ইসলামী অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হতে চায় যুক্তরাজ্য
ইসলাম অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হতে চায় যুক্তরাজ্য। বিশ্বের প্রথম অমুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাজ্য শরিয়াহ সম্মত সরকারি বন্ড ‘শুকুক’ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটির আশা এর মাধ্যমে তার দ্রুত বিকাশমান ইসলামী পুঁজির কেন্দ্রবিন্দু পরিণত হতে পারবে।
লন্ডনে আয়েজিত বিশ্ব ইসলামী অর্থনৈতিক ফোরামের (ওয়াইআইইএফ) বার্ষিক সভায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এই আকাঙ্খার কথা প্রকাশ করেন। ওয়াইআইইএফ সম্মেলনে মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক নেতা, প্রধান নির্বাহী ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সভায় ক্যামেরন বলেন, ‘মুসলিম বিশ্বের বাইরে লন্ডন ইতোমধ্যেই ইসলামি পুঁজির বৃহত্তম কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আজ আমাদের লক্ষ্য আরো এগিয়ে যাওয়া। আমি চাই- বিশ্বের অন্যান্য শহরকে ছাড়িয়ে দুবাই ও কুয়ালালমপুরের মতই লন্ডনকে বিশ্বের ইসলামি পুঁজির মহান রাজধানীতে পরিণত করতে।’
লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে চলতি সপ্তাহেই চালু হচ্ছে ইসলামিক মার্কেট ইনডেস্ক।
বিশ্বে বর্তমানে ইসলামী পুঁজির পরিমাণ ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার। তবে প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের চেয়ে দ্রুতহারে বাড়ছে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা।
শরিয়াহ সম্মতভাবে অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য ২০০৬ সালে মালয়েশিয়ায় ওয়াইআইইএফ প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলামি অর্থনীতিতে সুদ নিষিদ্ধ। প্রকৃত সম্পদের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয় ইসলামি পুঁজি।
ব্রিটেন বিশ্বের প্রথম অমুসলিম রাষ্ট্র যেখানে ওয়াইআইইএফের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ব্রিটিশ সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লস সম্মেলনে আগত অতিথিদের জন্য এক আড়ম্বরপূর্ণ নৈশভোজের আয়োজন করেন।
ক্যামেরন জানান, আগামী বছর ব্রিটেন ৩২ কোটি ডলারের শরিয়াহ সম্মত বন্ড শুকুক বাজারে ছাড়বে। এতে সম্পদের অংশীদারিত্ব দেয়া হবে, সুদ থাকবে না।
ব্রিটেনের ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি ডলারের শেয়ার মার্কেটে শুকুকের এই অঙ্ক খুব বড় না হলে দাহরাম ইউনিভিার্সিটির ইসলামি অর্থনীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মেহমেত আসুতে বলেন, ব্রিটেনের এই উদ্যোগ ‘অত্যন্ত ইঙ্গিতপূর্ণ’।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ব্রিটেনর পুঁজি দরকার। বিশ্বের অর্থনৈতিক সংকটের কারেণ ইউরোপের অন্যান্য দেশের মত ব্রিটনেও পুঁজি সংকট চলছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশগুলোতে পুঁজি সংকট নেই। আশা করা হচ্ছে ব্রিটেনে এসব দেশ থেকে বিপুল ইসলামি পুঁজি বিনিয়োগ করা হবে।
মেহমেত বলেন, বিশ্বে ইসলামী পুঁজির বিকাশের বিশাল সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে।
বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ মুসলমান হলেও ইসলামি পুঁজির পরিমাণ ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার বা বিশ্বের মোট পুঁজির মাত্র ১ শতাংশ।
সম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামি পুঁজির দ্রুত বিকাশ হচ্ছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে চালু করেছে ইসলামিক ফাইন্যান্স সেন্টার।
তবে ইসলামি পুঁজির ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। ১৯৭৫ সালে সৌদি আরবে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামি পুঁজির ধারণা বাস্তবভিত্তি লাভ করে।
বিশ্বব্যাংকের বিপরীতে মুসলিম বিশ্বে ইসলামি পুঁজির বিকাশই ছিল আইডিবি প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য।