মুরসির সমর্থনে মিসরে ১০ লক্ষাধিক লোকের বিক্ষোভ
সেনা অভ্যুথানের প্রতিবাদ ও মুহাম্মাদ মুরসির সমর্থনে গত শুক্রবার বিকেলে কায়রোসহ মিসরজুড়ে ব্রাদারহুডের আহ্বানে ১০ লক্ষাধিক লোকের বিােভ অনুষ্ঠিত হয়। অন্য দিকে মোবারকপন্থী শীর্ষ সন্ত্রাসীদের হামলায় মানসুরা জেলায় ব্রাদারহুডের চার মহিলাকর্মী নিহত হয়েছেন। মিসরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ মুরসিকে অবৈধ অপসারণের প্রধান কুশলী সেনাপ্রধান আবদুল ফাত্তাহ সিসির পদত্যাগ দাবি করে কায়রো ও আলেকজান্দ্রিয়াসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ করেছেন মুরসিভক্ত লাখো জনতা। তারা মুরসির মুক্তি ও তাকে মতায় পুনর্বহালের দাবি জানান। অন্যথায় রক্তের বন্যা বয়ে গেলেও রাজপথ ছাড়বেন না বলে রাবেয়া স্কয়ারে ঘোষণা দেন ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিজ দলের মহাসচিব ড. মুহাম্মাদ আল বেলতাগি। নাসের সিটির রাবেয়া আল আদইয়া স্কয়ার, কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় স্কয়ার, মুরসিকে জিম্মি করে রাখা কার্যালয়, বিমানবন্দর সড়কসহ জেলায় জেলায় গভীর রাত পর্যন্ত বিােভ করেন মুরসিপন্থীরা। এ দিকে তাহরির স্কয়ারেও মুরসিবিরোধী কয়েক হাজার লোক বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভ চলাকালে সেনা উড়োজাহাজ বিক্ষোভ পর্যবেণ করে। শান্তিপ্রিয় আন্দোলন চলাকালে রাত দেড়টার দিকে মোবারকপন্থী সন্ত্রাসীরা মানসুরা জেলায় মুরসি সমর্থকদের ওপর আকস্মিক হামলা চালায়। গুলি ও তলোয়ারের আঘাতে ইসলামা আলী আবদুল গানি ৩৮, হালাতা মুহাম্মাদ আবু সাইয়া ১৭, আমাল মুতাওয়াল্লি ৪৫ ও বাসনা ১৩ নামে চারজন নিহত হন এবং ১৫ জন আহত বলে জানান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জেলা প্রধান ডা: আবদুল ওহাব সুলায়মান। শনিবার আসরের নামাজের পর স্থানীয় স্টেডিয়ামের সামনে তাদের নামাজে জানাজা শেষে দাফন করা হয়। মিসরের জাতীয় ফুটবল কাব, প্রবাসী মিসরি নাগরিক, আরব কাবিল প্রধান রাবেয়া স্কয়ারে মুরসিকে সমর্থন করে বক্তব্য দেন। নাসের সিটির সংবাদ সম্মেলনে ব্রাদারহুড নেতারা মুরসির সমর্থনে আগামী সোমবার আবার ১০ লাখ লোকের বিােভের ডাক দিয়েছেন। তারা কোনো অবস্থাতেই রক্তয়ী সঙ্ঘাতে জড়াবেন না বলে জানান। তবে মুরসি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত মিসরের সর্বত্র শান্তিপ্রিয় আন্দোলন চলবে। তবে মিডিয়া ইসলামপন্থীদের জঙ্গিবাদ বলে প্রচার করছে। বন্ধ করে দেয়া বিরোধীদের সাতটি চ্যালেন এখনো বন্ধ রেখেছে সেনা সরকার। তবে সেনাদের অভ্যুত্থানের ফলে জেলা শহরগুলোয় মুরসির জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে গেছে। অপর দিকে শনিবার সকালে ৪ ঘণ্টার জন্য রাফা সীমান্ত খুলে দেয়া হয়। অবশ্য তলদেশের দু’টি ট্যানেল সিমেন্ট দিয়ে বদ্ধ করে দেয় সেনারা।
মুরসিকে মুক্তি দিতে ইইউর আহবান
ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে মুক্তিদান এবং মিসরকে গণতন্ত্রে ফিরিয়ে নিতে দেশটির অন্তর্র্বতী সরকারের ওপর চাপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আল-জাজিরার খবরে একথা বলা হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে মুরসির পক্ষে ও বিপক্ষে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী কায়রোর রাজপথে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ক্যাথারিন অ্যাস্টনের সফরের সময় এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি মুরসিকে মুক্তিদানে মিসরের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
অ্যাস্টন বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে, তাকে (মুরসি) মুক্তি দেয়া হবে। আমাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে তিনি সুস্থ আছেন। তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেলে আমি আনন্দিত হতাম।
ক্যাথারিন অ্যাস্টন আমর দারাং, মুসলিম ব্রাদারহুডের কয়েকজন নেতা এবং মুরসির প্রধানমন্ত্রী হিসাম কান্দিলের সঙ্গে ৪৫ মিনিটব্যাপী বৈঠকে মিলিত হন। আমর দারাং বলেন, অ্যাস্টন এমন কোনো প্রস্তাব দেননি যা মিসরের রাজনৈতিক সংকট নিরসন করতে পারে। আমরা অন্য কারো কাছ থেকে সাহায্য চাই না। আমরা কেবলমাত্র আমাদের ওপর নির্ভর করছি।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় মিসরের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তার সরকার মিসরে রাজনৈতিক গ্রেফতারে উদ্বিগ্ন। জর্দানের রাজধানী আম্মানে তিনি বলেন, রাজপথে শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে, স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে, সহিংসতার অবসান ঘটাতে হবে, জনগণের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে এবং দেশটিকে পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে হবে।