২০২৭ সালে মধ্যম আয়ে পরিণত হবে বাংলাদেশ : আঙ্কটাড
স্বল্পোন্নত থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে বাংলাদেশের ২০২৭ সাল লাগবে বলে জাতিসংঘের উন্নয়ন ও বাণিজ্যবিষয়ক সংস্থার (ইউএনসিটিএডি) প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে। অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা দেশের সার্বিক উন্নয়নকেও বাধাগ্রস্ত করছে রিপোর্টে বলা হয়। চলতি বছর ৪৯টি স্বল্পোন্নত দেশের ওপর জরিপের ভিত্তিতে এমন তথ্য দিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মেলন কক্ষে স্বল্পোন্নত দেশের ওপর আঙ্কটাডের রিপোর্ট প্রকাশ উপলক্ষে বাংলাদেশে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডি’র গবেষণা প্রধান ড. ফাহমিদা হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিপিডি’র গবেষক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন। প্রতিবেদনে উপস্থাপনকালে ফাহমিদা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যেসব শর্ত পূরণ করা প্রয়োজন তার প্রায় সবগুলোই ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চহার এখনও কমানো সম্ভব না হলেও ২০২৭ সালের মধ্যে তা যখন ১ শতাংশে নেমে আসবে, তখন দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। দেশকে মধ্যম ও উন্নত আয়ের দেশে পরিণত করতে স্থিতিশীল রাজনীতির বিকল্প নেই উল্লেখ করে সিপিডি জানায়, মধ্যম ও উন্নত আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে দেশীয় সহ বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। তবে দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে দেশে এই ধারা ভেঙে পড়বে। এতে দেশ বিনিয়োগ হারাবে, কর্মসংস্থান কমে যাবে। ফলে দারিদ্র্য হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। তাই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে এখনই সমঝোতায় আসা উচিত। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, স্বল্পোন্নত ৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেকটা ভাল। তবে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যে হারে রয়েছে তার তুলনায় কর্মসংস্থান অনেক কম। বাংলাদেশের বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে না পারলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এ হার টেকসই হবে না। গত তিন বছরে বাংলাদেশে জনসংখ্যার কর্মক্ষেত্রের হিসাব অনুযায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়নি। বাংলাদেশে ৫০ শতাংশ মানুষ কৃষি পেশার সঙ্গে জড়িত হলেও এ খাতে দেশের অর্থনীতির অবদান ২০ শতাংশ। বাকি ৩০ শতাংশ লোকের অর্থনীতিতে কোন প্রভাব নেই। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সেবা খাতের অবদান ৫০ শতাংশ হলেও তা আধুনিক মানের নয়। ফাহমিদা বলেন, বিশ্বের অন্যান্য স্বল্প উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের বিষয়টি অনেক পিছিয়ে। বিশ্বে সেবার মান বৃদ্ধির কারণে মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাচ্ছে যার ফলে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। আগামী ২০-২৫ বছরের মধ্যে প্রতি ৪ জন মানুষের মধ্যে একজন কর্মক্ষম হয়ে যাবে বলেও তাদের রিপোর্টে উঠে আসে। আর এ বর্ধিত কর্মক্ষম মানুষের জন্য ব্যক্তি খাতে বেশি বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে না পারলে অর্থনীতি থমকে দাঁড়াবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ গ্রামে বাস করে কিন্তু সে তুলনায় গ্রামে কর্মসংস্থান নেই। আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে স্বল্প উন্নত দেশের তালিকা থেকে বের করে নিয়ে আসতে হলে গ্রামীণ উন্নয়ন ও সেখানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামীণ পর্যায়ে নতুন নতুন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। শহরের ন্যায় গ্রামেও সামষ্টিক অর্থনৈতিক জোন তৈরি করতে হবে। রিপোর্টে বলা হয়, বৈদেশিক রেমিটেন্স অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্বল্প উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে বর্তমানে জনশক্তি রপ্তানি নিম্নমুখী হওয়ার কারণে এটাও কমে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। গত তিন বছর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে মানুষের কর্মক্ষেত্রের সুযোগের তুলনায় কৃষিক্ষেত্রে অবদান অনেক কমে এসেছে। তবে শিল্পখাতে কিছুটা বেড়েছে। বিগত কয়েক বছর নারীদের অংশগ্রহণ বাড়লেও তা শুধুমাত্র অনানুষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে প্রতীয়মান হয়েছে। ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় যে হারে বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে আগমী ২০২৭ সালে বাংলাদেশ স্বল্প উন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে। তবে এ জন্য দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুকূলে থাকতে হবে।