বাংলাদেশ নিয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের টানাপোড়ন
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট এবং আসন্ন ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে টানাপোড়ন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের বিষয়ে দুই দেশর সম্প্রতিক কর্মকাণ্ড চোখে পড়ার মত। এমনকি বাংলাদেশের রাজনৈকিত বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা ক্রমেই ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলছে।
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দিল্লির মনোভাব মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গির সাথে ক্রমেই অমিল দেখা দিচ্ছে। ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১ টার দিকে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। এতে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক জটিল পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সাংঘর্ষিক মনোভাবের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে দিল্লির সাউথ ব্লক ঘুরে গেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা। এ সময় তিনি যে লম্বা বৈঠক করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের সাথে তাতে দিল্লি-ওয়াশিংটন যথেষ্ট দরকষাকষি হয়েছে। আর এই কষাকষিতে ভারতের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মন কষাকষিও হয়েছে।
ড্যান মজীনা ও সুজাতা সিংহ যখন সাউথ ব্লকে বসে ঢাকায় কার কী নীতি বাস্তাবায়ন হবে তা নিয়ে বোঝাপড়া করছিলেন তখন রাজধানী ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের হরতাল চলছিল। এ সময় বাংলাদেশে চলা চরম সহিংসতা এবং অস্থিরতা নিয়ে মজীনা-সুজাতা গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেন।
সূত্রের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া বলেছে, বিএনপি সহিংসতা বন্ধ করার ব্যাপারে আগ্রহী নয়, তারা তত্ত্বাবধায়কের দাবিতেই অনড় থাকতে চায়।
ভারতে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ বিএনপি যে ধরনের রাজনীতি করছে তার ধরণ নিয়ে। ঠিক এই জায়গাতেই যুক্তরাষ্ট্রের সথে ভারতের ‘বিরোধ’।
ভারত মনে করে, প্রকাশ্যেই কট্টর হয়ে ওঠা রাজনৈতিক দল বিএনপি-জামায়াতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ।
দিল্লির বিশ্বাস, তারা সফল হলে বাংলাদেশ জাতি হিসেবেই সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের হয়ে যাবে। কারণ গত দুই বছরে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি অনেক বেশি কট্টর ও চরমপন্থী হয়ে উঠেছে।
শুধু তাই নয়, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জামায়াত-বিএনপির ওপর আল-কায়েদা ও পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার গুরুতর প্রভাব ও সম্পর্ক শনাক্ত করেছে বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়।
পাকিস্তান ও পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি দেশের কাছ থেকে ব্যাপক আর্থিক তহবিলের যোগান পায় এই গ্রুপগুলো।
প্রতিবেদনটিতে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এবং আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ড. মুহম্মদ ইউনূসের সাথে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে হাসিনার মারাত্মক বিরোধ ঘটনাও তুলে ধরা হয়।
পত্রিকাটি মনে করে, ২০০১ সালে পদুয়া-রৌমারি সীমান্তে বিডিআর গণহত্যা চালিয়ে বিএসএফের যে ১৫ জওয়ান নিহত হওয়ায় ঘটনা ঘটিয়েছে তার জন্য বিএনপিকে বিশ্বাস করতে পারে না ভারত। এই ঘটনা ভারত কোনোভাবেই ভুলতে পারছে না বলে জানিয়েছে পত্রিকাটি।
বিএনপিতে ভারতের স্বা”ছন্দ্য না পাওয়ার আরো কারণ হল, জামায়াতকে নিয়ে তাদের আন্দোলন ও সরকার গঠন। জামায়াতের সাথে বিএনপির সম্পর্ক ভারত মেনে নিতে পারছে না।
পত্রিকাটি আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছে, ২০০১ সালে জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি সরকার গঠনের পর দেখা গেল জেএমবি ও হুজির ভয়বহ তৎপরতা।
এছাড়া ভারত মনে করছে, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের তাদের জনসংখ্যায় মিশিয়ে ফেলার কারণেই মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা মারাত্মক আকার ধারণ করছে।