শীর্ষ আলেম আল্লামা সুলতান যওক নদভীর ইন্তেকাল
বাংলাদেশের শীর্ষ আলেম, মাদরাসা শিক্ষা সংস্কারের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়া, চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন।
বাংলাদেশ সময় শনিবার (৩ মে) রাত ১২টার দিকে চট্টগ্রামের এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮৬ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়ার শিক্ষক মাওলানা এনামুল হক মাদানি এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ১৮ এপ্রিল থেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভীকে চট্টগ্রাম নগরীর এভারকেয়ার হসপিটালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে বেশ কয়েকবার তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী চট্টগ্রামের জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সর্বশেষ ঘোষিত কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। এ ছাড়া তিনি কওমি মাদরাসাভিত্তিক শিক্ষা বোর্ড আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের সভাপতি ও সৌদি আরবভিত্তিক আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল লিগ অব ইসলামিক লিটারেচারের বাংলাদেশ ব্যুরো চিফ হিসেবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেছেন।
উল্লেখ্য, আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ। জীবনের বড় অংশটি ব্যয় করেছেন শিক্ষার পেছনে। লেখক-গবেষক হিসেবে দেশে-বিদেশে রয়েছে তাঁর খ্যাতি। আরবি, উর্দু, ফারসি তিন ভাষাতেই তাঁর দক্ষতা ছিল ঈর্ষণীয়। সংশ্লিষ্ট ভাষার বিজ্ঞজনেরা তাঁকে ভাষাবিদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আলেমদের মধ্যে বাংলা চর্চার সেই দুর্ভিক্ষের যুগে তিনি বাংলায় লিখেছেন, অন্যদের লিখতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি ছিলেন একজন স্বভাবজাত কবিও। শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে আলেমদের মধ্যে তাঁর ভূমিকা অনন্য। তিনি ছিলেন একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বও। যুগশ্রেষ্ঠ বুজুর্গ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভীর (রহ:) উত্তরাধিকার বহন করেন। হাদিসের মসনদে ছিলেন সরব একজন শাইখুল হাদিস। প্রিন্সিপাল হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন দক্ষতার। দীনের প্রতিটি শাখায় ছিল তাঁর পদচারণা। তাঁর পরিচয় ছিল বহুমাত্রিক।
আল্লামা সুলতান যওক নদভী রহ.-এর জন্ম ১৯৩৯ সালে কক্সবাজারের মহেশখালীতে। বাবা সুফি আবুল খায়ের, মা রূহ আফজা বেগম। শৈশবে মাকে হারান। বেড়ে ওঠেন বাবার স্নেহে। প্রাথমিক পড়াশোনার সূচনা হয় নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা সম্পন্ন করেন মহেশখালীতেই। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রামের বিখ্যাত দীনি প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মুফতি আজিজুল হক (রহ.)-এর সুদৃষ্টি পড়ে তাঁর ওপর। তিনি ভর্তি হন পটিয়া মাদরাসায়। সেখানেই মাদরাসার শেষ দিকের ক্লাসগুলো সম্পন্ন করেন। মূলত জামিয়া পটিয়ায় পড়াশোনার সময়ই তখনকার বিখ্যাত শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে বহুমুখী যোগ্যতা অর্জন করেন।
আরবি লিখনির কারণে আরব বিশ্বে ব্যাপক কদর রয়েছে আল্লামা যওকের। তাঁর ব্যক্তিগত সুপারিশ সেখানকার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। তিনি রাবেতা আলমে ইসলামিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নিয়েছেন এবং প্রবন্ধ পাঠ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংস্থা রাবেতা আদবে ইসলামির বাংলাদেশের ব্যুরো প্রধানের দায়িত্বও তিনি পালন করছেন। তিনি সৌদি আরব, ভারত, লিবিয়া, তুরস্ক, মিসর, শ্রীলঙ্কা, কুয়েত, আফগানিস্তান, মরক্কো, ওমান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন। ১৯৯০ সালে মক্কায় অনুষ্ঠিত রাবেতার কনফারেন্স চলাকালে বায়তুল্লাহ শরিফের অভ্যন্তরে প্রবেশের বিরল সৌভাগ্য লাভ করেন আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী।