ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলে কেউ ঘরে বসে থাকবে না
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক নাগরিক সংগঠন সেইভ বাংলাদেশ আয়োজিত বিশাল জনসভায় বক্তারা বলেছেন, লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যাকারী, রাতের অন্ধকারে বাতি নিবিয়ে আলেম-উলামা, নিরীহ মাদ্রাসার ছাত্র হত্যাকারী ফ্যাসীবাদী সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নেই। মানুষ হত্যাকারী সন্ত্রাসী আওয়ামী সরকার ও তার সহায়তাকারী সকল খুনীদের বিচার বাংলাদেশে হবেই।
বক্তারা আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে লঘি-বৈঠা দিয়ে মানুষ খুন করার নির্দেশ প্রদানের বিচার বাংলাদেশে হবেই। পৃথিবীর কোন শক্তি এ বিচার রুখতে পারবে না। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের বুকের হাহাকার এবং চোখের পানি যে খুনের সাথে জড়িত এ খুনের বদলা নেওয়া হবে।
বুধবার রাতে পূর্ব লন্ডনের ওয়াটার লিলি সেন্টারে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে রাজনীতিবীদ, আইনজীবী, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, খতিব, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিগণ বক্তব্য রাখেন।
বিশিষ্ট আইনজীবী, সেইভ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ব্যরিস্টার নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে, মাহিম মজুমদারের পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা, বিশিষ্ট আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ।
হাফেজ নওশাদ মাহফুজ এর পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামা ইউরোপের আমীর আল্লামা মুফতি শাহ ছদর উদ্দিন, বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও খতিব আজমল মশরুর, টাওয়ার হেমলেটস এর ডেপুটি মেয়র ওহিদ আহমদ, জামায়াতে ইসলামী ইউরোপের মুখপাত্র ব্যারিষ্টার আবু বকর মোল্লা, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এম এ মালিক, লেখাফত মজলিস ইউকের আমীর অধ্যাপক আব্দুল কাদির সালেহ, বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিষ্টার নজির আহমদ, বিএনপি নেতা নসরুল্লাহ খান জুনায়েদ প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক ছাত্রনেতা ও বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ ২৮ অক্টোবরের আওয়ামীলীগ লঘি-বৈঠার তান্ডবকে ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায় এবং জঘন্য বর্বরতা উল্লেখ করে বলেন, পল্টনে তারা মানুষ হত্যার যে নারকীয়তা দেখিয়েছে সেটার কোন ক্ষমা হবে না। আওয়ামীলীগ যদি মনে করে ক্ষমতা ব্যবহার করে মামলা প্রত্যাহারের মাধ্যমে তারা পার পেয়ে গেছে তবে সেটা ভূল। বাংলাদেশের জনগণকে ঐ হত্যাকান্ডের জন্য বেশী প্রমাণ খুব বেশী খুঁজতে হবে না। প্রমাণের যত উপকরণ সব কিছু আছে। পরিকল্পিত ঐ খুনের দায়ে নির্দেশ-দাতার চরম দন্ড হবে এবং দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ তা বিশ্বাস করে। এডভোকেট আকন্দ দেশ ব্যাপী পুলিশ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অত্যাচার, নির্যাতন, খুন, সন্ত্রাসের বর্ণনা দিয়ে বলেন, গুলি চালিয়ে আমাদের আন্দোলনকে স্তব্দ করা যাবে না। আল্লামা সাঈদী, মাওলানা নিজামী সহ দেশের শীর্ষ ইসলামী নেতৃবৃন্দকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলে জনগণ আর বসে থাকবে না। আমাদের ধৈর্য্যরে বাঁধ ভেঙ্গে দিবেন না। কোরআনের মর্যাদা রক্ষায় আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত তবুও কোন অপশক্তির কাছে মাথা নত করবো না।
এডভোকেট মুতিউর রহমান আকন্দ ১৮ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রশংসা করে বলেন, আপনার আপোষহীনতায় দেশের জনগণের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে। আমরা আপনাকে সমর্থন দিয়ে যাবো। আপনি কোন জালিম শক্তিকে ক্ষমা করবেন না। জালিমদের প্রতিরোধে আপনি দেশপ্রেমিক কর্মীদের নির্দেশ দিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আল্লামা মুফতি শাহ ছদর উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ কোরআন, নবী-রাসূল (সাঃ) এবং শাহজালাল, শাহ মাখলুমের বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আলেম-উলামা ইসলামপ্রিয় জনতার। সে দেশে কোন জালেম, ইসলাম, মানবতাবিরোধী এবং খুনী চক্রের রেহাই হবে না। এদেরকে ক্ষমা করা হবে না। এদের বিরুদ্ধে জনগণকে জাগতে হবে। প্রতিরোধ এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে এরা কোনভাবে পালাতে না পারে।
টাওয়ার হেমলেটস এর ডেপুটি মেয়র ওহিদ আহমদ বলেন, আমি বাংলাদেশের সন্তান। বাংলাদেশে নিরীহ মানুষ, ধর্মপ্রাণ মানুষ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। মিছিলে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, রাতের অন্ধকারে ধর্মীয় নেতাদের পাখির মতো গুলি করে যেভাবে হত্যা করা হচ্ছে এর বিরুদ্ধে অবশ্যই আন্তর্জাতিক কমিউনিটি কথা বলবে। তিনি বলেন, মানুষ হত্যা যদি মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়, তাহলে শেখ হাসিনা সরকারেরও একদিন বিচার হবে।
বিশিষ্ট আইনজীবী, জামায়াতে ইসলামী ইউরোপের মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা বলেন, শেখ হাসিনা যদি গণতন্ত্র, আইনের শাসন, জনগণের প্রতি বিশ্বাসী হতেন, তবে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে খেলা করতেন না। তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর ২০০৬ এর বিচার থেকে কোন খেলাই রেহাই দিবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ শেখ হাসিনার দুঃশাসন ভূলবে না। ইসলামী আন্দোলনের নেতা কর্মীদের প্রতি যত জুলুম হয়েছে এর বিচার হবেই।
বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও খতিব আজমল মশরুর বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কথা বলে মানুষের গণতন্ত্রকে যেভাবে হরণ করা হচ্ছে সেটা পৃথিবীর কোঁথাও দেখা যাবে না। বাংলাদেশে মানুষের জীবন এখন অত্যাচারী শাসকের বুলেটের মুখে পড়ে আছে। রাস্তায় পুলিশ দিয়ে গুলি করে জনতাকে হত্যা করছে, নবী (সাঃ) এর অবমাননার প্রতিবাদ করায় রাতের অন্ধকারে ধর্মীয় নেতা, দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র, ধর্মপ্রাণ মানুষদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়, সে দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের কথা বলা হাস্যকর। আজমল মশুরুর বলেন, শেখ হাসিনা দেশে দুর্বৃত্তদের শাসন চালাচ্ছেন। মানুষ খুন করছেন, ইসলামী ব্যক্তিত্বদের হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন, কিন্তু তার মনে রাখা উচিত পৃথিবীর কোন অত্যাচারীরই পরিণতি ভাল হয়নি এবং এক মাঘে কখনো শীত যায়নি। শীত বার বার আসে।
অধ্যাপক আব্দুল কাদির সালেহ বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছা, আকাঙ্খার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শেখ হাসিনা খুনের নেশায় মত্ত হয়েছেন। ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের হত্যা করে তার সাহস বেড়ে গেছে। ক্ষমতায় এসে শত শত আলেম-উলামা, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের গুম-খুন করে তিনি ঔদ্ধতার সীমা ছাড়িয়ে গেছেন। অধ্যাপক সালেহ প্রধামন্ত্রীকে হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, অনেক রক্তপাত করেছেন। এবার বন্ধ করে বিচারের জন্য অপেক্ষা করুন।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এম এ মালিক ১৮ দলীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করে বলেন, নেতাকর্মীদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হচ্ছে। শদীদদের পতনের জন্য রাজপথে নামতে নির্দেশ দিন। আমরা নাস্তিক শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করতে প্রয়োজনে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত আছি।
সভাপতির বক্তব্যে বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামীলীগ রক্তের যে নেশায় মেতেছে, সেটা আর চলতে দেয়া যায় না। দেশপ্রেমিক জনগণ যদি শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে যদি আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে না পড়ে তবে বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মাত্রা বেড়ে যাবে। ব্যারিস্টার নজরুল ২৮ অক্টোবর ২০০৬ এর ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীরা লঘি-বৈঠার যে ভয়াবহ তান্ডব চালিয়েছিলো সেটার বিচার বাংলাদেশের মাটিতে হবেই। এ থেকে রেহাই, ক্ষমা পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।