সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পূণর্জন্ম হয়েছিল : লন্ডন সেমিনারে জেনারেল ইব্রাহীম
‘ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বরের তাৎপর্য : আধিপত্ববাদ প্রতিরোধে সিপাহী-জনতার বিপ্লব’ শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ন আলোচনা সভায় বাংলাদেশ থেকে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে ১৮ দলীয় ঐক্যজোটের শরীক এবং কল্যান পার্টির সভাপতি- মেজর জেনারেল সৈয়দ মো: ইব্রাহীম (অবঃ) বলেন, ৭ই নভেম্বরে সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পূণর্জন্ম হয়েছিল। তিনি বলেন যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জাসদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিকদের মধ্যে গোপন সৈনিক সংস্থা গঠন করে সেনাবাহিনীর মধ্যে রাজনীতি করা শুরু করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল- সেনাবাহিনীর অফিসারদেরকে হত্যা করা এবং ক্ষমতা দখল করা। এদিকে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ ৩রা নভেম্বর সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে বন্দী করে দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি তৈরী করতে চেয়েছিল যাতে ভারতীয় বাহিনীর হস্তক্ষেপ করার সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং বাংলাদেশে পূণরায় একদলীয় বাকশাল সরকার ক্ষমতাসীন হয়। কিন্তু, দেশপ্রেমীক সৈনিকরা ৭ই নভেম্বরে জিয়াকে মুক্ত করে আনে। এরপর ঢাকার রাজপথে সিপাহী-জনতার মিলিত মিছিল বাংলাদেশে এক এক নূতন ধারার রাজনীতির সূচনা করে এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র মুক্তি পায়। কিন্তু, আজ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসনের সুপারিশ করা হচ্ছে, ফলে জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র হুমকীর সম্মুক্ষীন। নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা সম্ভব নয়।
৬ই নভেম্বর পূর্ব-লন্ডনের মন্টিফিওরি সেন্টারে ‘বাংলাদেশ ডেমোক্রেসী ফোরাম- (বিডিএফ)’ এবং ‘দূ:শাসন ও আগ্রাসন বিরোধী আন্দোলন-বাংলাদেশ’ এর যৌথ উদ্দোগে আয়োজিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন- ডঃ কেএমএ মালিক, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিডিএফ-এর আহবায়ক মেজর (অবঃ) ফারুক এবং ব্যারিষ্টার নাজির আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন- দূঃশাসন ও আগ্রাসন বিরোধী আন্দোলনের সভাপতি এমএস আহমেদ আজাদ এবং সঞ্চালনা করেন ব্যারিষ্টার আলীমুল হক লিটন।
বিডিএফ এর প্রধান উপদেষ্টা ডঃ কেএমএ মালিক বলেন যে- ভারতের ‘র’ সিদ্ধান্ত দিচ্ছে এবং হাসিনা সরকার তা বাস্তবায়ন করছে। খালেদা জিয়া বাকশালের বিরোধীতা করে গনতন্ত্র ও দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে লড়ে যাচ্ছেন বিধায় তিনি বাকশালের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা।
মুফতি শাহ সদরুদ্দীন বলেন- এ সরকার বাংলাদেশকে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি বলে মনে করে এবং এ সংবিধান কোন রেফারেন্ডাম ছাড়াই পরিবর্তন করা হয়েছে বিধায় এটি অবৈধ।
ব্যারিষ্টার নাজির আহমেদ বলেন যে- ৭ই নভেম্বর জাতিকে চেতনা যোগায় এবং আমরা শংকিত হই যখন ভারতীয় লেখক সুবীর ভৌমিকরা ভারতকে বাংলাদেশে আওয়ামী সরকারকে টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে সামরিক হস্তক্ষেপ করার প্রস্তাব দেয়। তিনি বলেন- সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা ছাড়া এ সরকারের সাথে কোন আলোচনায় বসা বিরোধী দলের উচিত হবেনা; স্পীকার নির্বাচিত ব্যক্তি নন এবং এমনকি বর্তমান সংবিধান অনুযায়ীও সরকারের ৫ বছর মেয়াদ পূরতির তিন মাস আগেই ক্ষমতা ছাড়ার কথা থাকলেও সরকার সংবিধানকে অনুসরন করছে না।
কমিউনিটির বিশিষ্ট বক্তাগন বলেন যে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পরিচালিত আধিপত্যবাদ প্রতিরোধে ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বরে সংঘটিত সিপাহী-জনতার বিপ্লব যুগে যুগে বাংলাদেশী জাতিকে প্রেরণা যোগাবে।
সম্পাদক চৌধুরী মোঃ ফারুক বলেন যে- জিয়া জাতিকে সুযোগ্য নেতৃত্ব এবং দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন এবং জিয়া ছিলেন- একজন দেশপ্রেমীক, মুসলীম, রাষ্ট্র নায়ক, রাজনৈতিক নেতা এবং সত্যিকারের গণতন্ত্রী।
প্রফেসর মামনুর মোরশেদ বলেন, এ সরকার নিপীড়নের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
দূঃশাসন ও আগ্রাসন বিরোধী আন্দোলনের সভাপতি এমএস আহমেদ আজাদ বলেন- গত ৫ বছর শেখ হাসিনা ভারতের প্রেসক্রিপ্সন মোতাবেক দেশ চালিয়ে বিরোধী দলন, হত্যা-গুম, দূর্নীতি, গণহত্যা ইত্যাদি চালিয়েছে – তাতে এ সরকারের জনপ্রিয়তা এখন তলানীতে; তাই এককভাবে নির্বাচন করতে চায়। গণহত্যার জন্য এ সরকারকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখী করতে হবে।
মাওলানা শোয়েব আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ, ইসলাম, গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদকে রক্ষা করতে হলে আমাদেরকে আন্দোলন করতে হবে এবং নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।
ব্যারিষ্টার তমিছুদ্দীন বলেন, আওয়ামী সরকার যদি প্রহসনের নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করতে চায় তাহলে দেশের জনগন তা মেনে নেবে না।
ব্যারিষ্টার ইকবাল বলেন, সরকার একতরফা নির্বাচন করলে দেশে গণ-অভ্যুত্থান হবে।
ব্যারিষ্টার শাজাহান বলেন,- জিয়া জাতিকে আশার আলো দেখিয়েছেন। বেগম জিয়া প্রয়োজনে একাই আন্দোলন চালিয়ে যাবার কথা বলে যে সবলতার পরিচয় দিয়েছেন- তা জনগণের মনে শক্তি যোগাবে।
মিঃ রউফ বলেন, দেশে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব- এসব কিছুই নেই।
ব্যারিষ্টার মজিবুর রহমান বলেন- বর্তমান সংবিধান মোতাবেক শেখ হাসিনা এখন সাবেক প্রধান মন্ত্রী। বিরোধী দল যদি কোন আলোচনায় যায়- তাহলে সকল নেতা-কর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি এবং মাহমুদুর রহমানের মুক্তির শর্ত সরকার মেনে নিলেই কেবল আলোচনা হতে পারে।
বিডিএফ এর আহবায়ক মেজর (অবঃ) ফারুক বলেন, পিলখানায় ৫৮ জন দেশপ্রেমীক সেনা অফিসারকে রক্ষার্থে এ সরকার কোন কার্যকরী ভূমিকা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। বিচারের মাধ্যমে পেছনের পরিকল্পনাকারীদেরকে সনাক্ত করা হয়নি। সরকার এককভাবে নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করলেও তা বেশিদিন টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হবেনা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আজ প্রতিবেশী দেশের সামরিক আগ্রাসনের আহবান- এদেশের বীর-জনতা ৭ই নভেম্বরের চেতনা দিয়ে প্রতিহত করবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন- প্রফেসর মামনুন মোরশেদ, টাওয়ার হ্যামলেটের সাবেক মেয়র আব্দুল আজিজ সরদার, সম্পাদক চৌধুরী মোহাম্মদ ফারুক, মাওলানা শোয়েব আহমেদ, হেফাজতে ইসলামের ইউরোপীয় সভাপতি মুফতি শাহ সদরুদ্দীন, যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারন সম্পাদক ব্যারিষ্টার তমিছ উদ্দীন; ব্যারিষ্টার আবুল মনসুর শাজাহান, ব্যারিষ্টার মোঃ ইকবাল, ব্যারিষ্টার মুজিবুর রহমান, রোকনুজ্জামান, এডভোকেট শাহীন, সাংবাদিক আবু সুফিয়ান, আমীনুর রশিদ, খালেদ আহমেদ ও অন্যান্যরা।