।
বিলটির উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩’ এর অধীনে সংঘটিত অপরাধে দন্ডিত ব্যক্তিকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা, জামানতের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করে নগদ, ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার বা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা প্রদান, সংবিধানের (পঞ্চদশ) সংশোধনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সদস্য সংখ্যা নির্ধারণকল্পে আনীত পরিবর্তন, নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যানকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য সদস্যকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে উল্লেখ, প্রার্থীর নির্বাচনী খরচ ১৫ লাখ টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকায় উন্নীতকরণ এবং দলীয় প্রধানের দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের ব্যয় নির্বাচনী খরচের আওতা বহির্ভূত রাখা, কমিশনের প্রয়োজন মাফিক সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের বদলি কার্যকর করা, দুই হাজার টাকার পরিবর্তে ৫ হাজার টাকা জামাদানপূর্বক নির্বাচনী মামলা দাখিল করা এবং রাজনৈতিক দলের তহবিলে কোন ব্যক্তি কর্তৃক অনুদানের পরিমাণ ১০ লাখ টাকার পরিবর্তে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত এবং কোনো কোম্পানি বা সংস্থা কর্তৃক অনুদানের পরিমান ২৫ লাখ টাকার পরিবর্তে ৫০ লাখ টাকায় উন্নীতকরণের বিধান প্রণয়নকল্পে ‘রিপ্রেজেন্টেশন অব দি পিপল অর্ডার, ১৯৭২’ এর কতিপর্য সংশোধনী এনে উক্ত বিলটি প্রস্তুত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, বিলটি আইনে পরিণত হলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে মর্মে আশা করা যায়। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের মোট ১৮টি ধারা-উপধারায় সংশোধনী আনা হয়েছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ধারা-৩ সংশোধিত আকারে প্রতিস্থাপন করে বলা হয়েছে-‘সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে।
উল্লেখ্য, সংবিধানের ১১৮ (১) বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং এ বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’ বিদ্যমান আইনে নির্বাচন কমিশনারের সংখ্যার উল্লেখ্য নেই।
অধ্যাদেশের ধারা-১২ এর উপধারা (১) এর (০) পরিবর্তন করে যুদ্ধাপরাধে দন্ডিতদের নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ার বিধান সংশোধন করে বলা হয়েছে, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অধীন যে কোন অপরাধে দন্ডিত হলে তার নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না’।
গণপ্রতিনিধি অধ্যাদেশের ৪৪ (ই) ধারার উপধারা (২) এ সংশোধনী এনে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সরকারের কোন বিভাগ বা অন্য কোন সংগঠনে নিযুক্ত যে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারিকে বদলি করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে তার জন্য অনুরোধ করবে এবং সেই অনুরোধ প্রাপ্তির পর সেক্ষেত্রে বদলী যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর হবে।
১৬ ধারা সংশোধনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কোনো একটি আসনে একটি দল থেকে একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হলে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিনের মধ্যে দল কর্র্তৃক লিখিতভাবে একজন প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে প্যানেলের অন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল স্বয়ংক্রিয় বলে গণ্য হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা চূড়ান্তভাবে মনোনীত প্রার্থীদের নামের তালিকা তার দপ্তরের উপযুক্ত স্থানে ঝুলিয়ে দেবেন।
আইনের দফা ৫ এর (ক) এর পর উপক্রমিক (অ) সংযুক্ত করে উপক্রমিক (ল) বিলুপ্ত করা হয়েছে।
আরপিওর ‘(অ) উপ-ধারা (জে) প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা সম্পর্কে বলা আছে, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার দিন থেকে পূর্ববর্তী ৩ বছরে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলে নিরবচ্ছিন্ন সদস্যপদ না থাকলে কোন ব্যক্তি প্রার্থী হওয়ার যোগ্য হবেন না। তবে নতুন নিবন্ধিত দলের প্রার্থীদের জন্য এ বিধান প্রযোজ্য নয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে আরপিও সংশোধন করে এ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইনটি সংসদে অনুমোদন পায়।