যাত্রা ‘শেষ’ করল নবম সংসদ

Sangsadশেষ বারের মতো অধিবেশনে বসলেন ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ীরা; ‘জরুরি’ পরিস্থিতি না হলে আর বসবে না নবম সংসদ। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে ধারণার চেয়ে এক মাস বেশি সময় গড়ায় নবম সংসদের ১৯তম অর্থাৎ শেষ অধিবেশন। বুধবার রাতে এই অধিবেশনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির কথা জানান অধিবেশনে সভাপতিত্বকারী দেশের প্রথম নারী স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
এই সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পড়ে শোনান তিনি; কেননা সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী সংসদের অধিবেশন আহ্বান ও সমাপ্তি ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি।
অধিবেশন শেষ হলেও সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের বলে বহাল থাকবে নবম সংসদ। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করা এই সংসদের মেয়াদ ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত রয়েছে। আর এর মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন করতে হবে।
এক নজরে নবম সংসদ
নবম জাতীয় সংসদে মোট কার্যদিবস ছিল ৪১৮, যা দেশের সংসদীয় ইতিহাসে রেকর্ড। বিল পাসের ক্ষেত্রেও এ সংসদ রেকর্ড করেছে, মোট পাস হওয়া বিলের সংখ্যা ২৭১।
অন্য যে কোনো সংসদের চেয়ে এবারের সংসদে বিরোধী দলের বর্জন ছিল রেকর্ড পরিমাণ। এ সংসদে বিরোধী দল অনুপস্থিত ছিল ৩৪২ কার্যদিবস, উপস্থিত ছিল ৭৬ কার্যদিবস।
আর বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন ১০ দিন। এ সংসদেই বিরোধীদলীয় নেতা গত ২০ মার্চ ১ ঘণ্টা ৫৭ মিনিট বক্তব্য দেন, যা সংসদীয় ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
গত ১৮তম অধিবেশন পর্যন্ত নবম সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতি ছিল ৩২২ দিন।
সবচেয়ে বেশি কার্যদিবস ছিল প্রথম ও চতুর্থ অধিবেশনে ৩৯ কার্যদিবস। আর ১০ম অধিবেশন স্থায়ী হয়েছিল মাত্র চার কার্যদিবস।
সংসদ সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সংসদীয় ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের পর পঞ্চম সংসদে (১৯৯১-১৯৯৫) প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ২৬৫ কার্যদিবসের মধ্যে ১৩৫দিন সংসদের বাইরে ছিল।
সপ্তম সংসদের (১৯৯৬-২০০১) বিরোধী দল বিএনপি ২১৯ কার্যদিবসের মধ্যে ১৬৩ দিন সংসদের বাইরে ছিল। আর অষ্টম সংসদের (২০০১-২০০৬) বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ৩৭৩ কার্যদিবসের মধ্যে ২২৩ দিন বাইরে ছিল।
বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা পঞ্চম সংসদে উপস্থিত ছিলেন ১৩৫ দিন, আর অষ্টম সংসদে ৪৫ দিন।
অন্যদিকে খালেদা জিয়া বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে সপ্তম সংসদে ছিলেন ২৮ দিন।
বিরোধী দল সংসদে অধিকাংশ দিন না থাকলেও সরকারি দলের সদস্যরাই সরকারের সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিভিন্ন সময়। সরব ছিলেন একমাত্র সংসদ সদস্য ফজলুল আজিমও।
নবম জাতীয় সংসদেই দেশের প্রথম নারী স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হন শিরীন শারমিন চৌধুরী। গত ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এই সাংসদ স্পিকার হিসেবে নির্বাচিত হন।
নবম সংসদেই অশালীন বক্তব্যের ব্যবহার দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দেয়, এজন্য মাইক ব্যবহারের ক্ষমতার প্রয়োগ করতে হয় স্পিকারকে অনেকবার।
বর্তমান সংসদে পাস হওয়া উল্লেখযোগ্য আইনগুলোর মধ্যে রয়েছে: ঢাকা সিটি কর্পোরশেন দ্বি-খণ্ডিত করে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (সংশোধন) ২০১১, দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) বিল, গ্রামীণ ব্যাংক বিল, রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে তিন বছরের বিধান বাধ্যতামূলক থাকার বিধান তুলে দিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) (সংশোধন) বিল, সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯, তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯,  ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধন) আইন ২০০৯, ২০১০ (মুক্তিযোদ্ধাদের চাকুরীর বয়স বৃদ্ধি),  পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন, ২০১০।
এই নবম জাতীয় সংসদেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা প্রসঙ্গে একটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গঠন করা হয়।
দেশের সংসদীয় ইতিহাসে এবরাই প্রথম অধিবেশনে সবগুলো সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়। গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৫১টি সংসদীয় কমিটি মোট ২ হাজার ১৬টি বৈঠক করেছে। এসব কমিটিগুলো সাব-কমিটি গঠন করেছিলো ১৮২টি। যার বৈঠক হয়েছে ১৮২টি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button