‘‘আমি দাড়াইয়া যামু আপনি বসাইয়া দিয়েন…’’
এনাম চৌধুরী:
যতটুকু জানি বা শুনেছি হোসেইন মুহম্মদ এরশাদ নামক ব্যক্তিটির জন্ম ভারতের কোন অঞ্চলে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই লোকটির কোন অবদান আছে বলেও এখন পর্যন্ত কাউকে কিছু বলতে শুনিনি। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর পদটপকানো জেনারেল হওয়ার সুবাদে রাতের আঁধারে ক্ষমতায় আসা উচ্চ বিলাসী এ লোকটি স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতাকে ধ্বংসের অন্যতম হোতাদের একজন। তার নোংরা বিলাসীতার কারনে দেশের মানুষ দীর্ঘ প্রায় দশটি বছর ছিলো চরম বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে। তার ক্ষমতার দাপটের কাছে নয় বছরেরও অধিক সময় দেশের মানুষ ছিলো স্বৈরশাসনের কঠিন যাতাকলে পীষ্ঠ। তার শাসন সময় সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে দেশের সুশীল সমাজ এবং বুদ্ধিজীবিরা কোনকালেই তাকে ভালো নৈতিকতা সম্পন্ন লোক হিসেবে বিবেচনা করেন নি বা আনেন নি। তার ব্যক্তি চরিত্র থেকে নৈতিক চরিত্র পুরোটাই ছিল চরম নষ্ঠ মানসিকতার এক বাস্তব উদাহরণ। তাই ক্ষমতায় আসার পর থেকে ক্ষমতার পতন, জেলে যাওয়া থেকে বের হওয়া, একাধিক বিবাহ থেকে সন্তান নিয়ে কোর্ট-কাচারী করা, সব কিছুতেই এরশাদের পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে একজন ‘বহুমুখী’ বন্য চরিত্রের মানুষ হিসেবে।
যার সকালের কথার সাথে দুপুরের, সন্ধ্যার কথার সাথে রাতের কথার কোন মিল নেই। আশির দশকে যে লোকটি বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় এসেছিলো, এখন প্রায় নব্বই বছর বয়সের প্রান্তে এসে সেই এরশাদকে নতুন চরিত্রের এক খলনায়ক হিসেবে দেখে রীতিমত বিস্মিত। নৈতিক চরিত্রের অধঃপতন দেখে যাকে এককালে ‘বিশ্ববেহায়া’ খেতাবে ভূষিত করেছিলো লোকজন, সেই লোকগুলো এখন আর লজ্জা বা অপমানজনক কোন গালিগালাজ না পেয়ে পুরানো ‘নোংরা খেতাব’ গুলোকেই সম্ভবত আওড়াচ্ছেন। ফেইসবুক, টুইটারসহ ভার্চুয়াল জগতে চলছে মহা তোলপাড়। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বেহায়া, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বেঈমান’- এমন গালিগালাজেই সীমাবদ্ধ নেই এরশাদের প্রাপ্তি ? ইতিহাসের ঘৃণ্য কুখ্যাতি পাওয়া ‘মীর জাফর’ নামটিও শেষ পর্যন্ত তার প্রাপ্তির ঝুলিতে যোগ হয়েছে।
বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর. ড. পিয়াস করিম সম্প্রতি একটি টেলিভিশন টকশোতে এরশাদ সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছিলেন ‘নিজের বিকৃত আনন্দ চরিতার্থ করার জন্য এমন কিছু নেই যে এরশাদ করতে পারে না।’ ড. পিয়াস করিমের এই বক্তব্যে সত্যতা বাংলাদেশের মানুষ বাস্তবে দেখলো।
বাংলাদেশের খ্যাতিমান শিল্পী পটুয়া কামরুল হাসান তার বিখ্যাত এক কার্টুনে লিখেছিলেন ‘দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে’ মরহুম শিল্পী পটুয়া কামরুল হাসান আজ যদি বেঁচে থাকতেন তবে তার সেই কার্টুন শিল্পকর্মে শেষ এবং পরম বাস্তবতাটুকু সত্যিকার অর্থে এবারই দেখতেন। বেশ ছোটবেলা একটি ওয়াজ মাহফিলে গিয়েছিলাম। তখন একজন মাওলানা হুজুর তার বক্তব্যে উদাহরণ দিতে গিয়ে ছোট একটি গল্প দিয়ে উদাহরণ দিয়েছিলেন। যে গল্পটি এখনো আমার মনে পড়ে।
গল্পটিছিলো এই রকম একগ্রামে একলোক চুরি করতো। তবে তার চুরির ধরণটি ছিলো একটি ভিন্ন ধরনের। চুরলোকটি মরালাশের ‘কাফন’ চরি করে নিয়ে যেতো। লোকটির এক সময় বয়স হলো এবং সে মৃত্যুর মুখোমুখী প্রায়। এমন সময় লোকটি তার একমাত্র ছেলেকে তার শয়নের কাছে ডেকে নিয়ে বললো, বাবা-আমি সারাজীবন কাফন চুরি পেশার সাথে জড়িত ছিলাম। তাই আমার একমাত্র সন্তান, তোকে আমার ঐতিহ্যটা বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আমার উত্তরাধিকারী হিসেবে তোকে এমন কাজ করতে হবে, যাতে সবাই বলে তুই আমার ‘মান রেখেছিস্ !’
লোকটি এক সময় মারা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে পিতার চুরি বিদ্যাকে বাঁচিয়ে রাখতে সে চুরি করা শুরু করে। পিতা যেভাবে মৃত্যু লোকের কাফন চুরি করতো ঠিক সেভাবেই সে কাফন চুরি করা শুরু করলো। তবে ছেলেটি পিতার চুরি বিদ্যার মান-মর্যাদা রক্ষায় একটা বিশেষ উপায় অবলম্বন করলো তার চুরি ধরনে। সে শুধু মৃত্যু লোকের কাফনই চুরি করতো না, লাশটা গাছের ডালে ঝুঁলিয়ে রাখতো। গ্রামের লোকজন বললো একোন মহা বিপর্যয় নেমে এলো ? তারা বলতে লাগলো মরে যাওয়া চুরটিতো অনেক ভালো ছিলো, কিন্তু তার কু-সন্তানটি বাপের চেয়ে ঘৃণ্য জঘন্য চরিত্রের চুরি পেশায় জড়িয়ে সবার জীবনকে বিষয়ে তুললো।
গল্পটা সেই ছোট বেলা শুনলেও বাংলাদেশের চলমান রাজনীতির কিছু চরিত্র এবং বয়স্কদের কাছ থেকে শুনা আমার জন্মের আগের কিছু রাজনীতিবীদের চরিত্রের বাস্তব রূপ দেখছি একুশ শতকের বাংলাদেশে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শাসনামলে যখন একদলীয় শাসন ‘বাকশাল’ পরিচয়ে জাতির উপর চেপে বসেছিলো তখন সব দল ও মতের মানুষের পার্থনা ছিলো দুঃশাসনের অবসান হবে। গণতন্ত্র ফিরে আসবে।
এক পর্যায়ে জাতির জন্য দুঃখজনক ঘটনার জন্ম দিয়ে একদলীয় শাসনের অবসান ঘটেছিলো, কিন্তু গণতন্ত্রের দেখা আর মিলছিলো না। পরবর্তীতে সিপাহী জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হন জেনারেল জিয়াউর রহমান। সেনাপোষাকে ক্ষমতায় আসলেও চরিত্র, নৈতিক মূল্যবোধ, দেশ প্রেমের চেতনা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এবং ইসলামী মূল্যবোধে খাঁটি বিশ্বাসী জেনারেল জিয়া পৃথিবীর অন্য সেনা শাসকদের চরিত্র থেকে ছিলেন আলাদা। স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের অধিকারী জিয়াউর রহমান এক সময় গোটা এশিয়া মহাদেশের শাসকদের কাছে হয়ে উঠেছিলেন মহা ঈর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী এক শাসকে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারেন নি। দেশী-বেদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের মহাচক্রান্তে শেষ পর্যন্ত শাহাদৎ বরণ করেছিলেন। এরপর শুরু হয়েছিলো বাংলাদেশের গণতন্ত্র নস্যাতের নানা চক্রান্ত। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের দৃশ্যপটে এসেছিলেন আজকের লেখার চরিত্র হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ। তার প্রায় নয় বছরের শাসনামলকে পৃথিবীর কোন রাষ্ট্র চিন্তক ‘সুশাসন’ বলা দূরের কথা, গণতন্ত্র হরণকারী হিসেবেই অভিহিত করেছেন।
গত কয়েকদিন থেকে এরশাদ একেকবার একেক বক্তব্য দিয়ে রাজনৈতিক মহল সহ মিডিয়ায় রীতিমত ঝড় তুলেছিলেন। গত প্রায় একশ দশদিনে এরশাদের এসব বক্তব্য থেকে অনেকেই বুঝতে পারেননি। এরশাদ আসলে কি করছেন শেষ পর্যন্ত। মারপ্যাচের রাজনীতি যারা বুঝেন না তাদের ধারণা ছিলো এবার শেষ বয়সে হয়তো এরশাদ বুঝি নিজের চরিত্র পাল্টালেন। কিন্তু তারা যা দেখলেন সেতো বলতে গেলে তাদের কাছে বিস্ময়ের শেষ। তবে যারা এরশাদকে চেনেন, বুঝেন এবং তার ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক নৈতিকতা সম্পর্কে জানেন তারা এরশাদের বক্তব্যগুলো শুনে হেসে উড়িয় দিয়েছেন। অনেকেই বলেছেন, সকালে এরশাদ কি বলেছেন সেটা ভূলে গিয়ে বিকেলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এরশাদের কথাকে বেরসিকরা আবার ‘বেশ্যার’ সাথে তুলনাও করেছেন।
একজন মিডিয়া কর্মী হিসেবে এরশাদের বক্তব্যগুলো আমাদের অনেকের কাছে ছিলো সময়োপযী এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এরকম বক্তব্য সাহসী হিসেবে মনে হয়েছে। তবে এখন বুঝতে পারছি ‘অল্ড ইজ গোল্ড’ কথাটাই সত্যি। মুরব্বীরা যা বলেছিলেন সেটাই বুঝি সত্যি হলো। এরশাদ সকালে-সন্ধ্যায়, রাতে বেহায়া চরিত্রের মতো তার সব কিছু পাল্টে ফেলেন।
হিটলারের শাসন দেখিনি তবে একথা বলতে এখন আর দ্বিধা নেই, হিটলার যে বেহায়াপনা দুঃশাসনের অবতারণা কায়েম করেছিলো, এক লক্ষ চুয়ান্ন হাজার বর্গমাইলের এরশাদ এখন নিজের ব্যবহার দিয়ে হিটলারের জন্য বুঝি লজ্জাই বয়ে আনলেন।
যে এরশাদ সপ্তাহ খানেক আগে বলেছিলেন ‘আওয়ামীলীগের সঙ্গে বেহেশতেও যেতে রাজি নন তিনি। বিপ্লবী এরশাদ আরো বলেছিলেন-বিএনপি নির্বাচনে না গেলে, সে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে শেষ বয়সে বেঈমান হয়ে মরতে চান না। বেঈমান হয়ে মরার চেয়ে জেলে থাকাই উত্তম !!
কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি করলেন হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ ? নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক নিবন্ধিত চল্লিশটি দলে ৪টি দল নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কথিত ‘সর্বদলীয়’ সরকারে যোগদান করে তার ডিগবাজী চরিত্রের নতুন সংস্করণ দেখালেন। অনেকেই এরশাদের এই কাজকে ১৯৮৬ নির্বাচনে তার অধীনে আওয়ামীলীগের নির্বাচনে যাওয়া এবং তৎকালীন সময়ে গৃহপালিত বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামীলীগের ভূমিকার প্রতিদান হিসেবে দেখছেন। আর এটা যদি হয়ে থাকে তবে এ বিষয়টি অস্বীকার করার কোন পথ আর থাকবে না যে, কিছুদিন পূর্বে এরশাদের আকস্মিক দিল্লী সফর এবং ভারত সরকারের বর্তমান ভূমিকা সবই একই সূত্রে গাঁথা। সর্বশেষ ১৬ নভেম্বর এরশাদ সাংবাদিকদের অনেকটা রাগত্বস্বরে বলেছিলেন ‘মহাজোট থেকে নির্বাচন করলে লোকে আমাকে বেইমান বলবে। আবার যদি নির্বাচন না করি তবে পরবর্তী সরকার কিভাবে আসবে ?
লেখার শুরুতে এরশাদের চরিত্র বদল নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে ভার্চুয়াল জগতের বিভিন্ন লেখালেখিতে এমন সব কথাবার্তা বলা হচ্ছে সেগুলোর একটি প্রকাশ অযোগ্যই বলা যায়। তবে যারা এসব বলছেন, তাদের রাগ বা অভিমান যে এরশাদের প্রতি ঘৃনার শেষ বিন্দু স্পর্শ করেছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। যে লোকটা চব্বিশ ঘন্টারও কম সময় আগে গণমাধ্যমের সামনে বললো ‘আওয়ামীলীগের অধীনে নির্বাচনে গেলে লোকে তাকে থুথু দেবে’, সেই লোকটা কি এমন গায়েবী সুসংবাদ পেয়ে তার ভাষার নাস্তিকদের সমর্র্থনকারীদের সহযোগী হিসেবে মহাসমারোহে মহাজোটের ‘সর্বদলীয়’ সরকারে যোগদান করে রাজনীতির ইতিহাসে কুখ্যাতির শেষ বিন্দুকে স্পর্শ করলো ?
এরশাদের কথিত রাজনীতি জীবনের অনেক উত্থান-পতনের সময় না দেখলেও ওয়ান-ইলেভেনে তার রাজনৈতিক অবস্থান দেখে বুঝতে কোন অসুবিধা হয়নি যে, ওয়ান ইলেভেনে ফখর-মঈন সরকারের গোপন শক্তির কুশীলদের অন্যতম প্রদান চরিত্র ছিলেন এই এরশাদ। কতিপয় বিশ্লেষক কিংবা পর্যবেক্ষক দৃশ্যমান নানা অনৈকতিকার কারিগর এরশাদকে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রচেষ্ঠা চালালেও তিনি আসলে কখনো তা নন। ভারতের দেয়া নির্দেশিকা কিংবা ডাক্তারী নিয়মনীতি মানা রোগীর ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) অনুসরণ করে আসা এরশাদ ব্যক্তি চরিত্রে প্রতারক প্রেমিক, ভন্ড রাজনীতিবীদ এবং লোক সমাজে একজন বেঈমান হিসেবে কুখ্যাতির শেষ বিন্দু স্পর্শ করার গৌরব অর্জন করেছেন বললেও কম হবে। সহজ কথায় গত একশো দশদিনে এরশাদ যা করেছেন সেগুলো ছিলো তার শুধুমাত্র অভিনয়। উদাহরণ দিলে বলা যায়, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপি কেলেঙ্কারী ফাঁস হওয়া ঘটনার মত ‘আমি দাঁড়াইয়া যামু-আপনি বসাইয়া দিয়েন, তাইলে লোকে ভাববে আমাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নাই।’
এরশাদকে নিয়ে রাজনীতির শেষ গেমটা বেশ জমিয়েই গত পাঁচ বছর খেলেছেন শেখ হাসিনা। হাজার হাজার মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় বাতিল হলেও একটি মামলা ঝুলিয়ে রেখে জীবন সায়াহ্নে ৮৬ বছর বয়সে এরশাদকে ‘মহাসাইজ’ করলেন শেখ হাসিনা। যা পাই, তাই খাই মার্কা চরিত্রের এরশাদকে না বানালেন প্রেসিডেন্ট, না তার ‘ডেপুটি’। শেষ বয়সে ‘আত্মস্বীকৃত বেঈমান’ হিসেবে বেঁচে থাকতেই ইতিহাসের আস্থাকূঁড়ে নিক্ষেপ করা হলো। তবে একজন্য কেউ দায়ী নয়, এরশাদের এ পতনে তার নৈতিক চরিত্রই দায়ী। ভোগ-বিলাসীতা এবং নারী ছাড়া উল্লেখযোগ্য বলার বেশী কিছু নাই তার সম্পর্কে।
মেজর জেনারেল (মরহুম)মইনুল হোসেন চৌধুরীর লেখা ‘এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য, গ্রন্থে এরশাদ সম্পর্কে লিখতে গিয়ে লিখেছেন- ‘একজন দক্ষ, চৌকস ও বিচক্ষণ সেনা কর্মকর্তা হিসেবে যদিও তার সুনাম ছিল না, কিন্তু চতুর ও সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে তার ছিল প্রচুর দক্ষতা।’
জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরীর বইয়ের তথ্যমতে পাকিস্তান প্রত্যাগত এরশাদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে মাত্র সাত বছরে লে. কর্ণেল থেকে থরথর করে লে. জেনারেল ও সেনাবাহিনীর প্রধান হয়ে যান এবং মাত্র আট বছরের মাথায় সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়ে যান। বিরোধী জোটের যুগপৎ আন্দোলন এবং শেষ পর্যন্ত তার উপর থেকে সেনাবাহিনীর সমর্থন প্রত্যাহারের ফলে দীর্ঘ নয়বছর ক্ষমতায় থাকা এরশাদের পতন এবং তাকে কারাগারেও যেতে হয়েছিলো। কিন্তু এরশাদই মনে হয় পৃথিবীর ইতিহাসের একমাত্র স্বৈরশাসক যিনি পতনের পরও আবার মঞ্চে আর্বিভূত হন। আওয়ামীলীগ-বিএনপি দু’দলই তাকে নিয়ে লজ্জায় শরমের বালাই ছেড়ে ছেড়ে টানাটানি করেছে। ভাবতে অবাক লাগে যে এরশাদ ছিলো স্বৈরশাসক, সেই এশাদকে নিয়ে সবাই সমান ‘গেম’ খেলেছে।
তবে চতুর শেয়াল চরিত্রের এরশাদ শেষ পর্যন্ত ইতিহাসের কুখ্যাতি পাওয়া বাকশালী শাসন কায়েমীদের দিকে ঝুঁলে দেখিয়ে দিয়েছে গ্রাম্য সেই প্রবাদের মত ‘চুরে চুরে হালি, এক চুরে বিয়ে করে আরেক চুরের শালী।’
আর এমন ডিগবাজী খাওয়া প্রতারক চরিত্রের জন্য এরশাদ এখন টক অব দ্যা কান্ট্রি- ‘দুধের অগ্র, ঘোলের শেষ, কচিপাঁঠা, বৃদ্ধ মেষ’ খেকো পলিটিশিয়ান হিসেবে।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
সম্পাদক (নির্বাহী) দি সান রাইজ টুডে ডট কম