সফল বাংলাদেশী তরুণ-তরুণীদের নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ব্রাইটেস্ট হান্ড্রেড
তাদের জন্ম এবং বড় হওয়া ব্রিটেনে। বহু জাতি-গোষ্ঠি, ধর্ম-বর্ণের নানা পরিচয়ের মিশ্রনে এখানকার আলো-বাতাসে বেড়ে উঠলেও তাদের পরিচয় বাংলাদেশী। জন্ম নিয়েই যারা ব্রিটিশ নাগরিক, তারা তবুও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে।
তারা বহুজাতিক কমিউনিটির ব্রিটেনে স্কুল-কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। শত কর্ম ব্যস্ততা, আগামীর সুন্দর জীবন গড়ার প্রত্যয়, তবুও তারা ভাবেন নিজ কমিউনিটির কথা। তাদের হৃদয়ে লোকায়িত আগামী দিনে ব্রিটেনে কেমন হবে বাংলাদেশী কমিউনিটি ? যাদের মেধা, মনন এবং চেতনায় থাকবে বাংলাদেশী কমিউনিটির সফলতার পথ খুঁজা।
স্বদেশের বর্ণিল ইতিহাস, ঐতিহ্যকে লালন করে নিজেদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট নিয়ে এগিয়ে চলা যায় কিভাবে সে চিন্তা কারা করবে ? হ্যাঁ চিন্তা করবে আমাদের সেই সব স্বপ্নচারী তরুণ-তরুণীরা। যারা প্রত্যয়ী, আলোকিত এবং বাবা মায়ের চাওয়া-পাওয়াকে পূর্ণতায় ভরে দিয়েছে।
এদের কেউ ‘জজ’ কেউবা ‘ব্যারিস্টার’, ‘ডাক্তার’, ‘সলিসিটার’, ‘ব্রিটিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা’, ‘সাংবাদিক’, ‘লেখক’, ‘বৈমানিক’, ‘ফুটবলার’, ‘বক্তা’, ‘সংগঠক’, ‘একাউন্টেন্ট,’ মিডিয়া পার্সোনাল থেকে শুরু করে নানা বৈচিত্র্যময় পেশায় এক একজন প্রতিষ্ঠিত মুখ। যারা বর্তমানকে পরিপূর্ণ করে সুন্দর আগামীর স্বপ্নে বিভোর।
৭ই নভেম্বর সোমবার বিশ্বের আধুনিক গণতন্ত্রের সুতিকাঘার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এর হাউজ অব কমেন্স-এ অনুষ্ঠিত হলো ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের আগামী দিনের স্বপ্ন কারিগর একঝাঁক তরুণ-তরুণীদের নিয়ে এক ব্যতিক্রমধর্মী ইভেন্ট ‘ব্রাইটেস্ট হান্ড্রেড’।
সমগ্র ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর-নগরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সফল তরুণ-তরুণীদের মধ্যে পেশাগত সংযোগ ঘটিয়ে নিজেদের মধ্যে আইডিয়া শেয়ার করার সুযোগ করে দেয়া এবং এর মাধ্যমে তরুণ-তরুণীদের দক্ষতা, মানোন্নয়ন, নিজেদের বহুজাতিক কমিউনিটির প্রতিনিধিত্ব করার মত যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুত করাই এর মূল লক্ষ্য।
‘পিআর আইডিয়া’র উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আয়োজনে হাউজ অব কমন্স এর জুবিলি হলে অনুষ্ঠিত ‘ব্রাইটেস্ট হান্ড্রেড’ অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের ‘অক্সফোর্ড’, ক্যামব্রিজ, ম্যানচেষ্টার, বার্মিংহাম, ব্রাডফোর্ড, লুটন, সোয়ানসি, লেস্টার, কেন্ট, নিউক্যাসল, ব্রিস্টল সহ বিভিন্ন সিটি থেকে অংশ নেন মেধাবী ব্রাইটেস্টরা।
ব্রাইটেস্ট হান্ড্রেড এর আয়োজক এবং পিআর আইডিয়ার চেয়ারম্যান তরুণ ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী ওয়াজিদ হাসান সেলিম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রথম বাংলাদেশী প্রতিনিধি রোশনারা আলী এমপি।
ব্যারিস্টার নাদিয়া আলীর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে আগত মেধাবী তরুণ-তরুণীরা খোলা মনে তাদের স্বপ্নের কথা জানায় উপস্থিতিদের সামনে। পেশাগত জীবনে তারা অনেক ব্যস্ত হলেও সাফল্যের অগ্রযাত্রায় আগামী দিনের বাংলাদেশী কমিউনিটি যেন নেতৃত্বে মূল সারিতে থাকে সেটাই বর্তমান নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা। তারা বলেন, আজ হাউজ অব কমন্সে পিআর আইডিয়ার আমন্ত্রনে একশত ‘ব্রাইটেস্ট’ একত্রিত হয়েছি। ব্রিটিশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা সফল এবং বাংলাদেশীদের জন্য এক একজন স্টার। এখন প্রয়োজন আরো বেশী পেশাদারীত্ব এবং পেশাগত দক্ষতাবৃদ্ধি। তারা পিআর আইডিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আগামী দিনে বাংলাদেশী কমিউনিটিকে আলোকিত স্বপ্নের পথ দেখাতে প্রয়োজন আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। একজন্য ইয়াং প্রফেশনালরা যদি নিজ নিজ আইডিয়াকে শেয়ার করে তবে নিঃসন্দেহে আমাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। সফল তরুণ-তরুণীদের অনেকেই তাদের সফলতার পেছনে বাবা-মা এবং পরিবারের স্বজনদের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা তাদের কাছ থেকে স্বপ্ন দেখা শিখে এখন সাফল্যের ধারাবাহিক পথে অগ্রসর হয়েছি। তারা আমাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে জীবন গড়ার পথে হাঁটতে শিখিয়ে দিয়েছেন। তাই আজ আমরা ব্রাইটেস্ট হান্ড্রেড এর মতো চমৎকার ইভেন্টে অংশ নিতে পেরেছি। আর এজন্য আমরা আয়োজকদের শুভেচ্ছা এবং কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি আমাদের বাবা মাকেও কৃতজ্ঞতা।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হাউজ অব লর্ডস এর সদস্য এবং ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির কনজারভেটিভ মুসলিম এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান লর্ড শেখ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এর প্রথম বাংলাদেশী প্রতিনিধি রোশনারা আলী এমপি বলেন, শিক্ষা, রাজনীতি, বিজ্ঞান, অর্থনীতিসহ সামগ্রীক ক্ষেত্রে ব্রিটিশ কমিউনিটিতে বাংলাদেশীরা এখন অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন আর পেছনে নই। আমরা অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছি। এখন আমাদের সামনে যাওয়ার সময়। পিআর আইডিয়ার আমন্ত্রণে যারা উপস্থিত হযেছেন তাদের সকলেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত এবং সফল। আর এই সফল তরুণ-তরুণীরাই পারবেন কমিউনিটির মুখ আলোকিত করতে।
রোশনারা আলী এমপি অভিভাবক এবং গুরুজনকে মূল্যায়ন করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমরা আজ যে অবস্থানে আছি সেটার জন্য আমাদের বাবা-মা সবচেয়ে বেশী সফলতার দাবীদার। তারাই আমাদের সুন্দর জীবন গড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাই জীবনে এগিয়ে যেতে হলে তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধ আরো বেশী থাকতে হবে। তিনি ব্রিটেনের মূল ধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশীদের আরো বেশী করে অংশ নেয়ার গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদের কমিউনিটির অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করা আমাদের দায়িত্ব। কে লেবার পার্টি কিংবা কে কনজারভেটিভ পছন্দ করেন সেটা বড় বিষয় নয়। রাজনীতিতে অংশ নিয়ে নিজেদের মেধাকে কাজ লাগানোর সুযোগ রয়েছে। তাই নিজের এ যোগ্যতাটুকু যথার্থ কাজে ব্যয় করা উচিত। তিনি ব্রাইটেস্ট হান্ড্রেড এর উদ্যোক্তাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এ সফল উদ্যোগ আমাদের কমিউনিটির জন্য একটি নতুন অর্জনের পথকে প্রশস্ত করে দিলো।
অতিথির বক্তব্যে হাউজ অব লর্ডস এর সদস্য এবং কনজারভেটিভ মুসলিম ফোরামের চেয়ারম্যান লর্ড শেখ ব্রাইটেস্ট হান্ড্রেড এর আয়োজনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশীরা ব্রিটেনে সফলতার দিক থেকে যে এতো এগিয়ে সেটা এখন অত্যন্ত পরিস্কার। এ দেশে বাংলাদেশীদের শেকড় অনেক গভীরে চলে গেছে। এতোদিন আমার ধারণা ছিলো বাংলাদেশীরা এদেশে শুধু ক্যাটারিং বিজনেস করে যাচ্ছেন এবং কারীশিল্পে অবদান রাখছেন। কিন্তু সে ধারণা আমার বলা যায় ভূল ছিলো। ব্রিটেনে বাংলাদেশী তরুণ-তরুণীরা শিক্ষাসহ সামগ্রীক ক্ষেত্রে এতো দূর এগিয়ে এসেছে সেটা ব্রাইটেস্ট হান্ড্রেড আয়োজনের কারনে জানা গেলো। তিনি তার নিজের সফলতার গল্প বলে উপস্থিত তরুণ-তরুণীদের উদ্দেশ্যে বলেন, জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করার কারনে আজ এতোদূর আসা সম্ভব হয়েছে। আপনাদের মনে রাখতে হবে সফল হতে হলে নিজেকে জানতে হবে। তিনি বলেন, যারা আজ এখানে উপস্থিত হয়েছেন, তারা নিজেদের মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আইডিয়া শেয়ার করুন। রাজনীতিতে শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশীরা, সফলতাই রোশনারার মত ইয়াং তরুণী ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এর সদস্য। আগামী দিনে ব্রাইটেস্ট হান্ড্রেড থেকে এরকম সফল রাজনীতিবীদ দেখতে চাই।
অনুষ্ঠানে সভাপতি ও পিআর আইডিয়ার চেয়ারম্যান ওয়াজিদ হাসান সেলিম বলেন, গত বছর ব্রাইটেস্ট ফিফটি করতে গিয়ে দেখা গেছে আমাদের কমিউনিটিতে শত শত তরুণ-তরুণী রয়েছে যারা জীবন চলার পথে সফল। যারা নিজেদের পরিচয় লালন করে ব্রিটিশ-বাংলাদেশী হিসেবে। তাই তাদের সফলতা ব্রিটেনে বাংলাদেশী কমিউনিটির সফলতা।
তিনি উপস্থিত ব্রাইটেস্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনারা শিক্ষা এবং প্রফেশনে সফল হয়েছেন, এখন আপনাদেরকেই ভাবতে হবে কিভাবে আমাদের কমিউনিটিকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া যায়। তিনি বলেন, আজ যারা এসেছেন, আপনাদের উপর দায়িত্ব অনেক। এখন আপনারা খুঁজে বের করবেন কমিউনিটিতে আপনাদের মতো সফলদের। সম্মিলিতভাবে যদি আমরা এগিয়ে যেতে পারি তবে আমরা এদেশে আরো অনেক কিছু করতে পারবো।
রোশনারা আলী এমপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, হাউজ অব কমন্সে এ অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য তার অবদান প্রমাণ করে তিনি দেশকে ভালবাসেন এবং ব্রিটেনে সত্যিকারের একজন বাংলাদেশীদের প্রতিনিধি।