বামপন্থী নাস্তিকরা হেফাজতের বিরুদ্ধে নারী সমাজকে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছে
পবিত্র ইসলাম ধর্মে নারীদের যথাযথ ন্যায্য অধিকার দেয়া হয়েছে। নারীরা যখন সবচেয়ে বেশি অবহেলিত ও নির্যাতিত ছিল, ইসলাম তখন তাদের সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছে। ইসলাম নারীদের কোনো ভারবাহী কষ্টসাধ্য কাজের দায়িত্ব দিতে চায় না। শ্রমনির্ভর ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজের ব্যাপারে নারীদের নিরুত্সাহিত করে বরং পুরুষদের এসব কাজ আঞ্জাম দিতে বলেছে। নারীদের নিরাপদ চলাচল ও নিরাপত্তার জন্য ইসলামে পর্দার বিধান আবশ্যকীয় করা হয়েছে। স্বাধীন মতপ্রকাশ থেকে শুরু করে নিরাপদ পরিবেশে পর্দা মেনে শিক্ষা ও গবেষণাসহ ইসলামে নারীদের জন্য ন্যায্য সব অধিকারই দেয়া হয়েছে। নারীদের এসব সমস্যার প্রতি লক্ষ্য করেই হেফাজতে ইসলাম ১৩ দফা দাবির ৪নং দফায় নারীদের অধিকার ও স্বার্থ নিয়ে কথা বলেছে। হেফাজতের ৪নং দফায় বলা হয়েছে, দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য নারী জাতির সার্বিক উন্নতির বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে তাদের নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মস্থল, সম্মানজনক জীবিকা এবং কর্মজীবী নারীদের ন্যায্য পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরে-বাইরে ও কর্মস্থলে নারীদের ইজ্জত-আব্রু ও যৌন হয়রানি থেকে বেঁচে থাকার সহায়ক হিসেবে পোশাক ও বেশভূষায় শালীনতা প্রকাশ ও হিজাব পালনে উদ্বুদ্ধকরণসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, এবং একই লক্ষ্যে নারী-পুরুষের সব ধরনের বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে অবাধ ও অশালীন মেলামেশা, নারী-নির্যাতন, যৌন হয়রানি, নারীর বিরুদ্ধে সব ধরনের সহিংসতা, যৌতুকপ্রথাসহ যাবতীয় নারী নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা কঠোর হাতে দমন করতে হবে। গতকাল উত্তর চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারী পৌরসভা মিরেরহাট শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এক বিশাল ইফতার ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্ত্যবে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী উল্লিখিত অভিমত ব্যক্ত করেন।
হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রবীণ মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ শামসুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিলে নানুপুর ওবাইদিয়া মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস আল্লামা শেখ আহমদ, দারুল উলূম হাটাহাজারী মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মুফতি জসীমউদ্দীন, মাওলানা ইয়াহ্ইয়া, মাওলানা আহমদ দীদার, হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, হেফাজত আমিরের প্রেসসচিব মাওলানা মুনির আহমদ, মাওলানা হাফেজ মুহাম্মদ ইসমাঈল, মাওলানা হাব্বুিল্লাহ আজাদীবাজার, মাওলানা শফিউল আলম, হেফাজতে ইসলামের অর্থ-সম্পাদক মাওলানা কাতেব ইলিয়াছ ওসমানী, মুফতি হারুন ইজহার, মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাঈল খান ফয়জী, মাওলানা ক্বারী মামুনুর রশীদ, মাওলানা আবুল ফয়েজ, মাওলানা শোয়াইব, মাওলানা হাবীবুল্লাহ নদভী, মাওলানা জাফর আহমদ, মাওলানা জাকারিয়া ফয়জী, মাওলানা আলমগীর মাস্টার মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ, এসএম ফারুক, মাওলানা হাবীবুল হক বাবু, মাওলানা জাহাঙ্গীর মেহেদী, মাওলানা সফিউল্লাহ, মাওলানা জোনায়েদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী আরও বলেন, হেফাজতে ইসলামের চলমান আন্দোলন কোনো গদি ও ক্ষমতা দখলের আন্দোলন নয়। ইসলামের শত্রু বামপন্থী নাস্তিকরা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে নারীসমাজকে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু এদেশের নারীসমাজ ভালোভাবেই জানে, কারা তাদের অধিকারের ফাঁকা কথা বলে ধোঁকা দিতে চাচ্ছে।
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী গল্প, উপন্যাস, নাটক-সিনেমা, টেলিভিশন ও বিজ্ঞাপনচিত্রে নারীদের খোলামেলা ও ভোগ্যপণ্যের মতো উপস্থাপনের জোর প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, ঘরে-বাইরে, অফিসে, রাস্তায়, বাজারে আজ নারীরা নানা নিগ্রহ ও হয়রানির শিকার। ইভটিজিং, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে এদেশের কালচার ও ধর্মীয় বিশ্বাসকে সম্মান জানিয়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে হবে। হিজাব বা শালীনতার সঙ্গে নারীদের নিরাপদ পথ চলাচল, শিক্ষার্জন ও কর্মক্ষেত্রে যেতে কোনো বাধা নেই। উদাহরণস্বরূপ নারীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য আলাদা বালিকা বিদ্যালয় বা মহিলা কলেজ থাকতে পারলে আলাদা কর্মক্ষেত্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে আপত্তি তোলার যুক্তি থাকতে পারে না।
হাটহাজারী ওলামা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, হাটহাজারী পৌর হেফাজতের সভাপতি মাওলানা মীর ইদরিসের পরিচালনায় ইফতারপূর্ব মাহফিলে ওলামা-মাশায়েখ ও নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুহাম্মদ হোসাইন, হাফেজ বশীর আহমদ, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস, মাস্টার মুহাম্মদ শফিউল আলম, মুহাম্মদ হোসেন, হায়াত দৌলত, মাওলানা আবুবকর, মাওলানা কামরুল ইসলাম, মাওলানা মীর জুনায়েদ, মাওলানা আনাস জমিরী, ইসহাক আলী, মাওলানা নূরুল হক, আতিকুল ইসলাম, রাশেদ ও মুহাম্মদ উল্লাহ প্রমুখ।
এতে হাজার হাজার রোজাদার সাধারণ মুসল্লি, ছাত্র-শিক্ষক, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন পেশার মানুষ, সাংবাদিক, মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষক ও ওলামা-মাশায়েখ অংশগ্রহণ করেন। ইফতার মাহফিল উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে বেলা ২টা থেকেই জমায়েত শুরু হয়। এ সময় ওলামা-মাশায়েখ ও ইসলামী নেতারা উপস্থিত তৌহিদি জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
ইফাতারের আগে হেফাজত ইসলামের মহাসচির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী দেশ ও জাতির উন্নতি, শান্তি, আজাব-গজব থেকে মুক্তি এবং দেশে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন।