তিন দিনের হরতালে নিহত ১৬, দুই হাজারের বেশী আহত
গুলি, টিয়ারশেল, বোমা, ককটেল, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে সারাদেশে ১৮ দলীয় জোটের ডাকা টানা ৬০ ঘণ্টা হরতাল পালিত হয়েছে। এ ৩ দিনে দেশের কয়েকটি স্থানে উভয় জোটের ১৪ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রথম দিনে ৭, দ্বিতীয় দিনে ৬ ও শেষ দিনে ৩ জন নিহত হয়। আহত হয়েছেন পুলিশ-সাংবাদিকসহ সহস্রাধিক নেতাকর্মী। গ্রেফতার করা হয়েছে কয়েকশ’।
প্রথম দিন : হরতাল চলকালীন প্রথম দিনে সহিংসতায় ফরিদপুর, যশোর, পাবনা, বগুড়া ও পিরোজপুরে উভয় জোটের ৭ জন নিহত হয়েছেন। ফরিদপুরের নগরকান্দায় পুলিশের গুলিতে মারুফ শেখ নামে এক যুবদল নেতা নিহত হয়েছেন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হরতালের সমর্থনে বিএনপি মিছিল বের করে। আওয়ামী লীগ কর্মীরা মিছিলে বাধা দিলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরে পুলিশ এলে ত্রিমুখী সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এ সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়লে মারুফ গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
যশোরের অভয়নগরে হরতাল সমর্থক ও বিরোধীদের সংঘর্ষে এক যুবলীগ নেতা নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। সংঘর্ষে পৌর যুবলীগ নেতা আলমগীর হোসেন শিমুল নিহত হন। এ সময় তার অপর তিন সহযোগী গুরুতর আহত হন। সংঘর্ষকালে বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ও ভাঙচুর করা হয়।
পিরোজপুরের জিয়ানগরে জামায়াত-বিএনপির হরতালে স্বপন শীল নামের এক যুবলীগ কর্মী নিহত হয়েছে। এদিকে জিয়ানগর বালিপাড়ায় রাস্তার গাছ কেটে ফেলে ৮ কিলোমিটার সড়ক অবরোধ করে রাখে হরতালকারীরা। উপজেলা সদরের সবক’টি স্কুল কলেজ মাদরাসার ক্লাস বন্ধ করে দেয় এবং ১০/১২টি গ্রুপে ভাগ হয়ে খ- খ- মিছিল ও সমাবেশ করে তারা। আতঙ্কে বাজারের সকল প্রকার দোকানপাট বন্ধ ছিল।
পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্মীদের গুলিতে জুলহাস হোসেন মুন্নাফ (৩৫) নামে এক জামায়াত কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরো ৫ জন গুলিবিদ্ধ হন।
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে মোসলেম উদ্দিন নামে এক যুবলীগ নেতা নিহত হন।
দ্বিতীয় দিন : হরতালের ২য় দিনে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, ভৈরব ও বাজিতপুরে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে কুলিয়ারচর উপজেলা বিএনপি কর্মী হাসান (৩৭) নামের একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অন্তত শতাধিক।
জামালপুরের ইসলামপুরে নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের যমুনার চরের রামভদ্র গ্রামে গ্যারেজে রিকশা রাখাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় শাহাজাদা নামের এক রিকশাচালক খুন হয়েছে। এই ঘটনায় কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়েছে। তবে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নিহতকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করছে।
ঝিনাইদহের হরিণাকু- উপজেলা বিএনপি সভাপতি আবুল হোসেনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও বোমা মেরে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হরিণাকু-ের দখলপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
মির্জাপুরের গোড়াই এলাকায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল আলিম (৩৮) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরো ১৫ জন। চট্টগ্রামে পিকেটারদের ধাওয়ায় একটি দ্রুতগামী ট্রাক উল্টে চালক ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম ওয়াসিম (৩২)।
শেষ দিন : হরতালের ৩য় দিন জেলা শহরগুলোতে ব্যাপক সংঘর্ষ হলেও তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি রাজধানীতে। শেষ দিন দুপুর ১২টার দিকে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার ধোয়াইল বাজার এলাকায় বিএনপি-আ.লীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে মারুফ হোসেন (২০) নামে এক ছাত্রদল কর্মী নিহত হয়েছেন। এ সময় শামীম (২০) ও রুবেল (২২) নামে আরো ২ যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কিশোরগঞ্জ ও রাজবাড়ীতে আওয়ামীলীগের ২ জনের মৃত্যু হয়।
এদিকে টানা ৩ দিনের হরতালে রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি স্থানে সরকারি ও বিরোধী দলের নেতা, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বাসা লক্ষ্য করে বোমা, ককটেল ও গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনাকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন না রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা। তারা বলছেন, এই সহিংসতা ২০০৬ সালের সহিংসতার পূর্বাভাস মাত্র।