মার্কিন কংগ্রেসের শুনানি একতরফা : বাংলাদেশ সরকার
মার্কিন কংগ্রেসের এক শুনানিতে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক সঙ্কট, ক্রমবর্ধমান সহিংসতা, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা আর সন্ত্রাসবাদের উত্থানের আশঙ্কা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পর তার সমালোচনা করেছে বাংলাদেশ সরকার।
সরকার বলছে, একতরফাভাবে এই শুনানি করা হয়েছে এবং এতে পুরো বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়নি। তবে বিরোধী দল বিএনপি বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে মার্কিন কংগ্রেসের এই মূল্যায়নকে ইতিবাচক হিসেবেই বর্ণনা করছে। ‘বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ’-এই শিরোনামে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিষয়ক একটি কমিটির শুনানিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া এবং সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনাসহ কয়েকটি বিষয় এসেছে। তবে এতে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধান দুই দলের অনড় অবস্থান এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার মনে করছে, একতরফাভাবে এ শুনানি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, এ ধরণের শুনানি হওয়াটা আমাদের জন্য যেমন সুখকর নয়। তেমনি বলব, হয়তো কোনো একটি বিশেষ লবিং গ্রুপ এর পেছনে রয়েছে। বিপর্যয়ের মুখে তো আমরা নই।
এইচ টি ইমাম মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিষয়ক ওই কমিটির উদ্বেগ থাকতে পারে। কিন্তু শুনানিতে যাদের ডাকা হয়েছিল, তাদের অনেকেই নিরপেক্ষ নন বলে তাদের ধারণা। কিন্তু রাজনৈতিক অচলাবস্থা বা পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশ সরকার বা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপরই দায় বর্তায়, এমনটাই ওই শুনানিতে বলা হয়েছে। এর জবাবে ইমাম বলেন, “এ ধরণের বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, যুক্তরাষ্ট্রে লবিষ্ট নিয়োগ করা যায়। অনেকে বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী প্রচুর অর্থ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে লবিষ্ট নিয়োগ করেছে। যারা শুনানি বা এ ধরণের প্রভাব খাটানোর বিষয়গুলোর পিছনে থাকছে।”
তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের ওপর এই শুনানির তেমন কোন প্রভাব নেই।” এর কারণ হিসেবে তিনি তুলে ধরেছেন, মার্কিন কংগ্রেসে বহু বিষয়েই শুনানি হয়ে থাকে। মার্কিন কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপকমিটির স্টিভ শ্যাবোর্ট কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। এখন শুনানিতে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ থাকবে কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠা উঠে এসেছে। বিরোধী দল বিএনপির নেতাদের অনেকেই মনে করেন, বিষয়টা বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনদের উপর একটা চাপ তৈরি করতে পারে।
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, “সবাই যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা সমাধান চায়, তারই প্রকাশ ঘটেছে ওই শুনানিতে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের যে মনোভাব, তাতে তো সংলাপের কোনো আলামত আমরা পাচ্ছি না। যুক্তরাষ্ট্রে শুনানির বিষয়টি সরকারের গুরুত্ব দেয়া উচিত।”
এই শুনানি যখন হলো, সেই পটভূমিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়েই সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে। সেখানে বাংলাদেশের উপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষেধাজ্ঞাসহ নানান চাপ আসতে পারে বলে বলা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের অনেকেই বলেন, মার্কিন কমিটির শুনানিতে উঠে আসা তথ্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নীতিনির্ধারণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। এইচ টি ইমাম অবশ্য বলেন, শুনানির বিস্তারিত জানার পর বাংলাদেশ সরকার এবিষয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করবে। সূত্র : বিবিসি বাংলা