হোয়াইট হাউসে বাংলাদেশী সালিমা
চরম প্রতিকূলতাকে পরাস্ত করেছেন বাংলাদেশী মেয়ে সালিমা মোস্তাফা। বাংলাদেশ থেকে তিনি নিজের স্থান করে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে। সেখানে তিনি ইন্টার্নশিপ করছেন। হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্সিয়াল পারসোনাল-এ তিনি গত সেপ্টেম্বর থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। স্টাফদের পরিচয় শনাক্ত করা, নিয়োগ দেয়া, সরকারি বিভিন্ন বিভাগে ও এজেন্সিতে নিয়োগের জন্য প্রার্থীদের ওপর তত্ত্বতালাশ করা তার কাজ। তার পিতা এন এম মোস্তাফা। মা শাকিলা বানু। মেয়ে হোয়াইট হাউসে ইন্টার্নশিপ পেয়েছেন এ কারণে মোস্তাফা পরিবারে আনন্দের শেষ নেই। তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর এটাই তাদের জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া।
এনএম মোস্তাফা বলেন, এ জন্য আমরা অত্যন্ত খুশি। আল্লাহকে ধন্যবাদ। আমরা সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। এটা সবার জন্য একটি সুসংবাদ। কিন্তু বাংলাদেশের মেয়ে হোয়াইট হাউসে ইন্টার্নশিপ পাওয়ায় সবার মতোই খুশি রাটগারস ইউনিভার্সিটি-ক্যামডেনের স্টুডেন্ট সাপোর্ট বিষয়ক প্রশাসক পামেলা ক্লার্ক।
তিনি বলেছেন, সালিমা খুব খুশি। কারণ, এটা এক বিস্ময়কর পাওয়া। কিন্তু সমস্যা হলো- এ ইন্টার্নশিপ করার সময় সে বেতন পাবে না। এ দায়িত্ব অবৈতনিক। তার জন্য সমস্যা হলো তাকে বাড়িভাড়া দিয়ে থাকতে হবে। খাবার জন্য অর্থ খরচ করতে হবে। ফলে তার পরিবার এ সংবাদে খুশি হলেও এক্ষেত্রে তারা উদ্বিগ্ন, তার খরচ মিটাবেন কিভাবে তা নিয়ে। মোস্তাফা পরিবারের হোয়াইট হাউস যাত্রা শুরু ২০০৪ সালে। ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের ডাইভারসিটি কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায় তাদের পরিবার। সেখানে গিয়ে তারা এক বছর অবস্থান করেন আটলান্টায়। তারপর বারিলিংটন কাউন্টির লুম্বারটনে চলে যান তারা। ২০০৮ সাল থেকে তারা বসবাস করছেন ক্যামডেন কাউন্টির বার্লিন টাউনশিপের ওয়েস্ট বার্লিনে। এরপর ২০১২ সালে ৪ সদস্যের এই পরিবারটি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পায়। কিন্তু এ পরিবারটিকে দিন পার করতে হয় কঠিন সঙ্কটের মধ্য দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে তারা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন। এনএম মোস্তাফার তখনও যুক্তরাষ্ট্রে তেমন কারও সঙ্গে পরিচয় হয়নি।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এসে আমাদের যে কি পরিমাণ সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়েছে তা ভাষায় ব্যক্ত করা যাবে না। আমার কোন কাজ ছিল না। আমাদের থাকার জায়গা ছিল না। কোন অর্থ ছিল না। সন্তানদের অর্থ দিতে পারিনি। অনেক সময়ই রাতের খাবার দিতে পারিনি পরিবারকে। আবার কখনও একেবারেই খাবার থাকতো না। আমি তখন ওয়াশিংটন বা মেরিল্যান্ডের কিছুই জানি না। আমার কোন আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত কেউ ছিল না। এ অবস্থায় আমি হতাশ হয়ে পড়ি। এ সময় এনএম মোস্তাফা নিউ ইয়র্কে এক বন্ধুকে ফোন করেন। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তার ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বাংলাদেশী ওই রাষ্ট্রদূত পরে তার এক বন্ধুকে ফোন করেন ওয়াশিংটনে। তিনিই এনএম মোস্তাফার পরিবারের জন্য একটি থাকার জায়গা করে দেন। ওদিকে সংসার চালাতে যখন হিমশিম অবস্থা তখন শাকিলা বানু ওয়াল-মার্টে একটি চাকরি নেন। সেখানে তিনি দু’ শিফটে চাকরি করতে থাকেন। রাতে ও দিনে সমানে খাটেন। এমন অবস্থায় পরিবারের হাল ধরার চেষ্টা করেন মেয়ে সালিমা মোস্তাফাও। তিনি আন্ডারগ্র্যাজুয়েটের গবেষণায় যাওয়ার আগে নিজে কাজ করেছেন ওলিভ গার্ডেন নামে একটি স্টোরে ও ওয়াল-মার্টে। এ কথা বলেছেন সালিমা মোস্তাফার ভাই মোস্তাফা মোসাব্বির। সালিমা তাকে যখন ফুটবল খেলা ও স্কুলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়ার জন্য গাড়ি চালিয়ে নামিয়ে দিয়ে আসতেন তখন ভাইকে কিনে দিয়ে আসতেন খাবার, যাতে পিতা-মাতার খরচ বাঁচে। এছাড়াও পরিবারের খরচ যোগাতেও তিনি অর্থ দিয়েছেন। এরপরই সালিমা বাসায় ফিরতেন। রাতে পড়াশোনা করেন ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা। মোসাব্বির বলেছেন, সে বেশির ভাগ সময়ই ঘরের ভিতর থাকে। কারণ, সে জানে আমার পিতা-মাতার অবস্থা। বাইরে বেরুলেই টাকা খরচ। সালিমা মোস্তাফা মূলত বিজ্ঞানের ছাত্রী। তিনি ইন্টার্নশিপ পাওয়ার আগে মেডিকেল স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি এ ইন্টার্ন করার সুযোগ পেয়ে যান। তিনি বলেছেন, জনসেবার বিষয়ে শিক্ষা নেয়ার জন্য এই ইন্টার্নশিপ তার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সুযোগ। সালিমা মোস্তাফা বলেন, ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেয়ার বিষয়ে স্বপ্ন দেখেছি। সব সময় আমার প্রিয় বিষয় বিজ্ঞান। তাই আমার মূল লক্ষ্য একজন ডাক্তার হওয়া। আমি জনগণ ও জনস্বাস্থ্য সম্পর্কে শিক্ষা নিতে ইন্টার্নশিপ কর্মসূচিতে আবেদন করেছি। মেডিকেল স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন করার পর আমি একজন স্বাস্থ্য পরামর্শক হতে চাই। হোয়াইট হাউসে যারা কাজ করেন তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নেয়াই আমার লক্ষ্য। একজন চিকিৎসকের চেয়েও বুদ্ধিদীপ্ত কোন শিক্ষা অর্জনের জন্যও এ কর্মসূচি আমাকে সহায়তা করবে।