
মনে হচ্ছিল তিনি বিকালে লন্ডনের টেমসের ধারে সস্ত্রীক ঘুরতে বেরিয়েছেন। এমনই মেজাজে বৃহস্পতিবার পড়ন্ত বেলায় গঙ্গার ধারে, হাওড়া স্টেশনের সামনে ও ভেতরে ঘুরে বেড়ালেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তিনি জেনে নিলেন অবিভক্ত ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম দ্রষ্টব্য হাওড়া ব্রিজের স্থাপত্য ও রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় তথ্য। বেশ কিছুক্ষণ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলেন প্রায় দুইশ’ বছরের পুরনো হাওড়া স্টেশনের অপূর্ব স্থাপত্যশৈলীর দিকে। প্রথমে শুধু হাওড়া ব্রিজ দেখার কথা থাকলেও পরে সোজা স্টেশনে ঢুকে পড়েন। একেবারে সাধারণের সঙ্গে মিশে গিয়ে ঘুরে ঘুরে স্টেশনটি দেখেন। প্রসঙ্গত, দুটি স্থাপত্যই তৈরি করেছিলেন ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে ইংরেজ ইঞ্জিনিয়াররাই। কিন্তু প্রথম জীবনে সাংবাদিক এবং পরে রাজনীতিক থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া ক্যামেরন কলকাতায় পা দিয়ে দেখে নিয়েছেন স্বদেশীয়দের অপূর্ব পুরাকীর্তিকে। তবে কলকাতার মিডিয়ার বাড়াবাড়ির কারণে সস্ত্রীক ক্যামেরনের একটি মনোবাসনা পূর্ণ হয়নি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা ছিল, কলকাতার ফুচকা-ভেলপুরি খাওয়ার। সফরসূচিতে সেই বিষয়টি রাখা থাকলেও নিরাপত্তার কারণে শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করা হয়েছে। ক্যামেরন কলকাতায় একটি ম্যানেজমেন্ট কলেজের অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেন, আমি সঠিক সময়ে কলকাতায় এসেছি। কারণ, এখন শচীন শেষ টেস্ট খেলছে। শচীনের খেলা নিয়ে আমার বরাবরই একটা আগ্রহ ছিল। আর এখন তো বাংলায় অনেক নতুন কিছু হচ্ছে। প্রায় দেড় দশক পর কোনো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কলকাতায় এসেছিলেন।
একদিনের ঝটিকা কলকাতায় সফরে এসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে সন্ধ্যায় বৈঠকে বসেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। এদিন দেশের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠকের পর দুপুর আড়াইটা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে নামের ক্যামেরন। শহরে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সন্ধ্যায় ব্রিটেনের দূতাবাসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। ঝটিকা সফরে এসেও যেভাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ক্যামেরন বৈঠক করেছেন, তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে কলকাতার বাণিজ্য ও রাজনৈতিক মহল। এদিন দুপুরে কলকাতার আকাশবাণীতে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। ব্রিটিশ ব্রডকাস্ট সংস্থাকে বিশেষ সাক্ষাৎকারও দেবেন। বিজনেস স্কুলে ছাত্রছাত্রী ও সাবেকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বেও মিলিত হন। কলকাতা জাদুঘর ঘুরে দেখে এবং সংস্কারের কাজও খতিয়ে দেখেন তিনি। হো চি মিন সরণিতে ব্রিটেন দূতাবাসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সেরে ভারতীয় সময় রাত ৮.৩৫টা নাগাদ বিশেষ বিমানে কমনওয়েলথ বৈঠকে যোগ দিতে শ্রীলংকার উদ্দেশে রওনা হয়ে যান তিনি।