আমাদের রাজাকার হওয়া কারো জন্য বিষ কারো আমিষ
এনাম চৌধুরী :
তিন দশকের কাছাকাছি বয়স হলেও এ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের কাছ কিংবা দূর থেকে সমর্থন করার সুযোগ আমার হয়নি। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে একটি জাতীয় দৈনিকের উপজেলা সংবাদদাতা হওয়ার সুবাধে তথা কথিত ছাত্র রাজনীতির লেঁজুড়ভিত্তি আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি। আর লেখাপড়া শেষ হওয়ার পর এখন সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে পেশা জীবনে জড়িয়ে নেয়ার কারনে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সুসম্পর্ক আমার কখনো হয়নি।
সাংবাদিক হিসেবে আত্মপ্রকাশের পূর্বে আমার উপজেলার যে সব সাংবাদিক বড় ভাইদের পেশাগত জীবনের কাজকর্ম দেখে তাদেরকে নিজের ‘আইডল’ ভাবতাম, একদিন আমি তাদেরকে ছাড়িয়ে স্থানীয় এবং জাতীয় দৈনিকের গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করার সৌভাগ্য অর্জন করি। সাংবাদিকতা পেশার বাইরে আমার জীবন চালানোর আর কোন পেশা নেই। ব্যবসা-বাণিজ্যের চলমান গতিপথে আমার কোন স্পর্শই নেই। এক কথায় আমি পুরোদস্তোর একজন পেশাজীবী সাংবাদিক। এত কথা বলার পেছনে একটা কারণ রয়েছে, আর সেটা হলো নিজের পেশাগত জীবনের সাথে ব্যক্তিগত অবস্থান জানান দেয়া।
২০০১ সালে যখন বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এলো তখন আমি সিলেটের স্থানীয় একটি দৈনিকের স্টাফ রিপোর্টার। হঠাৎ একদিন আমি আমার পত্রিকায় একটি রিপোর্ট করলাম, যা ছিলো তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর এবং সিলেট নগর উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান সিটি কাউন্সিলর আরিফুল হক চৌধুরীর বিররুদ্ধে। সিলেটে তখন ঐ বিএনপি নেতা এতোটাই শক্তিশালী ছিলেন যে, তিনি অর্থমন্ত্রীর মাধ্যমে সিলেটে উন্নয়নের নতুন মাত্রা সূচনা করছিলেন। আমি সেই আরিফের সহযোগীদের বিরুদ্ধে সিলেট আবহাওয়া অফিসের জায়গা দখলের অভিযোগ সংক্রান্ত নিউজ করায় রীতিমত ঝড় উঠে যায়। যে দিন নিউজটি প্রকাশ হয় ঐ দিন প্রশংসা, গালিগালাজ আর হুমকী-ধমকীর জ্বালায় শেষে মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দিতে হয়েছিলো।
বিকেল বেলা খবর পেলাম নগর উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান কাউন্সিলর আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশনের লোকজন আবহাওয়া অফিসে গিয়ে দখলকৃত স্থাপনাটি ভেঙ্গে ঐ জায়গা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে দিয়ে এসেছেন। এদিকে আমি যে পত্রিকায় রিপোর্টটি লিখেছিলাম সেটি ছিলো তৎকালীন সরকার সমর্থকদের মালিকানায়। অনেকেই আমাকে বললেন, আমি নাকি বিরোধীদলের (তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামীলীগের) স্বার্থে কাজ করছি। তবে আমার সম্পাদক সিলেট তথা দেশের অন্যতম খ্যাতিমান সাংবাদিক মুকতাবিস-উন-নূর ভাই বললেন, এনাম চৌধুরী তর উপর অর্পিত যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। সে কোন দলের পক্ষে কিংবা বিপক্ষে লিখেনি।
রিপোর্ট প্রকাশের ফলে স্থাপনা উচ্ছেদ করে রাতের বেলা আরিফুল হক চৌধুরী আমার অফিসে বেড়াতে এলেন। বার্তা কক্ষে প্রবেশ করে আমার সাথে হাত মিলিয়ে বললেন, ‘ভাই বিষয়টা সত্যিই আমার জানার মধ্যে ছিলো না, ওরা আমার দলের কর্মী ঠিক, কিন্তু এ কাজ যে তারা করেছে সেটা আমি মোটেই জানতাম না। খুব বড় একটা উপকার করলে আমার।’ এভাবে তৎকালীন সময়ে আমি অনেক বড় বড় অনিয়মের নিউজ লিখে চারদীয় জোটের অনেক নেতা-পাতিনেতার চক্ষুশোল হয়েছিলাম। অনেকেই বলতেন, আমি নাকি আওয়ামীলীগের হয়ে কাজ করি। কারণ পত্রিকায় লেখা আমার নিউজ ও কলাম গুলো ছিলো দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে এবং সরকারের সমালোচনায় ভরা।
লেখালেখি করি বিধায় নিয়মিত কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে যেতাম। একদিন সংসদের সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও কবি রাগিব হোসেন চৌধুরী বললেন, ‘এনাম আপনি যেভাবে লিখছেন সেটা অনেক ভালো এবং গঠনমূলক। কিন্তু এতে আপনার শত্র“ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আপনি লিখছেন, কলম আপনার মূল অস্ত্র। কিন্তু ওরা যাদের বিরুদ্ধে আপনার লেখা কলাম এবং নিউজগুলো যাচ্ছে, তারা কিন্তু অনেক বাজে। আপনাকে অনেক দূর যেতে হবে। তাই এখন আপনি লেখাগুলো অন্যভানে লিখেন।’ রাগিব ভাই অনেক বড় মাপের একজন মানুষ। আমি তাঁর সন্তানের বয়েসী ছিলাম। জীবনে এ পর্যন্ত আসার পেছনে রাগিব ভাইর অনুপ্রেরণা কখনো ভূলার নয়। রাগিব ভাইয়ের একটি বড় বৈশিষ্ট তিনি ছোট বড় সবাইকে আপনি বলে সম্ভোধন করতেন।
কথা এতো দূর বলার মূল কারণ, তৎকালীন সরকারের ভূলগুলো ধরিয়ে দিতে লেখার কারনে আমি ছিলাম অনেকের জন্য শত্রু। আবার পরোক্ষভাবে যারা লাভবান হয়েছেন, তারা ভেবেছেন আমি হয়তো তাদেরই লোক। তৎকালীন মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আ.ন.ম শফিকুল হক, তৎকালীন মহানগর আওয়ামীলীগ সেক্রেটারী এডভোকেট মিছবাহ উদ্দিন সিরাজ সহ অনেকেই আমার লেখাগুলো পড়ে মাঝে মাঝে উৎফুল্লচিত্তে ফোন করে ধন্যবাদ দিয়ে বলতেন, লেখা পড়েছি, খুব ভালো লাগলো। এভাবে একদিন একটি লেখার জন্য আ.ন.ম শফিক ভাই ফোন করে ধন্যবাদ দিচ্ছিলেন। তখন তাকে বলেছিলাম, শফিক ভাই আজ আপনারা বিরোধী দলে কেন জানেন ? ফেনীর জয়নাল হাজারী, নারায়নগঞ্জের শামীম ওসমান, গফুরগাঁওয়ের আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ, শেখ হেলাল, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, মোফাজ্জল হোসেন মায়া সহ অসংখ্য গডফাদারদের নারকীয় সন্ত্রাস !! আপনারা এখন খুশি হচ্ছেন, কিন্তু চার/পাঁচ বছর পর ঠিকই গালি দেবেন। যদি ক্ষমতায় আসেন তবে এ কলম সত্য কথা ঠিকই লিখবে।
এভাবে ক্ষমতার শেষ হলো চারদলীয় জোট সরকারের। সে সময়ও সন্ত্রাস যে কম হয়েছে সেটা বলার সুযোগ নেই। তবে চারদলীয় জোট সরকারের বলতে গেলে পুরো সময়টাই ধর্মীয় লেবাসে বাংলাদেশে কথিত ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে জঙ্গী সংগঠন ‘জামায়াতুল মুজাহিদীন (জেএমবি) এবং বাংলা ভাই নামের যে বর্বরতা চালিয়েছে সেটা সামাল দিতেই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। প্রথম দিকে জেএমবি নিয়ে সরকারের মধ্যে চরম অস্বস্তি থাকলেও শেষ দিকে সরকার দৃঢ়ভাবে এদের দমনে হাত দেয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে জেএমবির শীর্ষ নেতা সহ বড় বড় সন্ত্রাসীদের ধরে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফাঁসী রায় পর্যন্ত কার্যকর হয়।
জেএমবির প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান তৎকালীন যুবলীগ নেতা বর্তমান আওয়ামীলীগ দলীয় এমপি ও হুইপ মির্জা আজমের আপন বড় বোনের স্বামী হওয়ার কারনে সরকার দলের পক্ষ থেকে এর পেছনে আওয়ামীলীগের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। আর বিরোধী দল আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে বলা হয় চারদলীয় জোট সরকার দেশকে জঙ্গী রাষ্ট্র বানানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এরকম নানা বিতর্কের মধ্যে এলিট ফোর্সের হাতে সিলেট থেকে গ্রেফতার হয় জেএমবির প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান।
জঙ্গী শায়খ আব্দুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিন র্যাব এর তৎকালীন প্রধান গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিডিআর বিদ্রোহের শাহাদত বরণকারী কর্ণেল গোলজার উদ্দিনের সাথে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে আমার একান্তে দেখা ও কথা হয়। অত্যন্ত মেধাবী এবং দেশপ্রেমিক কর্ণেল গোলজার উদ্দিনের দৃষ্টিতে আমি সব সময় দেখেছি দেশ রক্ষার দৃপ্ত শপথ। একদিন হঠাৎ করে আমাকে ডাকলেন কর্ণেল গোলজার। সেদিন মোবাইলে কল দিয়ে বললেন, ‘সাংবাদিক কাউকে জানাবেন না।’ আমি কিছুটা অবাক হলাম। কারণ কর্ণেল গোলজার কখনো সরাসরি আমাকে ফোন দিয়ে ডাকেন নি। মূলত তাঁর সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো র্যাব-৯ (সিলেট অঞ্চল) এর গোয়েন্দা প্রধান ক্যাপ্টেন আল আমীন মজুমদার এর মাধ্যমে। আল আমিন ছিলেন আমার খুব একজন কাছের বন্ধুর মত। একদিন ক্যাপ্টেন আল আমীন আমাকে ফোন দিয়ে জানালো, ‘এনাম আমার এক বড় স্যার ঢাকা থেকে এসেছেন, স্যার তোমার সাথে এক জায়গায় বসবেন। আমি গাড়ী পাঠাচ্ছি, কাউকে কিছু না বলে চলে এসো। গাড়িটি ১৫ মিনিটের মধ্যে চলে এলো সিলেট নগরীর কুদরত উল্লাহ মার্কেটের গেটে। আমি গেটে গিয়ে চড়ে বসলাম গাড়ীতে। গাড়ীতে ছিল র্যাবের পোশাক পড়া একজন ড্রাইভার এবং অন্য একজন কনস্টেবল। শরীফ নামের ঐ কনস্টেবল ক্যাপ্টেন আল আমীনের বডিগার্ড। গাড়ীতে টুকটাক কথা হলো ওদের দুজনের সাথে। গাড়িটি টিলাগড় যাওয়ার পর শরীফ মোবাইল ফোনে জানালো ক্যাপ্টেন আল আমীনকে। আল আমীন শরীফকে নির্দেশ দিলো, গাড়ী র্যাব-৯ হেডকোয়ার্টার এর গেটে দাঁড়াতে। যথারীতি সেখান দাঁড়ানোর পাঁচ মিনিটের মধ্যে আল আমীন সিভিল পোশাকে অফিস থেকে বেরিয়ে এলো। আল আমিনের চেহারায় দেখলাম টানটান উত্তেজনা। গাড়ীর পাশে এসে আল আমিন ড্রাইভার এবং তার বডিগার্ড শরীফকে বললো-‘তোমরা নেমে যাও।’ আমি কিছুটা অবাক হলাম ! দেখলাম আল আমিন নিজে গাড়ীর ড্রাইভিং আসনে বসে গাড়ী স্ট্রাট দিয়ে আমাকে সামনে আসার জন্য বললো।
গাড়িটি ছুটলো জাফলং তামাবিল রোড দিয়ে। আল আমিন বললো- এনাম আজ এমন এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় হবে, যার সাথে বলতে গেলে কোন সাংবাদিক সাক্ষাৎ পায় না। তবে স্যার তোমাকে খুব পছন্দ করেছেন। আমি বললাম কিছুই বুঝতে পারছি না। সে বললো- বুঝবে ? ‘র্যাবের প্রধান গোয়েন্দা কর্মকর্তা কর্ণেল গোলজার স্যার নাজিম গড় রিসোর্টে তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন।’ স্যার খুব গোপনীয়তার সাথে সিলেট আসেন। কারন সামনে সিলেটে অনেক বড় একটা অপারেশন পরিচালনা-পরিকল্পনা স্যারের।
আমি ক্যাপ্টেন আল আমিনকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার স্যার এলেন গোপনীয়তা অবলম্বন করে। আর ডেকে নিচ্ছেন সাংবাদিককে। আমিতো মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। সে বললো- এ বিষয়ে কোন নিউজ হবে না। স্যার তোমার সাথে গল্প করবেন এবং তোমাকে ধন্যবাদ জানাবেন। জিজ্ঞাস করলাম কেন …. ?
আল আমিন বললো- র্যাব-৯ সিলেট অঞ্চলে যত বড় বড় অপারেশন পরিচালনা করে সফল হয়েছে এর পেছনে তুমি অনেক সহযোগিতা করেছো বলে মনে করেন স্যার ? জিজ্ঞাসা করলাম কিভাবে ? সে বললো তোমার অনুসন্ধানী প্রত্যেকটা রিপোর্টের কাটিং হেড কোয়ার্টারে যায়। স্যার এগুলোর সব পড়েন। আর সম্প্রতি সিলেট অঞ্চলের অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা নিয়ে তোমার রিপোর্ট প্রকাশের পর র্যাব-৯ ‘এম-৫৭’ সহ যে সন্ত্রাসীকে পাকড়াও করেছে সেটার জন্য স্যার খুব খুশী।
একটা কথা বলতে হয় এখানে ওয়ান ইলেভের সময় সিলেটের সীমান্ত দিয়ে প্রচুর অবৈধ অস্ত্রের বেচাকেনা শুরু হয়েছিলো। আর সেটি নিয়ন্ত্রন করছিলো সিলেটের আলোচিত এক কাউন্সিলর এবং এক ‘আদু ভাই’ ছাত্রলীগ নেতা। আর আমি অবৈধ অস্ত্রের বেচাকেনা নিয়ে একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট করেছিলাম। রিপোর্টের সাথে সাথে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নড়ে চড়ে বসে। শুরু হয় তাদের তৎপরতা। এক পর্যায়ে ক্রেতা সেজে ছাত্রলীগ নেতা বিধান কুমার সাহাকে র্যাব-৯ এর একটি চৌকস দল যুদ্ধে সৈনিকদের ব্যবহৃত ‘এম-৫৭’ অস্ত্রটি সহ হাতে নাতে গ্রেফতার করে। ঐ অস্ত্রটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অস্ত্রাগারে তখনো এসে মজুদ হয়নি। কারন সেনাবাহিনীর সৈনিকেরা মুলত ‘একে-৪৭’ এবং ‘এম-১৬’ গান ব্যবহার করতেন। সিলেট থেকে ‘এম-৫৭’ নামের অস্ত্রটি উদ্ধার ছিলো র্যাবের জন্য বিশাল এক সফলতা।
কথা বলতে বলতে আমাদের গাড়িটি ‘নাজিম গড় রিসোর্ট গিয়ে পৌঁছালো। সেখান যাওয়ার পর আমরা রিসোর্টের রেস্টুরেন্টের একটা টেবিলে বসার পর আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন এক ভদ্র লোক। তার চেহারা দেখেই বুঝলাম ইনিই কর্ণেল গোলজার।
আমি কিছুটা অবাক হলাম, কারন সেনা কর্মকর্তা কর্ণেল গোলজার উদ্দিনের মাথায় বিশাল লম্বা চুল ! দাঁড়ি কাটেননি। মায়াময় চোখের সুদর্শন অর্ধবয়েসী কর্ণেল গোলজারকে দেখতে ভালোর চেয়ে মন্দই বেশী লাগছিলো।
ক্যাপ্টেন আল আমিন তার বড় কর্তাকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর আমার বিষয়ে বলতে শুরু করলো এভাবে……… স্যার ও হচ্ছে একজন ‘ক্রাইম রিপোর্টার’ স্যার….. আমরা তার রিপোর্ট থেকে অনেক সহযোগিতা পাই…. !!
আল আমিনকে কথার মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে কর্ণেল গোলজার বললেন, ‘আল আমিন আমি ওর সব কিছু জানি। তার বাবা-মা, চাচা, কয়ভাই বোন সব কিছু জানি !! কর্ণেল গোলজার আমাকে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে প্রশ্ন করলেন, ‘আচ্ছা এনাম আপনার বাবা একজন আলেম ও হাফিজে কোরআন তাই না ? আমি বললাম জি ? নূরুল নামের আপনার ছোট ভাই মদন মোহন কলেজের পড়াশোনা করে তাই তো ? আমি বুঝলাম অনেক অনুসন্ধানী গোয়েন্দা কর্মকর্তা গোলজার।
রেস্টুরেন্টে বসে চা-নাস্তা পর্ব সারলাম কথা বলতে বলতে। এভাবে অনেক কিছুই জানতে চাইলেন কর্ণেল। প্রায় দেড় ঘন্টার আড্ডার পর আমাদের বিদায় জানালেন কর্ণেল গোলজার। এভাবে প্রায়ই সিলেটে আসলে কর্ণেল গোলজার আমার সাথে দেখা করার জন্য ডেকে নিতেন। এ সাক্ষাতের কয়েক মাস পর সিলেটের টিলাগড় এলাকার ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’ নামক একটি বাড়ী থেকে স্বপরিবারে আটক হয় বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম ঘৃণিত চরিত্র জেএমবির প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান এবং এর এক সপ্তাহ পর ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে তার সহযোগী সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই।
এ স্মৃতিগুলো এখন চোখের সামনে ভাসে। সর্বশেষ বর্তমান আওমীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কর্ণেল গোলজার বিডিআর সিলেটের বর্তমান (বিজিবি) সেক্টর কমান্ডার হিসেবে যোগদানের তিন দিনের মাথায় ঢাকায় গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দরবার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। কিন্তু সাহসী এ মানুষটি আর সিলেটে ফিরে আসেন নি। বিদ্রোহের নামে ঘটে যাওয়া নারকীয় তান্ডবে পিলখানায় চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছেন কর্ণেল গোলজার। তার লাশটিও বুঝে পায়নি পরিবার !!!
লিখতে গিয়ে অনেক কথাই লিখে ফেললাম, যেমন কান টানলে মাথা আসার মত। লেখাটা শুরু করেছিলাম রাজনৈতিক দলের সমর্থন এবং চলমান অবস্থা নিয়ে। ইদানিং যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোগুলোতে অংশ নেয়ার কারনে রীতিমত তোপ ও চাপের মধ্যে পড়েছি। এর মূল কারণ সরকারের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা। আমার এক আত্মীয় সম্পর্কে বড় বোন, তিনি বর্তমান সরকারের সরাসরি সমর্থক নন যদিও, তবে সরকারের বিভিন্ন কাজকে মণপ্রাণ দিয়ে সমর্থন করেন। ব্রিটেনে জন্ম উচ্চ শিক্ষিত ঐ বড় বোনের চাচা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সাবেক সংসদ সদস্য। প্রগতিশীল রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দৃঢ় বিশ্বাসী বড়বোন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে শুধু সমর্থনই করেন না, তিনি কঠিন শাস্তি দাবী করেন অপরাধীদের। ব্রিটেনের সমাজ, রাজনীতি ও আবহাওয়ায় বড় হওয়া এ বোনের বাংলাদেশ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করে। মজা করতে গিয়ে আমার ঐ আত্মীয় বড় বোন মাঝে মাঝে আমাকে ‘নাতী’ সম্ভোধন করে বলেন, ‘তোমার কথাবার্তা, লেখালেখি সুবিধার মনে হচ্ছে না, তুমিতো মনে হয় রাজাকারদের সমর্থক !!’
তখন তাকে বলেছিলাম, আমি এই প্রজন্মের ছেলে। অবশ্যই যুদ্ধাপরাধের বিচার চাই আর সেটা যেন পরবর্তীতে কোন প্রশ্নের সৃষ্টি না করে এবং বিচার করতে গিয়ে এমন কোন ক্ষতের যেন সৃষ্টি না হয়, যেটি দেশ-জাতির জন্য অমঙ্গলকর হয়ে দাঁড়ায়। আমি যতই বলি আমি সত্য বলতে গিয়ে যদি কারো বিরুদ্ধেও চলে যায় তবে সেটা আমি বলা বন্ধ করবো না। কারন চারদলীয় জোট সরকারের ক্ষমতায় থাকতে ঐ সত্য এবং অনুসন্ধানী রিপোর্টের কারনে আমি দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছি। আর তখন আমার রিপোর্ট ছিলো ছাত্রদলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। এমসি কলেজের ছাত্র ছিলাম যখন, তখন কলেজ ছাত্রদলের সেক্রেটারী ও তার সহযোগীদের ছাত্রী নির্যাতন নিয়ে রিপোর্ট করার অপরাধে কলেজে ক্লাস করতে বাঁধার সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু তারপরও সত্য বলা এবং লেখা বন্ধ করিনি। আমার ঐ বড় বোন হয়তো খুব ভালো ভাবে জানেন, স্বাধীনতার পর একাধিকবার আওয়ামীলীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে। তারা জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন করেছে। জামায়াত নেতা অধ্যাপক গোলাম আজমের বড় মগবাজারের বাসায় বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ছুটে গেছেন ? আজ যে কাদের মোল্লার ফাঁসীর জন্য শেষ প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে সেই কাদের মোল্লা কিন্তু সেই সব দিনগুলোতে ছিলেন শেখ হাসিনার অনেক বড় বড় ইস্যু নিয়ে আলোচনার সমন্বয়কারী ! শুধু কি তাই ? ফাঁসীর রশি পড়ার অপেক্ষায় থাকা কাদের মোল্লা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন সংগ্রামের প্রতীক যে হলকে বলা যায় সেই বিখ্যাত শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইতিহাসের সর্বোচ্চ মার্কস পেয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন ! এখানে প্রশ্ন হুলো মীরপুরের কসাই কাদের খ্যাত ঐ জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা কিভাবে স্বাধীনতার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থেকে পড়াশোনা করলেন, এরপর উদয়ন স্কুল, রাইফেলস পাবলিক স্কুলের গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরী করেন ?
আর আমিই এখন লেখালেখি কিংবা টিভি টকশোতে এ বিষয় গুলো নিয়ে স্পষ্ট প্রশ্ন তোলার শুধু বিরাগ ভাজনই নই, রীতিমত রাজাকার !!
রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ক্লাসে একবার গল্প করতে গিয়ে আমার প্রিয় মানুষদের একজন প্রফেসর আতাউর রহমান স্যার বলেছিলেন, ‘তোমরা যারা আজ আমার ডিপার্টমেন্টে পড়াশোনা করছো, হয়তো একদিন দেশের জাতীয় রাজনীতিতে তোমাদের অবদান থাকবে ? তবে মনে রেখো, রাজনীতি করতে গিয়ে কখনো সত্যের পথ থেকে, দেশপ্রেমের চেতনা থেকে এবং সততার পথ থেকে বিচ্যুত হয়ো না।’ স্যার একদিন বাংলার সিংহ পুরুষ শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বললেন, রাজনীতিতে সততা এবং দেশপ্রেম না থাকলে মানুষের হৃদয় জয় করা যায় না। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক মানুষের হৃদয় জয় করে ‘বাংলার বাঘ’ খ্যাতি পেয়েছিলেন। তিনি যখন সারাদিনের কর্মক্লান্ত, হয়তো কোর্ট থেকে বাড়ী ফিরবেন। এমন সময় কোন গরীব-অসহায় লোক, কিংবা ছাত্র যদি তাকে বলতো স্যার টাকার অভাবে স্কুল বা কলেজের ফি দিতে পারছি না, অথবা ঘরে খাবার নেই। তখন শেরে বাংলা ফজলুল হক দিনের সমস্ত উপার্জন পকেট থেকে বের করে ঐ গরীব ছাত্র কিংবা অসহায় মানুষটির হাতে তুলে দিয়ে সত্য পথে চলার নির্দেশনা দিতেন।
আর আমাদের আজকের রাজনীতিবীদরা রাজনীতিকে টাকা কামানোর পেশায় পরিণত করেছেন। তারা এমপি, মন্ত্রী হওয়ার পাশাপাশি ঠিকাদারী এবং টেন্ডারের কমিশনের ধান্ধায় এক একজন সরকারী পোষা দুর্নীতিবাজে পরিণত হয়। তাদের কথাবার্তা, আচার-আচরণ হয়ে পড়ে চরম অনৈতিক এবং কু-চিন্তা নির্ভর। অপর রাজনীতিবীদ সম্পর্কে তাদের ধারণা হয়ে পড়ে নষ্ট মন মানষিকতার নিয়ামক ??
বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী-মহাজোট সরকার দুর্নীতি আর লুটপাটের যে উৎসব করলো সেটাতো রীতিমত রূপকথার গল্প গয়ে যাবে একদিন। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লুট হয়ে যায় অথচ দেশের অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পাঁচ হাজার কোটি টাকা বড় কোন বিষয় নয় !!!
পদ্মা সেতু নির্মাণের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্ব ব্যাংক যখন সরকারের ‘স্মাইলি’ মন্ত্রী আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুললো এবং প্রকল্পে কোন অর্থ ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দিলো তখন লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী সেই আবুল হোসেনকে ‘সততার প্রতীক’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্বব্যাংককে বুড়ো আঙ্গুর দেখালেন। গোটা জাতির কাঙ্খিত পদ্মা সেতুটি একজন আবুল হোসেনের কারনে শেষ পর্যন্ত আর হলো না। কাহিনীর শেষ এখানেই নয়, হলমার্ক, ডেসটিনি, শেয়ারবাজার লুটপাট, রেলওয়ে দুর্নীতি, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, সরকারী ব্যাংক গুলোতে জালিয়াতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা লুট, প্রশাসনের প্রতিটা পরতে বিশৃঙ্খলা সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে সরকার সমর্থক ছাত্রলীগের নজিরবিহীন সন্ত্রাস জাতিকে বিশ্মিত করেছে।
সবচেয়ে অবাক করা আরো একটি বিষয় হলো প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারী খাত বিষয়ক উপদেষ্ঠা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারীর অভিযোগ উঠলো। সরকার দলীয় একজন তরুণ সংসদ সদস্য গোলাম মাওলানা রনি সংসদের ভেতরে, বাইরে, লেখনিতে টেলিভিশন টকশোতে প্রতিবাদে সোচ্ছার হলেন। পরিণতিতে এমপি রনিকে কায়দা করে চৌদ্দ শিকলের ভাত খাইয়ে চাড়লেন ‘দরবেশ বাবা’ খ্যাত সেই শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারীর নায়ক।
‘টোটালি রাবিশ’ শব্দের যত্রতত্র ব্যবহারকারী খ্যাত অর্থমন্ত্রী লক্ষ লক্ষ শেয়ার ব্যবসায়ীদের ‘ফটকাবাজ’ আখ্যায়িত করে বললেন কোন দুর্নীতি হয়নি। পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে সর্বস্ব হারানো ব্যবসায়ীদের নাকানী-চুবানী খাইয়ে ছাড়লেন। মনে পড়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন এভাবে শেয়ার বাজারে বড় মাপের লুটপাটের ঘটনা ঘটে। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শাহ এস এম কিবরিয়া আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘শেয়ার ব্যাপারটা বুঝি না।’
দেশে একদিকে গণতান্ত্রিক শাসনের কথা বলা হচ্ছে। আর অপর দিকে সমালোচনা করাকে ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীদের জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার সরকার আইনের শাসনের কথা বলছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতার শ্লোগান দিচ্ছে, কিন্তু ইলিয়াস আলীর মত রাজনীতিবীদ প্রকাশ্য গুম হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে সরকার বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে কোন পাত্তাই দিচ্ছে না ঘটনাকে।
প্রায় দু বছর হয়ে যাচ্ছে ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, (ঢাকা সিটির কাউন্সিলর) সহ শত শত নেতা, ছাত্র, নারী-শিশুর কোন খুঁজই নেই। এই যদি হয় রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা, তবে যদি ক্ষমতার পালাবদল হয়ে উত্তরসূরীরা এই রেওয়াজ শুরু করে তবে কি হবে ? আর আমি বা আমরা যারা সত্যের পক্ষে সমালোচনায় সরব হই তবে আমাদের কপালে কি সেই পক্ষ পাতের ‘তকমা’ লেগেই থাকবে ??
কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আমার যে আত্মীয় বড় বোন আমাকে বলেন, আমি বিরোধীদল ও জামায়াতের সমর্থন করছি, তিনি হয়তো তখন আমাকে আর রাজাকার বলতে পারবেন না !! কারন ক্ষমতার পালাবদলে অনেকের ভাগ্য বদল হলেও স্বেচ্ছায় গ্রহণ করা এই পেশা আমার বা আমাদের আর ছাড়তে হবে না। আমরা এভাবেই লিখে যাবো। আর সেটা হয় কারো জন্য ‘বিষ’ আর কারো জন্য ‘আমিষের’ কাজ দেবে।
লেখাটা যখন ছাপা হবে তখন দেশের পরিস্থিতি কি হবে জানি না। তবে তত্ত্ববধায়ক সরকার ইস্যু নিয়ে পরিস্থিতি যে বিস্ফোরমুখী হবে সেটা রাজনীতির আবহাওয়া বলে দিচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আমেরিকায় ঈদ কাঠাতে গিয়ে বলেছেন দেশে কোন রাজনৈতিক সংকট নেই, আর অপর দিকে রাজধানীতে সব ধরনের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, দাঁড়িয়ে বসে মিটিং করার উপর ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। যার সাথে রাজনৈতিক সংলাপ সমঝোতা হবে সেই নেত্রীর গাড়ী বহরে পুলিশ হামলা করে নিরাপত্তাবাহিনীর গাড়ীর গ্লাস ভেঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য একজন নেতাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যে দাবীতে ১৭৩ দিন শেখ হাসিনার হরতাল করেছেন সেই দাবীকে সংবিধানের দোহাই দিয়ে তার ভাষায় হারাম ঘোষনা করেছেন। অথচ দেশের স্বার্থে এটা করলে দেশ ভারত-কিংবা পাকিস্থান হয়ে যাবে না !!
একদিকে সংলাপের ধোঁয়াটে শ্লোগান আর অপর দিকে মগের মুল্লুক স্টাইলের শাসন সরকারের জনপ্রিয়তাকে কতটুকু তলিয়ে নিয়ে গেছে সেটা সর্বত্র স্পষ্ট। একটি বারও তাদের মাথায় এই কথাটি কি ঢুকে না, তারা কথায় কথায় বলেন, জনপ্রিয়তার শীর্ষ বিন্দু নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সর্বাধিক আসন পেয়ে ক্ষমতাসীন। অথচ নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের জনপ্রিয়তা এমন পর্যায়ে গেছে যে দেশের একটি সিটি কর্পোরেশনেও তাদের মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা জিতে আসা তো দূরের কথা, অনেকের ভাগ্যে সম্মানজক ভোট পাওয়াও জোটেনি। যারা আজ ক্ষমতা পেয়ে নিজেদের জাতির ভাগ্য নিয়ন্তা ভাবছেন, তাদের প্রতি আবদেন, একবার রাতের আধাঁরে অসহায় মানুষের দেয়ালে কান পেতে শুনুন, তারা বলছে দেশ কারো বাপদাদার সম্পত্তি নয়। দেশ কোটি কোটি মানুষের।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সম্পাদক (নির্বাহী ) দি সান রাইজ টুডে ডট কম।