হিজাবেই রক্ষা
সূর্যের আলোয় অ্যালার্জির কারণে আপাদমস্তক হিজাব পরা ছাড়া গত্যন্তর নেই ডেনিস কুইনের। পলিমরফিক লাইট ইরাপশন (পিএমএলই) নামক এ এলার্জির কারণে প্রতিবার বাসার বাইরে যেতে হলে হিজাব পরেই যেতে হয় তাকে। ম্যানচেস্টার নিবাসী ৪০ বছর বয়সী ডেনিস কুইনের অ্যাল্যার্জির মাত্রা এতই বেশি যে সূর্যের আলোয় কয়েক মিনিট অবস্থান করলেই লাল গোটা উঠতে শুরু করে ত্বকে। গোটাগুলো প্রচুর চুলকানি হয়। চুলকালে প্রচন্ড ব্যথা হয়। মৌমাছির হুল ফোটানোর মতো ব্যথা হয়। অনেক কিছু চেষ্টা করার পর কোনও সুফল না পাওয়ায় ডেনিস আবিস্কার করেছেন শুধুমাত্র আপাদমস্তক হিজাব পরিধান করলেই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
প্রথম যখন পিএমএলই তে আক্রান্ত হন, সান ক্রিম, সান হ্যাট কোন কিছুই ব্যবহার করতে বাদ রাখেননি। শরীরের গোটাগুলো এতটা যন্ত্রনাদায়ক হয়ে উঠতে শুরু করেছিল যে, বাসার বাইরে বের হওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিলেন ডেনিস। অবশেষে সমস্যার সমাধান পেয়েছেন আপাদমস্তক হিজাবে। ডেনিস বললেন, সূর্যের আলো থেকে সত্যিকারঅর্থে রক্ষা করতে পারে এমন একটিমাত্র জিনিসই আছে সেটা হলো আপাদমস্তক হিজাব। এখন হিজাব পরতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এবং ভালো লাগে বলে জানালেন তিনি। হিজাব পরার কারনে বিভিন্ন রকম বৈষম্যমূলক মন্তব্যের শিকার হয়েছেন। এ ব্যপারে তার অবস্থান বেশ দৃঢ়।
ডেনিস জানালেন, জাতিবিদ্বেষীদের মন্তব্যে কোন কিছু যায় আসে না। সূর্যের আলোয় অ্যালার্জি আছে বুঝতে পারার উপর তিনি নিজেই এর উপর তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করেন। পিএমএলই সাধারণত ২০ থেকে ৪০ বছরের বয়সীদের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সাদা চামড়া এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা বেশি হয়। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি এবং দৃশ্যমান আলোর সংস্পর্শে আসলেই ত্বকে গোটা উঠতে শুরু করে। ঘরের মধ্যে থাকলেও জানালার ভেতর দিয়ে প্রবেশ করা সূর্যের আলোতেও ত্বকে অ্যালার্জি হতে পারে। পিএমএলই তে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা হলো সূর্যের আলো থেকে দূরে থাকা এবং ত্বক ঢেকে রাখা। লাইট থেরাপিতেও কিছুটা উপকার হয়ে থাকে। তবে ডেনিস কুইনের মতে আপাদমস্তক ঢেকে রাখাটাই তার জন্য একমাত্র উপায়। হিজাব সমাধান খুজে বের করার আগে পিএমএলই অ্যালার্জি মোকাবেলা করতে বেশ কষ্ট হয়েছে ডেনিসের। সবসময় সঠিক পোশাক খুজে বের করাটা কঠিন হয়ে পড়তো।
কখনও পোশাকগুলো হয়ে যেত অনেক দামী কখনওবা ত্বকের অনেকখানি বাইরে অনাবৃত থেকে যায়। শেষ পর্যন্ত অ্যালার্জির জন্য পোশাক খুজতে থাকেন অনলাইনে। তিনি লক্ষ্য করলেন অধিকাংশ পোশাকই মুসলিম হিজাবের মতো দেখতে। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন ডেনিস। চ্যারিটি শপে যেয়ে বেশ কিছু সেকেন্ড হ্যান্ড হিজাব আর স্কার্ফ কিনে নিয়ে আসেন। এখন আর দামী দামী পোশাক কিনতে হয় না বলে জানালেন ডেনিস। নিজের পছন্দমতো পোশাক পরেন আর উপরে বোরকা ও স্কার্ফসহ আপাদমস্তক হিজাব করেন। ওভারকোট পরার মতো অনুভূতি হয় বলে জানালেন তিনি। মানুষজন তাকে দেখেই মুসলিম বলে মনে করে। তাতে করে ডেনিস কোন কিছু মনে করেন না শুধু মানুষের নিচু মানসিকতায় বিরক্ত অনুভব করেন। তাকে অনেকে নিজ ধর্মের প্রতি প্রতারক বলেও মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, এখন আমি বুঝতে পারি একজন মুসলিমকে প্রতিদিন কিধরনের বৈষম্যমূলক আচরনের সম্মুখীন হতে হয়। পক্ষান্তরে আমার মুসলিম বন্ধুরা আমাকে বরাবরই উৎসাহিত করেছে। ডেনিস আরও বলেন, আমি রীতিমতো মর্মাহত হয়েছি মানুষের মধ্যে কি পরিমাণ ঘৃণা থাকতে পারে।
ডেনিস কুইন তার নিজ সিদ্ধান্তে খুশি। হিজাব পরার কারণে আরামসে সাধারণ জীবন যাপন করতে পারছেন। যখন প্রয়োজন বাইরে যেতে পারছেন। সেটা চাদের আলোতে হোক আর সূর্যের আলোতে।