একজন সাবিরুল : তরুণ উদ্যোক্তার অনুপ্রেরণা
শাহরিয়ার শরীফ: বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ২৩-বছর-বয়সী এক ব্রিটিশ তার ‘এক মিলিয়ন মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণ’ কর্মসূচির মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উদ্যোক্তা তৈরির প্রচেষ্টা দ্বারা বিশ্বজুড়ে এক অনন্যসাধারণ ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন।
সাবিরুল ইসলাম মাত্র ৩ বছর বয়সে সিলেটে তার পূর্বপুরুষদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন৷ পরবর্তী ২০ বছরে তিনি বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
২০১০ সালে, একটি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় তিনি শীর্ষ ২৫ জন তরুণ উদ্যোক্তার অন্যতম হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই বছর, সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ জন ব্রিটিশ বাংলাদেশির মধ্যে একজন হিসেবে তিনি তালিকাভুক্ত হয়েছেন এবং তার প্রথম বই, ‘দি ওয়ার্ল্ড ইজ অ্যাট ইয়োর ফিট’ ইতিমধ্যেই ৬০,০০০ কপি বিক্রি হয়েছে।
সাবিরুল ২০১১ সালে তার অনন্য কর্মসূচি ‘এক মিলিয়ন মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণ’ শুরু করেছিলেন এবং তরুণদের মধ্যে আশা ও সাফল্যের বীজ বপন করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিলেন৷ তিনি ইতিমধ্যেই ২৫টি দেশ সফর করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ভারত, শ্রীলংকা, বতসোয়ানা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়া, এবং ৮২৫,০০০ সম্ভাব্য ভবিষ্যত উদ্যোক্তার সাথে কথা বলেছেন৷
সেপ্টেম্বরের ২৩ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশে তার সফর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে, এবং কেন তরুণ প্রজন্মকে গতানুগতিক চাকরির পথ ত্যাগ করে উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হওয়ার জন্য চেষ্টা করা উচিত সে বিষয়ে তার বক্তৃতাগুলো হাজার হাজার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে৷
‘আমাদের বাবা-মায়েরা (কেবল) চান আমরা যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ডিগ্রি অর্জন করি এবং ভালো একটা চাকরি পাই। তাদের কাছে, এটাই সাফল্যের চাবিকাঠি৷ তারা এমনকি চিন্তাও করতে পারেন না যে তাদের ছেলেমেয়েদের নিজেদেরই কিছু একটা করা উচিত,’ কয়েকটি বক্তৃতায় বলেছেন সাবিরুল।
তিনি বলেন, প্রত্যেক ব্যক্তিই প্রচন্ড সম্ভাবনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, সেইসাথে আরো বলেন যে প্রত্যেক ব্যক্তিরই তার নিজের শক্তিগুলোকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করা উচিত এবং সাফল্য অর্জনের জন্য সেগুলো ব্যবহার করা উচিত।
তার আশা ও সাফল্যের মূল বাণী দ্বারা সেই সব দেশের সব জায়গার দর্শক-শ্রোতারাই সম্মোহিত হয়েছেন যেখানে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নৈরাশ্য ও হতাশা ব্যাপকভাবে বিরাজমান।
‘আমাদের মধ্যে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আমরা সব সময়ই ভালো একটা চাকরি পাওয়ার বিষয়ে চিন্তা করি৷ কিন্তু আমি সাবিরুলের সাথে সম্পূর্ণভাবে একমত যে, যদি আমরা নিজেরাই কিছু একটা করার দিকে মনোযোগ দিতে পারি তাহলে আমরা আমাদের দেশকে বদলে দিতে পারবো,’ খবর দক্ষিণ এশিয়াকে বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিদ্যার চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী নাফিসা আক্তার। ‘তার বক্তৃতা শুনে আমি অত্যন্ত অনুপ্রাণিত হয়েছি’।
অনুপ্রেরণার গল্প
১৩ বছর বয়সে সাবিরুল যুক্তরাজ্যে তার চাচাত ভাইয়ের ব্যবসায়ের কাজ করতে শুরু করেছিলেন, কিন্তু মাত্র দুই সপ্তাহ পরেই তাকে আরেকটি কাজ খুঁজতে বলা হয়েছিল। এই বিপত্তি থেকে নাড়া খেয়ে, তিনি নিজেকে আত্মনির্ভরশীল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ এক বছর পরে, তিনি ওয়েব ডিজাইন করতে শুরু করেছিলেন এবং প্রথম সপ্তাহে ১,০০০ ডলার আয় করেছিলেন।
১৭ বছর বয়সে তিনি ‘দি ওয়ার্ল্ড ইজ অ্যাট ইয়োর ফিট’ লিখেছিলেন এবং পরবর্তী নয় মাসে প্রায় ৩৮০টি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল৷ তার “টিন-ট্রেপ্রেনার” গেমটি এখন ৬৫০টি ব্রিটিশ স্কুলের পাঠক্রমের অংশ, যার মাধ্যমে বাচ্চারা ব্যবসা করতে শেখে।
‘নিশ্চিতভাবেই এটা আমাদের সবার জন্য বিরাট গর্বের বিষয় যে একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণ বিশ্বের এরকম একজন অনন্য ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন,’ খবরকে বলেছেন যুবকদের জন্য সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন আনন্দ আলোর সম্পাদক রেজানুর রহমান। ‘আমাদের জনসংখ্যার ৬০% হলো যুব সম্প্রদায় এবং আমি জোরালোভাবে বিশ্বাস করি যদি তারা তাদের নিজেদের সম্ভাবনাকে ব্যবহার করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশকে বদলে দেয়া সম্ভব’।
‘আমি মনে করি সাবিরুল তার অনেক দর্শকের সুপ্ত সৃজনশীলতাকে জাগিয়ে তুলেছেন’।
তার সফরগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করেছে জুনিয়র চেম্বার অব কমার্স, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরেমশন সার্ভিসেস ও প্রথম আলো।
‘আমরা ভেবেছিলাম সাবিরুলের সফরকে পৃষ্ঠপোষকতা দিলে তা দেশের অগণিত তরুণ-তরুণীর জন্য চমৎকার সুফল বয়ে আনবে যারা গতানুগতিক পথের বাইরে চিন্তা-ভাবনা করতে পারবে এবং সফল হতে পারবে,’ খবরকে বলেছেন ডিসিসিআই সভাপতি সবুর খান।
বাংলাদেশ সফরের শেষ পর্যায়ে বিদায়ী ভাষণে সাবিরুল বলেন: ‘আমি আপনাদেরকে অনুরোধ করছি সরকার বা রাষ্ট্র আপনাদেরকে কিছু দিব এই আশায় অপেক্ষা করে থাকবেন না৷ সাহস ও সংকল্প নিয়ে আপনার নিজের মত করে শুরু করুন; সাফল্য এসে ধরা দেবে৷ এমনকি যদি আপনি ব্যর্থ হন, সেটাও হবে একটা শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি আপনার পরবর্তী উদ্যোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবেন৷ এগিয়ে যান’।