বাংলাদেশ বিমানের অনুষ্ঠানে অশ্লীলতা !

অশ্লীলতায় ভরা একটি অনুষ্ঠান দর্শকদের উপহার দিয়ে সমালোচিত হলো জাতীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। র‌্যাম্প মডেলদের অর্ধনগ্ন উপস্থিতি, ক্যাটওয়াক, যৌনতামাখা অঙ্গভঙ্গি আর আইলাভ ইউ সেক্সি গানে উদ্বোধন হলো বিমান লয়্যালটি কার্ড।
কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হলেও পরে তাতে এমন অশ্লীলতা ছড়ানো হয়েছে যে অনুষ্ঠানের মধ্য থেকেই কথা ওঠে, এমন একটি অনুষ্ঠান কোনোভাবেই বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বাংলাদেশের জনগণের অর্থে পরিচালিত জাতীয় পতাকাবাহী বিমানের অনুষ্ঠানে অবজ্ঞা করা হলো বাংলার সংস্কৃতিকে।
উড়ুকে অশ্লীলতার পর্যায় পর্যন্ত খোলা রেখে খোলামেলা পোশাকের প্রদর্শন মেনে নিতে পারছিলেন না দর্শকদের অনেকেই।
শনিবার রাতে রাজধানীর র‌্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলের উৎসব হলে বিমানের ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লায়ার কর্মসূচির আওতায় লয়্যাল ট্রাভেলার গ্রিন, সিলভার ও গোল্ড কার্ডের উদ্বোধনীতে এমন সব অশ্লীলতা হলো খোদ বিমানমন্ত্রী ফারুক খানের সামনে।
প্রতিবাদস্বরূপ অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে দেখা যায় কয়েকজন কর্মকর্তাকে। এদেরই কয়েকজন ক্ষোভ ঝাড়েন বিমানের এমডি ও সিইও ব্রিটিশ নাগরিক কেভিন স্টিলের ওপর। তাদের ভাষায়, কেভিনের মস্তিষ্কপ্রসূত এই অশালীন অনুষ্ঠান।
তাদের ক্ষোভ, জনগণের টাকায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের এমন একটি অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হলো না বাংলাদেশকে। দেশি-বিদেশি অতিথিরা জমকালো অনুষ্ঠানে দেখলো কেবলই অশ্লীলতা।
বিমানের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কেভিন সাহেবদের মতো উড়ে এসে জুড়ে বসাদের মনে রাখা উচিত এটা বাংলাদেশ। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে। ভাষার জন্য এই জাতি জীবন দিয়েছে। এটা ইংল্যান্ড নয় এটা বাংলাদেশ। এদেশে এমন অনুষ্ঠান অপসংস্কৃতি বলে গণ্য হয়।
একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেই জানান, এবারের অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছেন বিমানের চেয়ারম্যান ও এমডি কেভিন স্টিল নিজেই।
অনুষ্ঠানে ক্যাটওয়াকের মাধ্যমে মডেলরা কার্ড উপস্থাপন করেন। তিন ধরনের কার্ড উপস্থাপন করা হয়। তবে পণ্য উপস্থাপনার চেয়ে মডেলদের কড়া মেকাপ করা মুখ ও শরীর প্রদর্শনের প্রতি মনোযোগ ছিলো বেশি। নারীরা নিজেরাই হয়ে উঠেছিলেন পণ্য।
রাত ৭টায় অনুষ্ঠান শুরুর কথা থাকলেও শুরু হয় ৮টা ১৫ মিনিটে। অনেকে মন্তব্য করেন বিমানের ফ্লাইট ছাড়ে দেরিতে অতএব প্রোগ্রামও শুরু হবে দেরিতে।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ফারুক খান, চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ও কেভিন স্টিল বক্তব্য রাখেন।
মন্ত্রী বলেন, সরকার খুব দ্রুত আন্তর্জাতিক মানের একটি বিমান সার্ভিসের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে। নতুন বিমান বিমানের বহরে যুক্ত হবে। বিশ্বের সব মহাদেশে বিমানের সার্ভিস আমরা পৌঁছে দেবো। আমাদের সক্ষমতা আছে আমরা সেটা প্রমাণ করবো।
মন্ত্রী আরও বলেন, ইতোমধ্যে হজ্ব ফ্লাইটে বিমান সাফল্য দেখিয়েছে। আমরা জনগণের ও যাত্রীদের সেবা নিশ্চিত করেবো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্রিকেট দলের বিজয়ে যেমন ফোনকল করে শুভেচ্ছা জানান। তেমনি বিমানের সাফল্য অর্জিত হলে সেভাবে শুভেচ্ছা জানাবেন বলে আশা করি, বলেন মন্ত্রী।
দেশীয় সংস্কৃতির কথা বলে যারা ক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন তাদেরও মন রক্ষ‍া হয়েছে শেষ পর্যন্ত। তবে তা মডেলদের কাপড় পাল্টানোর ফাঁকে। এই সময়টুকুতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলী থেকে আবৃত্তি করা হয়। প্রথমে বাংলা পরে ইংরেজিতে ‘ভজন পুজন আরাধনা সমস্ত থাক পড়ে। অন্ধকারে লুকিয়ে আপন মনে কাহারে খুঁজিছিস সঙ্গোপনে।’
এরপর মিস্টার ও মিসেস উলফাত কবিরের ম্যাজিক প্রর্দশনী। ম্যাজিকে বাংলাদেশের পতাকা তৈরি করে দেখানো হয়। জাতীয় পতাকাবাহীর অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকার প্রদর্শন হলো একবার।
পরে রিজিয়া পারভিন গাইলেন একে একে আমায় যদি প্রশ্ন করে, আজ আবার সেই পথে দেখা হয়ে গেলো, মনেপড়ে রুবি রায়। সূত্র : বাংলানিউজ।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button