বাহরাইন কি আরেক ইরাক হতে চলেছে

Bahrainউপসাগরীয় দেশ বাহরাইনে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী থেকে দেখা যাচ্ছে যে, সেখানে একটি ‘গঠনমূলক থিয়োরি’ কাজ করছে। যে কোনো লোকই বুঝতে পারবেন যে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের আগে ঠিক একই রাজনৈতিক ধারণা ও কৌশল ব্যবহার করা হয়েছিল। পর্যবেক্ষকদের স্মরণ থাকতে পারে যে, সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতের জন্য ইরাকে হামলার আগে সাদ্দাম বিরোধী ইরাকি শিয়া ভিন্ন মতাবলম্বী গ্রুপগুলো হঠাৎ করেই গণতন্ত্রের প্রচারক হয়ে ওঠে। প্রবাসী ইরাকি শিয়া ভিন্ন মতাবলম্বীরা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পাশ্চাত্য শক্তিগুলোকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল যে ইরাকে শিয়ারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ইরাকে যদি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায়, যা নিশ্চিতভাবে তাদেরকে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে, তাহলে তা হবে ঐ অঞ্চলে গণতন্ত্রের মরূদ্যান। কুখ্যাত আহমদ চালাবি বুশ প্রশাসনকে এ কথা বিশ্বাস করতে প্রলুব্ধ করেছিল যে, হামলাকারী মার্কিন বাহিনীকে ইরাকি জনগণ সাদ্দাম হোসেনের স্বৈরশাসন থেকে তাদের মুক্তি প্রদান ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জানালা খুলে দেয়ার জন্য উষ্ণ অভিনন্দন জানাবে। বুশ প্রশাসন বিশেষ করে ইরাকে সেনাবাহিনী ভেঙে দিয়ে ও বিভিন্ন দফতর বিলোপ করে সাদ্দাম উত্তর সরকার গঠনে কৌশলগত কিছু ভুল করে। এখন সবাই বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। মার্কিন সার্বিক পরিকল্পনা ছিল ত্রুটিপূর্ণ এবং তাতে ইরাকি সমাজ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব ছিল। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যুক্তরাষ্ট্র দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষা করেছিল। এক. ইরাকের আসল ক্ষমতা ছিল সুন্নীদের হাতে। দুই. গণতন্ত্র যা গোটা মধ্যপ্রাচ্যেই প্রচলন ও চর্চার অপেক্ষায়। সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে ইরাকি ভিন্নমতাবলম্বীদের উপরই নির্ভর করেছিল। কারণ তারা সে কথাই বলেছিল যা ইরাকে হামলা বৈধ করতে যুক্তরাষ্ট্র শুনতে চাইছিল। যা হোক, ইরাকিরা উন্নত বিস্ফোরক সামগ্রী দিয়ে মার্কিন বাহিনীকে স্বাগত জানিয়েছিল যা হাজার হাজার মার্কিন সৈন্যকে হত্যা ও পঙ্গু করে, দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে লিপ্ত করে তাকে এবং গোটা ইরাককে পরিণত করে এক অগ্নিকুন্ডে। ইরাকে চলমান সহিংসতার অবসান ঘটার কোন সম্ভাবনা নেই আর নিশ্চিতভাবে দেশটি হতে চলেছে শিয়া-সুন্নী নির্বিশেষে লাখ লাখ ইরাকির গোরস্তান।
ইরাকের শিয়ারা যা করেছিল বাহরাইনের সরকার বিরোধী শিয়া গ্রুপগুলো ঠিক একই কাজ করছে। তারা মার্কিন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করছে এবং বাহরাইন সরকারের বিরুদ্ধে তাদের উপর দমন-বৈষম্যের অভিযোগ আনছে। তাদের দুর্দশার একমাত্র প্রতিকার সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। এ পন্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে এবং যেহেতু শিয়ারা সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ তাই তারা বিশ্বাস করে যে তারাই ক্ষমতায় আসবে। শেষ পর্যন্ত এ দ্বীপ রাষ্ট্রটি হয়ে উঠবে এ অঞ্চলে গণতন্ত্রের আরেকটি বাস্তব মরুদ্যান, যা তার জনগণকে গণতন্ত্রকে প্রসারিত করতে অব্যাহতভাবে অনুপ্রেরণা যোগাবে। সত্য কথা হলো, শিয়ারা ইরাকে সিদ্ধান্তমূলক সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। ইরাকি সমাজে অন্যান্য সুন্নী জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। কিন্তু সব সময়ই গুরুত্ব পেয়েছে সুন্নী আরবরা। তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। অন্যান্য শিয়া আরব গোত্র ও পরিবারগুলোর সাথে তারা পারিবারিক ও আন্তঃবিবাহ সম্পর্কে আবদ্ধ। ইরাকের চারপাশের দেশগুলোর উপজাতিগুলোর সাথে তাদের সম্পর্ক রয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button