ভোট চুরি করে ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছা আমাদের নেই : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভোট চুরি করে ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছা আমাদের নেই। তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনা করবেন নির্বাচন কমিশন। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবো। বিরোধী দলের উদ্দেশে ‘সর্বদীলয়’ সরকারে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোন কোন মন্ত্রণালয় চান আমরা সে বিষয়ে বিবেচনা করবো। নবম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
বুধবারই শেষ হচ্ছে নবম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশন। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির আদেশ স্পিকারের হাতে এসেছে। বুধবার সংসদ অধিবেশনে একথা জানান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর স্পিকার প্রধানমন্ত্রীকে সমাপনী বক্তব্য দেয়ার আহ্বান জানান। রাত সাড়ে ৭টায় তিনি বক্তব্য শুরু করেন।
বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নবম জাতীয় সংসদের সমাপনী অধিবেশন আজ। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচন সামনে চলে এসেছে। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করে নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা বলেছি। রাষ্ট্রপতি আমাকে নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন। তিনি আমাকে অনুমতি দিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করা হয়েছে। আগামীকাল দফতর বণ্টনের গেজেট প্রকাশ হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মৌলিক বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না। বিরোধী দলের উদ্দেশে ‘সর্বদীলয়’ সরকারে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন কোন মন্ত্রণালয় চান আমরা সে বিষয়ে বিবেচনা করবো।
তিনি বলেন, ভোট চুরি করে ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছা আমাদের নেই। নির্বাচন পরিচালনা করবেন নির্বাচন কমিশন। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করবো। তিনি বলেন, আমি বিরোধীদলকে অনুরোধ করেছি- নির্বাচন নিয়ে কোনো রকমের সন্দেহ না রেখে এগিয়ে আসার জন্য। বিরোধীদল আমারে ডাকে সাড়া দেয়নি। জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি দল সাড়া দিয়েছে। বিরোধীদল এলেও তাদের আমরা দায়িত্ব দিতাম। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমরা বিরোধীদল থেকে কোনো রকমের সাড়া পাচ্ছি না।
তিনি বলেন, আমাদের সময়ে প্রায় ছয় হাজার নির্বাচন হয়েছে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে। নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী বলে তা করতে সক্ষম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ভোটের জন্য বারবার আন্দোলন করতে হবে এটা যেন না হয়- এজন্য জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা সংসদীয় কমিটি করি। তারা ২৭টি সভা করে দেশের গণ্যমান্যদের সাথে আলোচনা করে সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে আসি। দেশের মানুষ যেন বারবার কষ্ট না করতে হয়। আমরা এমন একটা ব্যবস্থায় দেশকে নিয়ে আসতে চাই। সংবিধান মোতাবেক জনগণ তাদের অধিকার ভোগ করবে। সেজন্য আমরা সংবিধান সংশোধন করেছি। তিনি বলেন, আজ সংসদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর সাংবিধানিকভাবে সংসদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন পূর্বে নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত সংসদ বহাল থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি মন্ত্রিসভা গঠন করেছি। তা আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) গেজেট আকারে প্রকাশ হবে। এ মন্ত্রিসভা কোনো রকমের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা চলবে। শেখ হাসিনা বলেন, অতীতে ক্ষমতা ছাড়ার সময় নানা সংকট হয়েছে। ১৯৭৫ সালের পর এই ৩৮ বছরে মাত্র একবার শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। এ ছাড়া আর কখনো সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়নি। এটা জাতির জন্য দুঃখজনক। হিসাব অনুযায়ী, আগামী ২৪ জানুয়ারি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সংসদের আর কোনো অধিবেশন বসবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থা রেখে যেতে চাই। যেটা মানুষের অধিকার, তার জন্য কেন মানুষকে রক্ত দিতে হবে? পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়, সেভাবে আমাদের দেশেও হবে। আমরা চাই না, আর অসাংবিধানিকভাবে যেন ক্ষমতা পরিবর্তন হোক। এ দেশের নাগরিকদের জন্য সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পন্থা রেখে যেতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিরোধীদলীয় নেতাকে ফোন দিয়েছিলাম। দুপুর একটা থেকে তাকে ফোন করা শুরু করি। উনাকে রাত নয়টায় পেয়েছি। এরপর তার সাথে যে কথা হয়েছে, তা জাতি জানে। উনি আমাকে যা বলেছেন, তা শুনে যে ধৈর্য আমি দেখিয়েছি এ জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। আমি ফোন করে হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানালাম। উনি তা শুনলেন না।