শান্তি আলোচনা নিয়ে চুক্তি ইসরাইল-ফিলিস্তিনের
তিন বছর ধরে থেমে থাকা ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। জর্ডানে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা শুরু হবে ওয়াশিংটনে।
কেরি জানিয়েছেন, সরাসরি শান্তি আলোচনার জন্য গত তিন বছরে এই প্রথমবারের মতো দুই দেশ একটি মতৈক্যে পৌঁছেছে। এ লক্ষ্যে তারা একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। দু’পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে যে মতপার্থক্য ছিল তার একটা নিষ্পত্তি হবে এমনটা আশা করছেন তারা। কেরি বলেন, শান্তির পথে এটি এক অগ্রগতি। তবে তিনি সতর্কতার সঙ্গে এও বলেন, শান্তি আলোচনার বিষয়ে চুক্তিটি ধীরে ধীরে আনুষ্ঠানিক হচ্ছে। তবে পুরো বিষয়টি আশার সঞ্চার করেছে।
জন কেরি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সবাই জানেন বিষয়টি সহজ নয়। এটা যদি সহজ হতো তাহলে বহু আগেই আলোচনা শুরু হয়ে যেত। তবে কেউ এটা বিশ্বাস করে না, বিবদমানদের মধ্যকার মতপার্থক্য রাতারাতি সব মিটে যাবে। কিংবা সব মুছে ফেলা যাবে। আমরা জানি সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার দিন আসছে। তবে আজকে আমি বলতে পারি আমি আশাবাদী। সংবাদ সম্মেলনের আগে দু’পক্ষের সঙ্গেই কেরি বৈঠক করেন। ফিলিস্তিনের প্রসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে নতুন করে আরেক দফা আলোচনা শেষ করে শুক্রবার জর্ডানের আম্মানে ফিরে আসার পর এ ঘোষণা দিলেন। পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলি বসতি তৈরিকে কেন্দ্র করে তিন বছর আগে শান্তি আলোচনা ভেস্তে যায়। এখন শান্তি আলোচনায় ইসরাইলের নেতৃত্ব দেবেন আইনমন্ত্রী জিপি লিভনি। তিনি বলেছেন শান্তি আলোচনার বিষয়টি সহজ হবে না। অপরদিকে ফিলিস্তিনের উগ্রবাদী গোষ্ঠী ও গাজার নিয়ন্ত্রক হামাস বলছে, শান্তি আলোচনায় ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ফিলিস্তিনের জনসাধারণের প্রতিনিধিত্ব করার গ্রহণযোগ্যতা নেই।
মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া পুনরায় শুরুর চূড়ান্ত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে জন কেরি শুক্রবার দিনের প্রথমভাগে ফিলিস্তিনের প্রধান মধ্যস্থতাকারী সায়েব ইরাকাতের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর তার ওয়াশিংটন ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি তার সফরসীমা আরও বাড়িয়েছেন।
দায়িত্ব নেয়ার পর মি. কেরি ছয়বার মধ্যপ্রাচ্য সফর করেন। কিন্তু কিভাবে এতখানি অগ্রগতি আনতে সক্ষম হলেন তার বিস্তারিত তিনি প্রকাশ করেননি।
এদিকে এ শান্তি আলোচনার ব্যাপারে আরব লিগও কেরিকে সমর্থন জানিয়েছে। তবে এরপরও কেরিকে হতাশ হতে হবে বলে বিবিসি জেরুজালেম প্রতিনিধি জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে টেলিফোনে ফিলিস্তিনের সঙ্গে সমস্যা যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করে নেয়ার কথা বলেছেন বলে হোয়াইট হাউস সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান বলেছেন, দখলদার ইসরাইলের কারণে আলোচনার মার্কিন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। তিনি বলেন, দখলদার ইসরাইল অতীতে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা লঙ্ঘন করেছে। এ অবস্থার অবসান না হওয়া পর্যন্ত আলোচনা সফল হবে না। আমির আবদুল্লাহিয়ান বলেন, ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইল যত প্রতিশ্রতি দিয়েছে, তার একটিও মেনে চলেনি।
এ কারণেই ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পেতে প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ফিলিস্তিনি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা ইসরাইলের মিথ্যা প্রতিশ্রুতিগুলোর ওপর আস্থা না রেখে জনপ্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিন।
ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আলোচনা আবার শুরু হতে যাচ্ছে বলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ঘোষণা দেয়ার পর ইরানের পক্ষ থেকে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হলো।
গতকাল জন কেরি বলেছেন, আগামী এক সপ্তাহে ওয়াশিংটনে প্রাথমিক আলোচনা শুরু হবে। শান্তির পথে এটি একটি অগ্রগতি।
তার মতে, বিষয়টি সহজ নয়। সহজ হলে অনেক আগেই আলোচনা শুরু হতো। দু’পক্ষের মধ্যে মতভেদ রাতারাতি দূর হবে না। সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার দিন আসছে। ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করে ইসরাইল ইহুদিবাদীদের জন্য ঘরবাড়ি নির্মাণ অব্যাহত রাখায় এর আগে ফিলিস্তিন আলোচনা থেকে সরে এসেছিল।