সিলেট চেম্বারের আলোচনা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত
সিলেট চেম্বারের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষে একই সাথে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সিলেটের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, বিগত দিনে অন্তঃকলহ, একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস, সমন্বয়হীনতার অভাব সহ নানা কারণে সিলেট চেম্বার তার অতীত গৌরব হারাতে বসেছে। এর ফলে সিলেটের ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি দেশের নিকট ঐতিহ্যবাহী এই চেম্বারেরও সুনাম হ্রাস পাচ্ছে। এজন্যে সিলেট চেম্বারের অতীতের সকল মামলা মোকদ্দমা, হানাহানি বাদ দিয়ে সিলেটের সকল ব্যবসায়ীদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চেম্বারের গৌরবান্বিত অতীত ফিরিয়ে আনতে হবে। ‘সিলেট চেম্বারের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। সম্মিলিত ব্যবসায়ীবৃন্দ সিলেট’র উদ্যোগে গতকাল শনিবার বিকেলে নগরীর নয়াসড়কস্থ একটি অভিজাত রেঁস্তোরায় এই আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সিলেটের প্রবীণ ব্যবসায়ী হাজী সাজ্জাদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবু বক্কর হিরনের পরিচালনায় এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, এফ.বি.সি.সি.আই এর পরিচালক সালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, সিলেটের প্রবীণ ব্যবসায়ী সৈয়দ মকবির আলী ও সেলিম আহমদ। সিলেট চেম্বারের সাবেক নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য দেন, সিলেট চেম্বারের সাবেক পরিচালক সিলেট কয়লা আমদানী গ্রুপের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক, সিলেট ভোগ্যপণ্য পরিবেশক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ আবু বকর হিরন, সিলেট চেম্বারের প্রাক্তন সিনিয়র সহ সভাপতি জিয়াউল হক, চেম্বারের প্রাক্তন সিনিয়র সহ সভাপতি, ভোগ্যপণ্য গ্রুপের সভাপতি নাসিম হোসাইন, সিলেট জেলা পেট্রোলিয়াম এসোসিয়েশনের সভাপতি মুজিবুর রহমান মানিক, সিলেট কয়লা আমদানী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক চন্দন সাহা, সিলেট চেম্বারের প্রাক্তন পরিচালক এ.টি.এম. সুয়েব, চেম্বারের প্রাক্তন সহ সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ, করিম উল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য মাওলানা আবদুল মালিক চৌধুরী। এছাড়াও মতবিনিময় সভায় আলোচনার প্রেক্ষিতে সার সংক্ষেপ উপস্থাপন করেন সিলেট চেম্বারের প্রাক্তন পরিচালক শফিক বক্ত। সভার শুরুতে সম্মিলিত ব্যবসায়ীবৃন্দের পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য দেন সিলেট চেম্বারের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি ও এফবিসিসিআই-এর সাবেক পরিচালক হিজকিল গুলজার। প্রস্তাবনা তুলে ধরেন রেইনবো গ্রুপের পরিচালক হাসান ইমাম চৌধুরী। সভার শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন সিলেট চেম্বারের অর্ডিনারী সদস্য ও করিমউল্লাহ মার্কেটের ব্যবসায়ী কাওসার আহমদ। সভায় বক্তারা বলেন, সিলেট চেম্বারের অতীত ঐতিহ্য সিলেটের ব্যবসায়ীদেরই ধরে রাখতে হবে। গত ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত চেম্বারে ৩ জন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। এটি সিলেটের ব্যবসায়ীদের জন্যে লজ্জাজনক। আবার কেউ কেউ মামলায় জড়িয়েছেন। নিজের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন। আগামী দিনে যাতে মামলা ও প্রশাসক জটিলতায় আমাদেরকে আর অহেতুক সময় পার করতে না হয় এ জন্যে সিলেট চেম্বারের ঐতিহ্য রক্ষায় ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ্য থাকলে চেম্বারের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। ভবিষ্যতে যাতে মামলা জটিলতা চেম্বারকে না পড়তে হয় সে ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। স্বাগত বক্তব্যে সভার উদ্যোক্তা হিজকিল গুলজার বলেন, দেশের চেম্বার সমূহের মধ্যে সিলেট চেম্বার বিশেষ স্থান দখল করেছিল। সিলেট চেম্বার অতীতে শিল্প-কৃষি মন্ত্রণালয়, রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো, বিসিক ও বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় বিভিন্ন বিষয়ের উপর সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষে প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিল। ২০০০ সাল থেকে জিডিএইচ, জেওবিএস ও জিটি.জেড’র সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে আসছিল। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সাথে মতবিনিময়, সভা-সেমিনার, বাণিজ্যমেলা, কেটালগ শো, সিলেট সপ্তাহ পালন করেছিল সিলেট চেম্বার। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সিলেট চেম্বারের উদ্যোগে উন্নয়ন সংক্রান্ত সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ-কর্মশালা, বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়নি। এর ফলে সিলেটের ব্যবসায়ীরা অনেক পিছিয়ে পড়েছেন। সিলেটের ব্যবসায়ীদেরকে এসব বিষয় ভেবে চিন্তে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে। সভাপতির বক্তব্যে সাজ্জাদুর রহমান বলেন, অতীতে সিলেট চেম্বারের নেতৃত্বে আমরাও ছিলাম। সে সময় চেম্বার কেন্দ্রীক রাজনীতি ছিল না। ছিল ব্যবসায়ীদের উন্নয়নে কাজ করার নিরন্তর প্রচেষ্টা। সিলেট চেম্বারের গৌরবময় অতীত ফিরিয়ে আনতে ব্যবসায়ীদেরকে নিঃস্বার্থ ভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সভার শেষে ব্যবসায়ী হাসাম ইমাম চৌধুরী প্রস্তাবনায় বলেন, সকল গ্রুপের সমন্বয়ে আগামী ২ টার্ম সমঝোতার ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য প্যানেল প্রদান। ইতোমধ্যে যারা ২ বার নির্বাচিত হয়েছেন তাদেরকে বাদ দিয়ে নতুনদের সমন্বয়ে একটি প্যানেল প্রদান। সভা শেষে নয়াসড়ক জামে মসজিদের ইমাম মোনাজাত পরিচালনা করেন।