ফিলিপাইনের দুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান ওআইসির

Ekmeleddin Ihsanogluইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোকে ভয়াবহ টাইফুনের আঘাতে বিধ্বস্ত ফিলিফাইনে দুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং দেশটির সরকার ও জনগণের পাশে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর আবেদন জানিয়েছে। ওআইসি মহাসচিব একমেলেদ্দীন ইহসানোগলু নিহতদের পরিবার পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। তিনি নজিরবিহীন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফিলিপাইনের বিপর্যস্ত অঞ্চলের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা করার আহ্বান জানান। ইহসানোগলু ওআইসির বিশেষ শাখাকে টাইফুন হাইয়ানের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য দানের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারি সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড়ের ছোবলে ১০ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং বহু গ্রাম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ফলে লাখ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। মহাসচিব ওআইসির সকল সদস্য রাষ্ট্র, সংশ্লিষ্ট অঙ্গসংগঠন, অধিভুক্ত ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান এবং ইসলামী দাতব্য সংস্থাসমূহকে ত্রাণ, চিকিৎসা সামগ্রী মানবিক ও আর্থিক সহায়তা নিয়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। প্রয়োজনীয় সাহায্য দ্রুত সরবরাহ করারও তাগিদ দেন তিনি। তিনি এসব মানবিক সহায়তা দুর্গতদের মাঝে বিতরণে প্রস্তুতির কথা জানান।
অন্যদিকে ইউএনএইচসিআর অন্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে মিলে খাদ্য বহির্ভূত অন্যান্য সামগ্রীসহ ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়ের কাজ করছে। জিসিসিতে ইউএনএইচসিআরের আঞ্চলিক প্রতিনিধি এ তথ্য জানান। আরব নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নাবিল ওসমান বলেন, আমরা ফিলিফাইনের দুর্গতদের জন্য সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। ফিলিপাইনের টাইফুনে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য জাতিসংঘ ৩০ কোটি ১০ লাখ ডলারের সাহায্য পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে। ওসমান জানান, টাইফুনে ৯০ লাখ থেকে ১ কোটি ১০ লাখ  মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ইউএনএইচসির ত্রাণ সামগ্রীবাহী প্রথম বিমান গতকাল সেবুর উদ্দেশ্যে দুবাই ত্যাগ করেছে। এতে তাঁবু ও খাদ্যবহির্ভূত অন্যান্য সামগ্রী রয়েছে। আরো বিমান ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে শিগগির ফিলিপাইনের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।
ইতোমধ্যে টাইফুনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের উদ্দেশ্যে ইউনিসেফ পদক্ষেপ নিয়েছে। ফিলিপাইনে ঘূর্ণিঝড়ে অন্তত ৪০ লাখ শিশু ক্ষয়ক্ষতির শিখার হয়েছে। শিশুদের উপযোগী খাদ্য, চিকিৎসা, বস্ত্র, পানি ও স্বাস্থ্য সম্মত খাবারের বক্স দুর্গত এলাকার প্রায় ৩ হাজার পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য ইতোমধ্যেই পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এগুলো সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তাকলোবানে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিতরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইউনিসেফের ফিলিফাইন প্রতিনিধি তোমো হোজুমি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের সহায়তার জন্য এসব সামগ্রী দ্রুত পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকগুলোতে পৌঁছা অনেক কঠিন। কারণ টাইফুনের কারণে সব রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। শিশুদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছ দেযার লকেষ্য আমরা দিনরাত কাজ করছি। কোপেনহেগেলে অবস্থিত ইউনিসেফের গুদাম থেকে ১৩ লাখ ডলারের ত্রাণ সামগ্রী আরো ১০ হাজার পরিবারের কাছে বিতরণের জন্য বিমান যোগে ফিলিপাইনে পাঠানো হচ্ছে। এই চালানে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, সাবান, চিকিৎসা বক্স, তাঁবু ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য সামগ্রী রয়েছে। টাইফুন হাইওয়ানের আঘাত থেকে বেঁচে যাওয়া শিশুরা এখন নিজেদের প্রাণ রক্ষার লড়াই করে যাচ্ছে। তাদের টিকে থাকার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ পাঠানো প্রয়োজন । ঘূর্ণিঝড়ে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় শিশুদের স্বাস্থ্য সমস্যা প্রকট। শিশুদের নিরাপত্তা রক্ষা এবং খেলাধুলা ও লেখাপড়া করার জন্য স্বতন্ত্র জায়গা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। কারণ পরিবারের বড়রা বাড়িঘর পুননির্মাণ ও জীবিকা নির্বাহের কাজে ব্যতিব্যস্ত থাকবে। হোজুমি বলেন, এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রথমে যা ধারণা করা হয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশি। শিশুক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউনিসেফ যতদ্রুত সম্ভব এসব শিশুর কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার জন্য সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button