কওমি ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির গোলটেবিল বৈঠক
বাংলাদেশে কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি নিয়ে যা করা হচ্ছে সেটা নিছক রাজনৈতিক ভাওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। সরকার তার মেয়াদের শেষ সময়ে এসে যে অক্সিজেন শূণ্যতায় ভোগছে সেই অক্সিজেন নিতে চাইছে কওমী মাদরাসার সনদের ধুম্রজাল সৃষ্টি করে। সরকার একদিকে কওমি সনদ নিয়ে মায়াকান্না দেখাচ্ছে অন্যদিকে কওমি আলেমদের গণহারে গ্রেফতার করে নির্যাতন চালাচ্ছে। কোনো সভ্য দেশে এ অবস্থা চলতে পারে না।
৬ নভেম্বর লন্ডনস্থ ব্লু-মুন মিডিয়া সেন্টারে কওমি মাদরাসা ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটি যুক্তরাজ্য কর্তৃক আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠকে আলোচকবৃন্দ এক কথা গুলো বলেন। ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির আহবায়ক মাওলানা ফয়েজ আহমদের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব খতিব তাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় বৈঠকের শুরুতে কালামে পাক থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা হাফিজ আখলাক হোসাইন। প্রোগ্রামের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট লেখক রশীদ জামিল। বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন-কাউন্সিল অব মস্ক এর চেয়ারম্যান হাফিজ মাওলানা শামছুল হক, এশাতুল উলুম লন্ডন এর প্রিন্সিপাল মাওলানা তহুর উদ্দিন, ছারী মুসলিম সেন্টার এর খতীব মাওলানা আবদুর রব, মাজাহিরুল উলুম মাইল্যান্ড এর প্রিন্সিপাল মাওলানা ইমদাদুর রহমান মাদানী, সাপ্তাহিক লন্ডন বাংলার প্রধান সম্পাদক আলহাজ্ব কে এম আবু তাহের চৌধুরী, বিশিষ্ট টিভি ভাষ্যকার মুফতি আবদুল মুনতাকিম, খিদমাহ একাডেমীর খতীব আলহাজ্ব মাওলানা আতাউর রহমান, বিশিষ্ট ইমিগ্রেশন আইনজীবী মাওলানা ছালেহ আহমদ হামিদী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস যুক্তরাজ্য শাখার সহ সাধারণ সম্পাদক মুফতি ছালেহ আহমদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম লন্ডন মহানগরীর সভাপতি মুফতি মওছুফ আহমদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস যুক্তরাজ্য শাখার বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা নাজিম উদ্দিন, বিশিষ্ট লেখক আবু সুফিয়ান চৌধুরী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মাষ্টার আমীর উদ্দিন, মাসিক আল আহরার সম্পাদক মাওলানা হোসাইন আহমদ, মাওলানা শরীফ উদ্দিন, মাওলানা মুছলেহ উদ্দিন, মাওলানা আজিজুর রহমান, হাফিজ মাওলানা আবদুল কাদির, মাওলানা মুহিউদ্দিন খাঁন, মাওলানা আকমল হোসাইন, মাওলানা হোসাইন আহমদ, আলহাজ্ব সুহেল আহমদ, আলহাজ্ব জহির আলী, আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান, আলহাজ্ব আছগর আলী প্রমুখ।
গোলটেবিল বৈঠকে যুক্তরাজ্যে প্রবীণ আলেমেদ্বীন হাফিজ মাওলানা শামছুল হক বলেন এতদিন গণতন্ত্রের সাথে ইসলামকে জুড়ে রাখার চেষ্টা চলেছে আর এখন গণতন্ত্র থেকে ইসলামকে ছাটাই করার জন্য চলছে নানামুখি কর্মকান্ড। আর তারই ধারাবাহিকতায় আজ কওমি মাদরাসা সনদ নিয়ে শুরু হয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, কওমি মাদরাসাগুলোরও উচিত স্বীকৃতির জন্য একটি সুন্দর রূপরেখা তুলে ধরা।
এশাতুল ইসলাম লন্ডনের প্রিন্সিপাল মাওলানা তহুর উদ্দিন বলেন, আমরা সনদের স্বীকৃতি চাই কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এ জন্য অস্তিত্ব বিলীন করে করতে হবে। তিনি বলেন আমাদেরকেও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকিকরণ নিয়ে ভাবতে হবে। বিজ্ঞান-তথ্য প্রযুক্তি, এগুলো পড়া-পড়ানো তো গোনাহ নয়। তাহলে এগুলো আমাদের মাদরাসায় পড়াতে অসুবিদা কোথায়। আরো আগে থেকে এগুলো সিলেবাসে যুক্ত করা প্রয়োজন ছিল ।
বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা কে এম আবু তাহের চৌধুরী বলেন, স্বীকৃতির নামে সরকার যা করছে সেটা এক কথায় তামাশা ও ভাওতাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। গোটা উপমহাদেশে ইসলামের ধারক হলেন কওমি মাদরাসার আলেমরা অথচ আলেমদের উপর চলছে নির্যাতন। তিনি বলেন ব্রিটিশ বেনিয়ারা যা করেনি, পাকিস্তানি হানাদাররা পর্যন্ত সেটুকু করেনি, বর্তমান সরকার আলেমদের সাথে তারচেয়েও বেশি দুদ্ব্যবহার করছে।
মাযাহিরুল উলুম মাইল্যান্ড এর প্রিন্সিপাল মাওলানা ইমদাদুর রহমান আল মাদানি বলেন, আমরা নিয়ন্ত্রণ ছাড়া স্বীকৃতি চাই। স্বীকৃতির নামে যদি সরকার কওমি মাদরাগুলোকে নিয়ন্ত্রণের স্বপ্ন দেখে থাকে তাহলে সেটা যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করা হবে।
বিশিষ্ট আলেম টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব মুফতি আবদুল মুনতাকিম বলেন, সরকারের এখন নাকের ডগায় জান তাই বেঁচে থাকবার জন্য কওমি অক্সিজেন খুঁজছে। আর তাই কওমি সনদের স্বীকৃতি নিয়ে শুরু করেছে ষড়যন্ত্র। কওমি সনদের স্বীকৃতির ব্যাপারে অতীতেও আমরা অনেক মুনাফিকদের দেখেছি, এখনো দেখছি। এ ব্যপারে তিনি সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বিশিষ্ট আলেম, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব আতাউর রহমান বলেন কওমি সনদের স্বীকৃতির নামে সরকার একটি ধুম্রজাল দৃষ্টি করেছে। সরকার যদি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বীকৃতির ফাঁদ পেতে থাকে, তাহলে তেমন স্বীকৃতি আমরা চাই না। এ ব্যাপারে তিনি ১৮ দলের কাছ থেকে পরিস্কার বক্তব্য দাবি করে বলেন, আপনারা আপনাদের অবস্থান পরিস্কার করুন।
মূল প্রবন্ধে রশীদ জামিল জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ কওমি শিক্ষানীতি ২০১২ এবং শিক্ষা আইন ২০১৩ এর আলোকে প্রস্তাবিত কওমি কর্তৃপক্ষ আইনের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরে বলেন – এই আইন কার্যকর হলে কওমী মাদরাসাগুলো অস্তিত্বের প্রশ্নে বিপর্যস্ত হবে। বন্ধ হয়ে যাবে হাফিজে কুরআন ও আলিম তৈরির পথ।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা ফয়েজ আহমদ বলেন বাংলাদেশে কওমী মাদরাসার সনদ নিয়ে যা চলছে তাতে কাওমি সন্তান হিসেবে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। সরকারের উচিত কওমি মাদরাসার শিক্ষার সাথে জড়িত শীর্ষ আলেমদের সাথে পরামর্শের ভিত্তিতে স্বীকৃতির ব্যাপারে সিন্ধান্ত নেয়া। তিনি অনুষ্ঠানকে সফল ও অর্থবহ করার জন্য সকলের প্রতি কর্তৃজ্ঞতা জানিয়ে আগামী সকল কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান জানান।