বিলাতে চায়ের আড্ডায় বাংলাদেশের রাজনীতি
অলিউল্লাহ নোমান:
শুক্রবার বিকালে একটি রেস্টুরেন্টে চা পানরত অবস্থায় পাশের টেবিলে বসা তিনজনের গল্প শুনছিলাম। তারা সবাই বাংলাদেশী। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। তাদের আড্ডায় আলোচনার বিষয় ছিল বাংলাদেশের রাজনীতি এবং চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে। চায়ের পেয়ালা সামনে নিয়ে পুরো মনোযোগ ছিল পাশের টেবিলের আড্ডায়। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বেশ জমিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছিলেন তারা।
মেধাবী তরুণদের রাজনৈতিক বিশ্লেষণে যেন উঠে আসছে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের আকুতি। তাদের নাম আমি জানি না। পরে যখন ভাবলাম আড্ডার কথোপকথন নিয়ে লিখব তখন তাদের ক, খ, গ নাম দিলাম। ‘ক’ বলতে ছিলেন, ১৮ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দলের পাঁচ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। এটা আরও আগে দেয়া উচিত ছিল। যেসব জেলা এবং উপজেলা সভাপতি আন্দোলনে এলাকায় থাকে না বা নেতাকর্মীদের সঙ্গে না থেকে আত্মগোপনে থাকেন তাদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আমার তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না বেগম খালেদা জিয়ার মতো একজন উদার নেত্রী এই নোটিশ দিতে পারেন। কারণ, সব সময় দেখে আসছি তিনি ক্ষমা করতে জানেন। বুকে কষ্ট চেপে রেখে হলেও দেশ এবং দলের ঐক্যের স্বার্থে সহজে কাউকে শাস্তি দেননি।
সঙ্গে সঙ্গে ‘খ’ বললেন, তারাই কিন্তু আবার আমাদের এমপি, মন্ত্রী হবেন। কারণ, তাদের ছাড়া কোনো উপায় নেই। দেখলা না, সাদেক হোসেন খোকা এবং আবদুস সালাম ১/১১-এর জরুরি অবস্থার সরকারের সময় সংস্কারপন্থীদের পক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখল করতে এসেছিলেন। পরে তাদেরই আবার ঢাকা মহানগরী বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এখন আবার নানা কথা শোনা যায় তাদের সম্পর্কে। যারা ১/১১-এ সংস্কারে ছিলেন, বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান সম্পর্কে অকথ্য ভাষায় গালিয়ে দিয়েছেন, এরকম অনেক জেলা সভাপতিই আবার মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপি থেকে। এখনও দলে জেলা উপজেলা সভাপতি পদে আছেন, তবে রাজপথে নেই। কৌশলে আত্মগোপনে রয়েছেন।
কিন্তু কোনো বিকল্প নেই তাদের ছাড়া। সাদেক হোসেন খোকা, মির্জা আব্বাস, আবদুস সালাম-ঘুরে ফিরে তাদের মধ্যেই থাকবে বিএনপির ঢাকা মহানগরীর নেতৃত্ব। এবার ‘গ’ একটু হেসে বললেন, বিএনপির জন্য তাদের অনেক ত্যাগ রয়েছে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে খুবই সক্রিয় ছিলেন সবাই। শুধু আবদুস সালাম ছাড়া। তিনি জাতীয় পার্টি নেতা হিসেবে এরশাদ আমলে ডেপুটি মেয়র ছিলেন ঢাকার। বাকিদের পুরস্কার হিসেবে মানুষ তাদের ভোট দিয়েছেন। বদৌলতে এমপি হয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়া তাদের মন্ত্রি-মেয়র বানিয়েছেন। আর এর সুবাদে প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন তারা। শুধু তারা নিজেরাই নন, তাদের আত্মীয়স্বজন, সাঙ্গপাঙ্গরাও প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক এখন। তাদের অনেকের টাকার হিসাব নেই। সাঙ্গপাঙ্গ সবারই বড় ব্যবসা, ঢাকায় একাধিক বাড়ি, হাঁকাচ্ছেন দামি গাড়ি। টাকার মহব্বত কার না আছে! আর টাকার জন্যই তো এখন রাজনীতি। এটাতো একরকম বিনা পুঁজিতে ব্যবসা। সবাই টাকার হেফাজতে ব্যস্ত। দল, দেশ গোল্লায় গেলেও তাদের কিছু যায় আসে না। টাকায় আরাম দিচ্ছে। এই আরাম ছেড়ে আর রাজপথে আসতে মন চায় না। এছাড়া রাজপথে আসলেই সরকার মামলা-হামলা করবে। কী দরকার আছে! ইলেকশনের সময় তো মনোনয়ন পাওয়া যাবে। সিটতো রিজার্ভ আছে। জনগণ ঠেকায় রয়েছে। এবার ঠেকায় পড়া জনগণ নিজেদের উদ্ধারের জন্য ১৮ দলীয় জোট প্রার্থীদেরই ভোট দেবে। খামোকা রাস্তায় নেমে, জেল, জুলুম সহ্য করার দরকার আছে!
‘ক’ বললেন, ১/১১-এর জরুরি অবস্থার সরকারের সময় বেগম খালেদা জিয়ার টেলিকনফারেন্সে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জেগে উঠেছিল। সিনিয়র নেতাদের বেশিরভাগই মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের পক্ষে সংস্কারপন্থীর খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন। সঙ্গে তাল দিয়েছিল আওয়ামীপন্থী মিডিয়াগুলো। বাকিরা সবাই ছিল আত্মগোপনে। তখনও তৃণমূল নেতাকর্মীরাই ছিলেন বিএনপির সঙ্গে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই তখন নেতৃত্বহীন বিএনপিকে জাগিয়ে রেখেছিলেন। উপরে ছিলেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। মাঠে ছিলেন তৃণমূল। কারণ একটাই, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। দল ক্ষমতায় গেলেও তারা মন্ত্রী-এমপিদের দরজার কাছে ভিড়তে পারে না। শান্তি মতো বাসা বাড়িতে ঘুমাতে পারেন, দেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে এটাই তাদের প্রত্যাশা। এর বাইরে যেটা, সেটা হলো তাদের রয়েছে দেশপ্রেম। বেগম খালেদা জিয়া দেশপ্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একজন দেশনেত্রী। তাই তিনি সর্বশেষ জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে যা বলেছেন, তাতেও দেশপ্রেমের দৃঢ়চিত্তের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। আর এজন্যই দেশপ্রেমিক জনতাও সব সময় তার পাশে রয়েছে।
এখনও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখনও সুবিধাভোগী সিনিয়র নেতারা আত্মগোপনে। খালেদা জিয়া রাজপথে জনগণের মাঝে বিচরণ করছেন। তিনি এই বয়সেও বিনা প্রোগ্রামে হুট করে জাতীয় প্রেস ক্লাবে চলে এসেছেন সাংবাদিকদের সঙ্গে চা খেতে। সুযোগে মতবিনিময় করেছেন, সাংবাদিকদের কাছ থেকে দেশের মানুষের খবর নিয়েছেন। কেউ কেই বলছেন, নেতাদের আত্মগোপন হলো আন্দোলনের একটা কৌশল। তবে বেলা ডুবন্ত অবস্থায় এটা কোন ধরনের কৌশল সেটা বোধগম্য হচ্ছে না।
মাঝ খান থেকে ‘গ’ এবার একটি কথা টেনে নিলো। ক’র প্রতি উদ্দেশ করে বলল, তুমি যেহেতু আওয়ামীপন্থী মিডিয়ার কথা বলছো, তখন এবার শোন। বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় গিয়ে তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোকদের টেলিভিশন চ্যানেল দিয়েছিলেন। তার মধ্যে মোসাদ্দেক আলীকে এনটিভি-আরটিভি, মির্জা আব্বসাকে বৈশাখী টিভি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. মুশফিকুর রহমানকে দেশটিভি, সাদেক হোসেন খোকাকে বাংলাভিশন, গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে চ্যানেল ওয়ান, মীর কাশেম আলীকে দিগন্ত টেলিভিশন। বর্তমানে মোসাদ্দেক আলীর কাছে এনটিভি রয়েছে। ১/১১-এর পর আরটিভি ছেড়ে দিতে তিনি বাধ্য হন। সাদেক হোসেন খোকার বাংলাভিশন আছে। বাকিদেরটা আর নেই। লাইসেন্স বিক্রি করে কামাই করেছেন টাকা। মির্জা আব্বাসের বৈশাখী বিক্রি করা হয় ডেসটিনির কাছে। এর প্রধান নির্বাহী এখন আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলাম বুলবুল। ড. মুশফিকুর রহমানের দেশটিভি বিক্রি করা হয় সাবের হোসেন চৌধুরী ও আসাদুজ্জামান নূরের কাছে। কত বড় দেশপ্রেমিক হলে সাবের হোসেন চৌধুরী ও আসাদুজ্জামান নূরের মতো ইসলামবিদ্বেষী আওয়ামী লীগারদের কাছে টেলিভিশন বিক্রি করতে পারেন তিনি। তারপরও কিন্তু তারা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন।
ভেতরের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগ নিয়ে সরকার বন্ধ করে দিয়েছে চ্যানেল-ওয়ান। দিগন্ত ও ইসলামিক টিভি বন্ধ করা হয়েছে মে মাসে। এর আগে এপ্রিলে বন্ধ করা হয়েছে আমার দেশ। সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হয়েছে। কিন্তু মিডিয়া বন্ধ করা নিয়ে বিএনপি যেরকম আন্দোলন করতে পারতো সেটায় ব্যর্থ হয়েছে। মাহমুদুর রহমান বাংলাদেশের মানুষকে জাগিয়ে রেখেছিলেন আমার দেশ দিয়ে। সরকারের যত দুর্নীতি, দুঃশাসন সব তিনি তুলে ধরেছেন অকুতোভয় সম্পাদক হিসেবে। নিশ্চিত গ্রেফতার হবেন জেনেও মামলা মাথায় নিয়ে অফিসে থেকেছেন। কখনও কাপুরুষের মতো আত্মগোপনের কৌশল অবলম্বন করেননি। আজ যারা আত্মগোপনের কৌশলে রয়েছেন তারা বরং অনেকেই মাহমুদুর রহমানের সমালোচনা করছেন। বাড়াবাড়ি করা হয়েছে, অনেক আগে বেশি বিরোধিতা শুরু করেছেন, এরকম নানা কথা বলা হয় তাদের পক্ষ থেকে। আমার দেশ-এর এতো বিপদেও কেউ এসে সংবাদ কর্মীদের পাশে পর্যন্ত দাঁড়ায় না। তাহলে আওয়ামী মিডিয়া থাকবে না তো কোন মিডিয়া থাকবে!
‘খ’ এবার বললেন—মনোযোগ দিয়ে শোন, একটা গল্প বলি। গল্পটা হচ্ছে এক লোকের বাড়িতে চোর ঢুকেছে। লোকটি ভয়ে কোনো কথা বলছে না। নিজেকে আড়াল করার কৌশল নিয়ে ব্যস্ত। শুধু ভাবতেছে দেখি না কী করে, চোর কতদূর যায়। যখন ঘরে ঢুকে গেল তখনও কৌশলে মুখ কম্বলের নিচে লুকিয়ে ফেলল। কম্বলের নিচে থেকে শুধু চোখ দিয়ে থাকিয়ে থাকল। মনে মনে ভাবল দেখি না চোর কী করে। চোর তার চোখের সামনেই ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র সংগ্রহ করল। তারপরও কৌশলে আত্মগোপনেই আছেন। ভাবছে, দেখি না কী করে? কৌশল করতে করতেই ঘরের সবকিছু নিয়ে চোর নির্বিঘ্নে পাড়ি দিল। তখন চিত্কার করছে, চোর সব নিয়ে যাচ্ছে, চোর সব নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিবেশীরা এসে তার কোনো সহায়তা করতে পারল না। ততক্ষণে চোর গন্তব্যে পৌঁছে গেছে।
সরকারের ডুবন্ত বেলায় বিএনপি নেতাদের এই আত্মগোপনের কৌশল দেশকে কোথায় নিয়ে যাবে, সেটাই হচ্ছে সবার প্রশ্ন। শেয়ারমার্কেট লুটপাট, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি, ঋণের নামে ব্যাংকের টাকা লুটপাট, গুম-খুনের রাজনীতি, হাতে-নাতে ধরা পড়া মন্ত্রীদের বাসাগামী ঘুষের টাকা, বিচার বিভাগকে নগ্ন দলীয়করণ— সবকিছুই একে একে সম্পন্ন হয়েছে। কৌশল দেখতে দেখতে দেশের অর্থনীতি ফতুর হয়ে গেছে। ট্রানজিটের নামে পাশের দেশকে সহজ যাতায়াতের সুবিধা দিতে করিডোর দেয়া হলো। বিনিময়ে পাশের দেশ ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি আটকে দিয়ে আমাদের মরুভূমি বানানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। টিপাইমুখে বাঁধ দিয়ে অভিন্ন নদীর পানি আটকে দেয়ার অনুমোদন দেয়া হলো। পুরো দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এখন যায় যায় অবস্থায়। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বৈঠক করে ইন্ডিয়া-আমেরিকা। ১৬ কোটি জনগণের ভাগ্য নির্ধারণ করছে ইন্ডিয়া-আমেরিকা। শুধু কি তা-ই, এই সময়ে খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন ইন্ডিয়ান কূটনীতিক। এ জাতি হিসেবে এর চেয়ে বড় লজ্জার আর কী রয়েছে! অথচ বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা এ ব্যাপারে নীরব। যাদের ওপর মানুষ নির্ভর করে তারা করেন কৌশল।
এরই মধ্যে দেশপ্রেমিক খেটে খাওয়া মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের ভেল্কিবাজি, ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ জনজীবন। ক্ষমতায় আসার আগে শেখ হাসিনা ১০ টাকা কেজি চাল, বিনা মূল্যে সার, ঘরে ঘরে চাকরি এবং দিনবদলের স্লোগান দিয়েছিলেন। ক্ষমতায় এসে ৪৫ টাকা কেজি দরে মোটা চাল, ৩ গুণ দামে সার, চাকরির বদলে ঘরে ঘরে লাশ উপহার দিলেন। দেশপ্রেমিক নেতাদের গুম করলেন। রাজপথে খুনের উত্সব হয়েছে। তৃণমূলের যেসব কর্মী বেগম খালেদা জিয়ার ডাকে হরতাল পালন করতে এসে আওয়ামী গুণ্ডাবাহিনী এবং আওয়ামী পুলিশের গুলিতে নিহত হচ্ছেন, তাদের পরিবারের কেউ খোঁজ পর্যন্ত নিচ্ছেন না। কেন্দ্রীয় নেতারা তো দূরে থাক স্থানীয় নেতারাও খোঁজ নিচ্ছেন না।
তারপরও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এসব মানুষ রাস্তায় নামছে প্রতিবাদ জানাতে। কিন্তু কৌশলে যারা আত্মগোপনে রয়েছেন তারাই এমপি, মন্ত্রী এবং সরকারের আরও বিভিন্ন পদ-পদবিতে আসীন হবেন। পছন্দের পদটি না পেলে দলে গ্রুপিং করবেন। অনুগত বাহিনীর লোকদের দিয়ে বিশৃঙ্খলা করবেন। দুর্নাম কামাবেন আবার দলের জন্য। এর ভুক্তভোগী হবেন আবার বেগম খালেদা জিয়া এবং তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এবারও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার। চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতির অভিযোগের ফলেই তার দুই সন্তান দেশের বাইরে। ৪০ বছরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। এখন থাকেন ভাড়া বাড়িতে। প্রতিবাদে সেদিন রাজপথে এক হাজার লোকও জমায়েত হয়নি। ক্যান্টনমেন্টের জাহাঙ্গির গেটের সামনে সর্বোচ্চ নেতাদের মধ্যে ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী। চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠানোর সুযোগ না দিলে কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশের সাধারণ নাগরিকদের এই ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। এখনও নেতাদের আত্মগোপনের কৌশলে দিশেহারা ভুক্তভোগী মানুষ।
তাদের কথা শুনতে শুনতে আমার জেলা থেকে এক ছাত্রদল নেতার ফোন এলো। সেটা আরও ভয়াবহ। ওই ছাত্রদল নেতা ফোনে আক্ষেপ করে বললেন, ‘ভাই, কী আর বলব? উপজেলা বিএনপি সভাপতি হরতালের আগে থেকে ঢাকায় বসে আছেন। এলাকায় তার অনুগত লোকদের বলে গেছেন, এখানে মিটিং-মিছিলের দরকার নেই। এখানে মিটিং-মিছিল করলেই তো আর সরকার পতন হবে না। আবার দেখি দৈনিক দিনকালে পুরনো ছবি ছাপিয়ে বলা হয়েছে, হরতালে মিছিল করছেন। এর চেয়ে বড় ধাপ্পাবাজি আর কী হতে পারে?’ তিনি আরও বললেন, স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা নিজের উদ্যোগে সাধ্য অনুযায়ী হরতাল পালনের চেষ্টা করছেন। কিন্তু উপজেলা বিএনপির সভাপতি-সেক্রেটারির খবর নেই। তার পরও পত্রিকায় পুরনো ছবি দিয়ে বলা হয়েছে, মিটিং-মিছিল করছেন। শুধু তা-ই নয়, ওই উপজেলা বিএনপির সভাপতি ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পরপরই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে প্রকাশ্যে সাপোর্ট দেন। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই— নির্বাচন হলে তারাই আবার মনোনয়ন পাবেন।
লেখক : দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত