লন্ডনে রাস্ট্রপতিকে নাগরিক সংবর্ধনা

Abdul Hamidলন্ডন প্রবাসীদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ অ্যাডভোকেট। বুধবার বিকেলে ওয়েস্টমিন্সটার সেন্ট্রাল হলে প্রবাসী বাঙালিদের উদ্যোগে রাষ্ট্রপতিকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
নাগরিক সংবর্ধনায় প্রবাসীদের ভালোবাসায় আবেগাপ্লুত রাষ্ট্রপতি বলেন, রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে আপনাদের সঙ্গে সহজে যেভাবে মিলিত হতে পারতাম, সেই সুযোগ এখন আমার আর নেই। আমি এখন প্রটোকলের বেড়াজালে বন্দি। এখন আর মন খুলে কথা বলতে পারি না।
সর্বস্তরের প্রবাসীদের উদ্যোগে আয়োজিত এ নাগরিক স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী।
টেলিভিশন উপস্থাপিকা সৈয়দা সায়েমা আহমেদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী হিমাংশু বিশ্বাসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠানে সমবেতরা দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
Presedentএরপর একে একে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটিক পাঠ করা হয়। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন মওলানা শফিকুর রহমান বিপ্লবী। গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিঠক পাঠ করেন যথাক্রমে রবিন পাল, লিপি হালদার ও প্রশান্ত বড়ুয়া।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের পর প্রবাসীদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে প্রদান করা হয় মানপত্র।
মানপত্র পড়ে তা রাষ্ট্রপতিকে হস্তান্তর করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট সৈয়দ আনাস পাশা।
প্রবাসীদের সংবর্ধনার জবাবে রাষ্ট্রপতি বলেন, আজীবন জনগণের পাশে থেকে সততার সঙ্গে রাজনীতি করার চেষ্টা করেছি। আপনাদের মধ্যেই ছিল আমার অবস্থান। কিন্তু আজ প্রটোকলের কারণে ইচ্ছে করলেই আমি আর আপনাদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারি না।
তিনি বলেন, স্পিকার থাকাকালীনও মনখুলে কথা বলতে পারতাম। কিন্তু রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বা অন্যান্য বিষয়ে কথা বললেও তা আমার প্রেসসেক্রেটারি সাংবাদিকদের কাছে তাদের প্রটোকলের নিয়মানুযায়ী ব্রিফ করেন, এতে আমার অনেক কথাই আসে না। রাষ্ট্র প্রধানের কথাবার্তা প্রেসে অনেক সময় টুয়িস্ট হয় বলেই এই বাধ্যবাধকতা।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি পদটি নিরপেক্ষতার প্রতীক, সুতরাং বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে এমন মন্তব্য সম্পর্কে সতর্ক থাকতেই রাষ্ট্রপতির মন খুলে কথা বলার এই বাধ্য-বাধকতা।
রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে আরও বলেন, রাজনীতির প্রথম পর্যায়ে কোনোদিন এমপি হবে এটি কল্পনাও করিনি। ’৭০ সালে বঙ্গবন্ধু ধরে এনে নির্বাচনে প্রার্থী করেন। জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হই। এরপর জনগণের প্রতিনিধি হয়ে বিরামহীন কাটিয়েছি পার্লামেন্টে। এমপি হওয়ার কোনো কল্পনা রাজনীতির শুরুতে যেমন করি নি, ঠিক তেমনি রাষ্ট্রপতি হবো এমন অলীক কল্পনাও আসেনি মনে কোনোদিন।
Pressedentতিনি বলেন, সততা সঙ্গে নিয়ে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন যেমন পাড়ি দিয়েছি, ঠিক তেমনি যেন বর্তমান দায়িত্বকাল শেষ করতে পারি, এই দোয়া আপনাদের কাছে চাই।
রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতীয় যেকোনো ক্রান্তিকালে সততা, নিষ্ঠা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে আমার দায়িত্ব পালন করে যাব। আজ আপনাদের ভালোবাসার জবাবে এই প্রতিশ্রুতি অন্তত দিতে পারি।
স্বাগত বক্তব্যে হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস রাষ্ট্রপতিকে একজন মহান রাজনীতিক আখ্যায়িত করে বলেন, জনসম্পৃক্ততা ও গ্রহণযোগ্যতাই আজ তাকে রাষ্ট্রের এই সর্বোচ্চ পদে নিয়ে এসেছে। তৃণমূল থেকে রাজনীতি শুরু করে ধাপে ধাপে তিনি উঠে এসেছেন আজকের এই সর্বোচ্চ পর্যায়ে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক শিক্ষায় জন আস্থা অর্জন করতে পেরেছিলেন বলেই এটি সম্ভব হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তার প্রজ্ঞা, নিরপেক্ষতা ও জনআস্থা ব্যবহার করে বাংলাদেশের বর্তমান ক্রান্তিকাল উত্তরণের একটি পথ বের করবেন এমনটি আশা করে জাতি।
তিনি আরও বলেন, আগামীতে আর কোনো রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনায় যোগদান করার জন্যে বেঁচে থাকব কি না, আমি জানি না। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সংবর্ধনাই আমার শেষ অংশগ্রহণ ধরে নিয়ে মৃত্যুর আগে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে তার নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হবে এমন আশা নিয়ে ঘরে ফিরতে চাই।
প্রবাসীদের পক্ষ থেকে দেওয়া মানপত্রে জাতীয় ক্রান্তিকালে জনগণের ভরসার জায়গা হিসেবে অবিহিত করে রাষ্ট্রপতিকে বলা হয়, ‘সারা জীবন দেশ ও জনগণকে আপনি দিয়েছেন অনেক। মাটি ও মানুষের অত্যন্ত কাছের মানুষ আপনি। জনগণের হৃদয়ের কথা আপনি ছাড়া আর কে ভালো বুঝবে বলুন’।
মানপত্রে রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়, ‘স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক যুদ্ধাপরাধী সমর্থকদের হিংস্র থাবায় বাংলাদেশ আবারও ক্ষতবিক্ষত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে একাত্তরের মতো ওরা আবারও মেতে উঠেছে রক্তের হোলি খেলায়। ওদের রুখতে জাতীয় ঐকমত্য আজ খুবই জরুরি’।
রাষ্ট্রপতিকে সেই জাতীয় ঐক্যের কারিগরের ভূমিকা গ্রহণ করার জন্যে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে মানপত্রে আহ্বান জানানো হয়।
এর আগে বিকেল ৪টায় রাষ্ট্রপতি সংবর্ধনা মঞ্চে এসে পৌঁছুলে তাকে স্বাগত জানান যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস, প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান শরীফ, নাগরিক সংবর্ধনা কমিটির জালাল উদ্দিন, সামসুদ্দিন মাস্টার, সৈয়দ ফারুক, নঈমুদ্দিন রিয়াজ, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, শাহাব উদ্দিন চঞ্চল, আব্দুল আহাদ চৌধুরী, সাবেক কাউন্সিলর সেজ্জাদ মিয়া, নুরুল হক লালা মিয়া, মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশীদ, কাউন্সিলর খলিল কাজী, লোকমান হোসেইন, কাউন্সিলর আব্দুল আজিজ তকি, সৈয়দ আবুল মনসুর লীলু, আনসার আহমেদ উল্লা, নুর উদ্দিন আহমেদ, আসম মিসবাহ, সারব আলী, শাহ শামীম, জামাল খান, ঝলক পাল, আবুল কালাম মিসলু ও লুৎফুর রহমান সায়াদসহ অন্যরা।
উল্লেখ্য, নবম ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ইকোনমিক ফোরাম (ওয়াইফ) এর বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে গত সোমবার রাষ্ট্রপতি তিন দিনের সফরে লন্ডন আসেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনসহ ইসলামিক বিশ্বের নেতাদের সঙ্গে মঙ্গলবার এক্সেল লন্ডনে তিনি এই সম্মেলনে যোগদান করেন। প্রবাসীদের সংবর্ধনা গ্রহণ শেষে বুধবার স্থানীয় সময় রাত ১০টায় আমিরাত এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে রাষ্ট্রপতি লন্ডন ত্যাগ করেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button