লন্ডনে তারেক-জয় বৈঠক
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের মধ্যে গোপণীয় বৈঠক হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন একটি উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক সূত্র।
সূত্র জানান, গত ১৬ নভেম্বর শনিবার স্থানীয় সময় মধ্যরাতের পর জয় লন্ডনে গিয়ে সেখানে চিকিৎসাধীন তারেকের সাথে সাক্ষাত করেছেন। তবে লন্ডন সফর ও তারেকের সাথে বৈঠকের ব্যাপারটি গোপন রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন তিনি।
এ জন্য জয় লন্ডনে গিয়ে মধ্য লন্ডনের হিল্টন লেন পার্ক ইন হোটেলে সরাসরি উঠেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হয়েও তিনি লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রটোকল শাখাকেও তার সফরের ব্যাপারে কিছুই জানাননি। এমনকি বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রেস ও দূতাবাসের কাউকেই অবহিত করেননি।
সূত্র দাবি করেন, জয় গোপনীয়তা বজায় রাখতে তার লন্ডন সফরের ব্যাপারে তার খালাতো বোন লেবার দলীয় কাউন্সিলর টিউলিপ সিদ্দিকীকেও কিছুই জানাননি।
এদিকে তারেক ও জয়ের সাথে বৈঠকের ঘটনাটি লন্ডনের বিএনপি নেতৃবৃন্দ ও তার স্থানীয় ঘনিষ্ঠদের কাছে গোপন রাখেন। এমনকি সারাক্ষণ তারেকের সাথে ছায়ার মতো থাকেন এমন সঙ্গী এবং দেহরক্ষীরাও থাকেন অন্ধকারে।
তবে জয়ের লন্ডন সফর ও তারেকের সাথে বৈঠকের ব্যাপারটি জানতেন ব্রিটিশ সরকারের এক সাবেক উচ্চ পদস্থ কূটনীতিক। এই কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুর সরকারের অতি ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
এদিকে জয়ের লন্ডন সফর ও তারেকের সাথে বৈঠকের সত্যাসত্য যাচাই করতে গিয়ে কিছু প্রামাণিক তথ্য পাওয়া গেছে। মধ্য লন্ডনের হিল্টন লেন পার্ক ইন হোটেলের রেজিস্ট্রি খাতায় দেখা গেছে জয় গত ১৬ নভেম্বর হোটেলটিতে ওঠেন। এরপর দিনই জয় হোটেলটি ছেড়ে যান বলে তথ্য সংরক্ষিত আছে।
হোটেলটিতে জয় ও তারেককে কফি ও স্যান্ডউইচ পরিবেশন করেন ৩৭ উর্ধ্ব এক পরিচারিকা। তিনি দুই তরুণের সাক্ষাতের বিষয়ে গত পাঁচ দিন ধরেই কোনো তথ্য দিতে অস্বীকার করেছেন। তবে পরিচয় গোপণ রাখার পূর্ণ নিশ্চয়তা পাওয়ার পর তিনি জয় ও তারেকের ছবি দেখে নিশ্চিত করেছেন, দুজনকে একান্তে কিছুক্ষণ কথা বলতে দেখেছেন।
এছাড়া লন্ডনের এমিরেটস এয়ারলাইন্স সূত্র নিশ্চিত করেছেন, গত ১৬ নভেম্বর জয় ফ্লাইট নম্বর ইকে-০…৩৫ এ হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর দিন একই এয়ারলাইন্সের আরেকটি ফ্লাইটে তিনি লন্ডন ছাড়েন। এ সময় জয়ের সাথে তার ব্যক্তিগত স্টাফরাই ছিলেন। এছাড়া তাকে বিদায় জানাতে আর কেউ বিমানবন্দরে ছিলেন না।
উল্লেখ্য, গত ১৬ নভেম্বর লন্ডনে জয়ের সাথে তারেকের বৈঠকের দুদিন পর বিদেশে টাকা পাচারের মামলায় তারেককে বেকসুর খালাস দেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. মোতাহার হোসেন।
ঢাকার একটি রাজনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, সর্বোচ্চ পর্যায়ের ছাড় দিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জয় সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেকের সাথে বিরোধ কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এর অংশ হিসেবেই এই প্রথম সরকার জিয়া পরিবারের কোনো মামলায় বিচারককে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেন। ফলে আদালতও তারেকের নিরাপরাধ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সক্ষম হন। আর এ রায়ের পর সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থক গণমাধ্যমও বিস্ময়করভাবে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। -টাইম নিউজ