ইউরোপের প্রবৃদ্ধির পথে বাধা ঋণভার
প্রায় চার বছরের আর্থিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে ইউরো এলাকার দেশগুলো সামান্য মাত্রায় হলেও সুদিনের আশা করছে। কিন্তু অনেক অপ্রিয় সংস্কার চালানো সত্ত্বেও বিপুল ঋণের ভারে তাদের প্রবৃদ্ধি অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। ইটালি, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড ও পর্তুগাল দীর্ঘ সময়ের মন্দা কাটিয়ে আবার প্রবৃদ্ধির পথে ফেরার তোড়জোড় করছে। ব্যাপক মাত্রায় সংস্কার ও সরকারি ব্যয় কমিয়ে প্রতিযোগিতার বাজারে তারা নিজেদের অবস্থান আরও জোরদার করছে। কিন্তু চার বছর আগের তুলনায় তাদের ঘাড়ের উপর ঋণের ভার এত বেশি, যে কাজটা খুবই কঠিন হবে। তাই কিছু পর্যবেক্ষক এই পরিস্থিতিকে জাপানের সঙ্গে তুলনা করছেন, যেখানে প্রায় এক দশক ধরে প্রবৃদ্ধির নিচু হার ও চরম বেকারত্ব দেখা গিয়েছিল। তবে স্পেনের অগ্রগতির আশা উজ্জ্বল বলে মনে করে ইউরোগ্রুপ।
সামান্য হলেও সে দেশে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে ও বেকারত্বের হার কমছে। শুধু গ্রিসের ক্ষেত্রে কিছুটা সন্দেহ রয়ে গেছে। আগামী মাসে সে দেশের সংস্কার, ঋণভার ইত্যাদি বিষয়ে অগ্রগতি নতুন করে মূল্যায়ন করা হবে। যে মাসত্রিষ্ট চুক্তির মাধ্যমে অভিন্ন মুদ্রা ইউরো চালু হয়েছিল, আগামীকাল ১ নভেম্বর তার দু’দশক পূর্ণ হচ্ছে। ফলে এই সময়কালের সাফল্য ও ব্যর্থতার মূল্যায়নও শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং ইউনিয়ন ছাড়াই শুধু অভিন্ন মুদ্রা যে গোটা ব্যবস্থাটিকে অসম্পূর্ণ রেখেছে, সে বিষয়ে তেমন সন্দেহ নেই। সদস্য দেশগুলো তাদের সার্বভৌমত্ব আরও কমিয়ে এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। কিন্তু অন্যদিকে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কটের চাপে বাধ্য হয়ে এই দিশায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে, যদিও সেই সংস্কারের গতি খুবই ধীর। জার্মানিতে নতুন সরকার গঠন হওয়ার পর নতুন বছরে ইউরোপীয় স্তরে বকেয়া সিদ্ধান্তগুলো ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ব্যাংকিং ইউনিয়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতির সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু ইউরোপের ভেতরের ঘটনা বা প্রবণতা নয়, বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের ঘটনাপ্রবাহও ইউরোপের উপর প্রভাব ফেলছে। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ফেড’ দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এতদিন যে স্টিমুলাস চালিয়ে যাচ্ছিল, তার মাত্রা কমে যেতে পারে এমন একটা আশঙ্কা কাজ করছে। ফলে সোমবার ইউরোপের পুঁজিবাজার কিছুটা স্তিমিত ছিল। চলতি সপ্তাহেই মার্কিন অর্থনীতি সম্পর্কে কিছু তথ্য-পরিসংখ্যান পাওয়ার পর বাজার আবার কিছুটা স্থিতিশীল হবে বলে মনে করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার অবশ্য বাজার আবার কিছুটা চাঙ্গা হয়ে ওঠে।