যুক্তরাষ্ট্রের এককালের ৪র্থ বৃহত্তম শহর ডেট্রয়েট এখন দেউলিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট শহর দেউলিয়ার খাতায় নাম লিখিয়েছে। দশকের পর দশক ধরে চলা ক্রমাবনতির ধারা ও অব্যবস্থাপনার পরিণতিতে শহরটিকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার তালিকায় এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় শহর।
মিশিগানের গবর্নর রিক স্লাইডার গত বৃহস্পতিবার বলেন, নগরীর ১৮শ’ ৫০ কোটি ডলার ঋণ সামাল দেয়ার জন্য এটিকে দেউলিয়া ঘোষণার কোন বিকল্প নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েবসাইটে এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে স্লাইডার বলেন, দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে চলা ক্রমাবনতির ফলে ডেট্রয়েটের আজকের এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
জনসংখ্যার দিক দিয়ে ডেট্রয়েট ছিল এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ বৃহত্তম শহর। ১৯৫০ সালে শহরটির জনসংখ্যা ছিল ১৮ লাখ। অথচ আজ সেখানে বাস করে মাত্র ৬ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ। এখানে গাড়ি প্রস্তুত করা ছিল সবচেয়ে বড় শিল্প। অনেক মানুষই গাড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো গুটিয়ে ফেলার কারণে কর্মহীন হয়ে শ্রমিকরা কাজের সন্ধানে অন্যত্র চলে যায়। এর সঙ্গে জড়িত অন্যরাও উপার্জনের আশায় অন্য শহরে পাড়ি জমায়। এতে জনসংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে।
স্লাইডার এক বিবৃতিতে বলেন, ডেট্রয়েট এতদিন ধরে যে বাস্তব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এসেছে তা উপেক্ষা করা হয়েছে। আমি এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিচ্ছি যাতে ডেট্রয়েটের অধিবাসীরা তাদের কাক্সিক্ষত মৌলিক সেবা লাভ করতে সক্ষম হয় এবং একটি দৃঢ় আর্থিক ভিত্তির ওপর ডেট্রয়েটকে দাঁড় করানোর কাজ শুরু করতে পারি। ডেট্রয়েটকে একটি স্থিতিশীল ও সংহত শহরে পরিণত করার একমাত্র সম্ভাব্য পথ হচ্ছে এটিকে দেউলিয়া ঘোষণা করে এর সুরক্ষা দেয়া। তবে দেউলিয়া ঘোষণার ফলে পরিস্থিতি অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে, বিশেষ করে মিউনিসিপ্যালে কর্মীরা কর্মহীন হয়ে পড়বে, সম্পদ বিক্রি হয়ে যাবে এবং ইতোমধ্যে জরাজীর্ণ হয়ে পড়া মৌলিক সেবা দান ও আপাতত বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ বছরের প্রথম দিকে স্লাইডার দেউলিয়া অবস্থার প্রেক্ষাপটে শহরটির আর্থিক দিক পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কেভিন ওরকে জরুরি ব্যবস্থাপক নিয়োগ করেছিলেন।
গত মাসে ডেট্রয়েট ঋণ পরিশোধ বন্ধ করে দেয় এবং জরুরি ব্যবস্থাপক ঋণদাতাদের কাছে পরিত্রাণ কামনা করেন। সিটির কর্মীরা যাতে অবসর ভাতা থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য তারা একটি মামলা দায়ের করেছে। ডেট্রয়েটকে আর্থিক পুনর্গঠনের অনুমতি দেয়া হবে কি না এ ব্যাপারে এখন সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার ফেডারেল আদালতের হাতে।
দেউলিয়া সংক্রান্ত ব্যাপারের আইনজীবী মাইকেল সুইট বলেন, সিটি কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারবে এর বাইরে আর কোন খরচ করতে পারবে না। কাউকে ইচ্ছা করলেই বেতন দেয়া বন্ধ করা যাবে না। তারা যদি চাপ্টার ৯-এর আওতায় থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মামলাও করতে পারবে না। যেসব কারণে ডেট্রয়েটের আর্থিক পরিস্থিতি এই দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে স্লাইডার তার একটি তালিকা দিয়েছেন।
গত ৪০ বছরের মধ্যে খুনের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। পুলিশকে ডাকার গড়ে ৫৮ মিনিটের মাথায় তাদের সাড়া পাওয়া যায়। অথচ জাতীয় পর্যায়ে এই সাড়া দানের গড় হার ১১ মিনিট। শহরে ৭৮ হাজার বাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। রাস্তার শতকরা ৪০ ভাগ বাতিই অকেজো। রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের মতো অর্থ না থাকায় নগরীর এক-তৃতীয়াংশ এ্যাম্বুলেন্স অচল এবং পুলিশের যানবাহন ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো খুবই জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। ডেট্রয়েটের প্রতি এক ডলারের মধ্যে প্রয়ে ৩৮ সেন্ট চলে যায় ঋণ পরিশোধ ও অবসর ভাতার মতো বাধ্যতামূলক দেয় খাতে। ২০১৭ সালে এসব খাতে প্রতি ডলারের মধ্যে ৬৫ সেন্ট চলে যাবে।
সিটির ট্যাঙ্কের হার সর্বোচ্চ আইনগত সীমানায় পৌঁছেছে। কেভিন ওরের টিম বলেছে, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য সেবা খাতের ব্যয় নির্বাহে ডেট্রয়েটের গ্যারান্টিহীন আড়াই হাজার কোটি ডলার দেনা রয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নগরীর ১০ হাজার কর্মীর বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ছাড় করা বৃত্তের অর্থের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।