ইউরোপে মুসলমানদের অবদান অনস্বীকার্য : বসনিয়ার প্রেসিডেন্ট বাকির ইজেতবেগভিস

LMCবসনিয়ার প্রেসিডেন্ট বাকির ইজটবেগভিস বলেছেন, ইউরোপে নতুন করে মুসলমানদের বসতি গড়ে উঠেনি। এখানে হাজার হাজার বছর ধরে মুসলমানরা বসবাস করছেন। ইউরোপের মুসলমানদের ইতিহাস-ঐতিহ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ইউরোপ এগিয়ে যাওয়ার পেছনে মুসলমানদের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি গত ২৮ অক্টোবর সোমবার সন্ধ্যায় ইস্ট লন্ডন মসজিদ ও লন্ডন মুসলিম সেন্টারের উদ্যোগে তাঁর সম্মানে আয়োজিত এক সবংর্ধনা অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলেন।
তিনি ইস্ট লন্ডন মসজিদ সম্পর্কে তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ইউরোপের বুকে ইস্ট লন্ডন মসজিদকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। আমার প্রাণ জুড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, এই মসজিদ একদিন ইউরোপের মুসলমানদের নেতৃত্ব দেবে বলে আমি আশাবাদী।
মারিয়াম সেন্টারের হল রুমে ইস্ট লন্ডন মসজিদের নির্বাহী পরিচালক দেলওয়ার হোসেইন খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইস্ট লন্ডন মসজিদ ও লন্ডন মুসলিম সেন্টারের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান  হাবিবুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন লন্ডন মুসলিম সেন্টার ও মারিয়াম সেন্টারের বিলডার মোহাম্মদ আরিফ জাবাদানী। শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন বসনিয়ান ইমাম হাফিজ সিজাদ মিকিক।
প্রেসিডেন্ট বাকির ইজেটবেগভিস আরো বলেন, তাঁর দেশ বসনিয়ার মুসলমনরা অন্য কোনো দেশ থেকে মাইগ্রান্ট হয়ে আসেননি। তাঁরা বংশ পরস্পরায় বসনিয়ার নাগরিক। সার্ব ও ক্রোয়েশিয়ানরা ইউরোপের বুকে বসনিয়া নামক একটি মুসলিম রাষ্ট্র গড়ে উঠক সেটা চায়নি। তাই সেদিন তারা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা করেছিলো। হাজার হাজার মুসলমানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো। সহস্রাধিক মসজিদ ধ্বংস করেছিলো। মুসমলমানদের ঘরবাড়ি নিশ্চি? করে দিয়েছিলো।
LMC 2তিনি বলেন, ইউরোপে অনেক মুসলিম মনিষী ছিলেন যারা দুর্লভ সব আবিস্কারের মাধ্যমে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এসব আবিস্কারকে কাজে লাগিয়েই আজকের ইউরোপ। মুসলমানদের অবদান খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ইউরোপের মুসলমানদের ভবিষ্যত উজ্জল। তিনি ইউরোপীয়ান মুসলমানদেরকে  তাদের অতীত ঐতিহ্য ধরে রাখার আহবান জানিয়ে বলেন, আমরা সেই সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য থেকে ক্রমান্বয়ে বিচ্যুত হচ্ছি। ইসলাম ও মুসলমানদের বিভিন্ন দাবীতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
প্রেসিডেন্ট বাকির ইজেটবেগভিস আরো বলেন, ইরাক, সিরিয়াসহ বিভিন মুসলিম অধ্যুষিত দেশে আজ চরম অস্থিরতা চলছে। মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছেন। তিনি আশাবাদী, বসনিয়ার মতোই একদিন এসব দেশের মুসলমানরা স্বাধীনভাবে বসবাসের অধিকার পাবেন। তিনি বসিনয়ার মুসলমানদের স্বাধীনতা অর্জনে মুসলিম-ননমুসিলম যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
আরিফ জাবাদানী বলেন, ২০ বছর আগে মুসলমান হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি  সার্ব বাহিনী বসনিয়ায় সহস্রাধিক মসজিদ ধ্বংস করে দেয়। তখন আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম বসনিয়ায় মসজিদ নির্মাণ করে দেবো। ইনশাল্লাহ ইতোমধ্যে অনেকগুলো মসজিদ নির্মাণ করতে পেরেছি। আরো মসজিদ নির্মাণের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
LMC 3এলএমসির চেয়ারম্যান  হাবিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট বাকির ইজেটবেগভিসকে অভিনন্দন জানান। তিনি ইস্ট লন্ডন মসজিদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও বহুমুখী কার্যক্রমের বর্ণনা তুলে ধরেন। বক্তব্যের শুরুতে তিনি বসনিয়া হত্যাকান্ডে নিহত সকল মুসলমানের শহিদী মর্যাদা কামনা করেন।
তিনি প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তিনি শুধু বসনিয়ার মুসলমানদেরই প্রতিনিধিত্ব করছেননা, বরং ইউরোপের মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
অনুষ্ঠানে কনজার্ভেটিভ পার্টির এমপি ডমেনিক গ্রীভ, লর্ড হিলটন, সিটিজেন ইউকের চীফ এক্সিকিউটিভ নেইল জেমসন, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুতফুর রহমান, ডেপুটি মেয়র অহিদ আহমদ, এমসিবির সেক্রেটারী জেনারেল ফারুক মুরাদ, লন্ডন মুসলিম সেন্টারের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী, সেক্রেটারী আইয়ুব খান, ইমাম ও খতীব শাইখ আব্দুল কাইয়ুম, লেবার পার্টির মেয়র প্রার্থী জন বিগস, টাওয়ার হ্যামলেটস লেবারের লিডার কাউন্সিলার সিরাজুল ইসলাম, কাউন্সিলার আমিনুর খান, কাউন্সিলার গোলাম রব্বানীসহ সাংবাদিক ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button