ভূয়া চেকে ৮০ লাখ ডলার : নিউইয়র্কে ৭ বাংলাদেশী গ্রেফতার

জাল চেকের মাধ্যমে নিউইয়র্ক অঞ্চলের ১৫টি ব্যাংক থেকে গত সাড়ে তিন বছরে ৮০ লাখ ডলার (প্রায় ৬২ কোটি টাকা) হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে নিউইয়র্ক এবং জর্জিয়া অঙ্গরাজ্য থেকে সাত বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং পুলিশ আরো সাতজনকে খুঁজছে।
সাঈদ আল হোসেন ওরফে সুমন নামে একজনকে জেএফকে এয়ারপোর্টে আমিরাতের ফাইট থেকে কমান্ডো স্টাইলে গ্রেফতার করা হয় ২১ নভেম্বর সকালে। গ্রেপ্তার হওয়া সংঘবদ্ধ চক্রের সর্দার হলেন জামান মাহবুব ওরফে ফয়সাল ওরফে মাহবুবুজ্জামান। অপর পাঁচজন হলেন মো. গোলাম আজম ওরফে সোহাগ ওরফে ফয়েজ আহমেদ খান ওরফে কামাল পাশা, মো. খলিল ওরফে রবিন ওরফে আওয়াল হাসান, মো. নজরুল ইসলাম, এ কে এম গোলাম হোসেন ওরফে মোহাম্মদ উদ্দিন ওরফে সারিয়ী আমেবি ওরফে পাঙ্খা ওরফে জেমস পালাম ওরফে মোহাম্মদ শেখ ইসলাম এবং দ্বীপক রানা ওরফে নূর হোসেন। এ চক্রের সদস্য হিসেবে পুলিশ খুঁজছে হামিদ খান ওরফে আব্দুল হামিদ, আখতার রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, খায়রোল ইসলাম, এমডি রেজা ওরফে মোহাম্মদ রেজা ওরফে জসীম মো. রেজাকে।
ইউএস এটর্নি প্রিত ভ্যারারা চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিবরণ প্রসঙ্গে বার্তা সংস্থা এনাকে বলেন যে গ্রেফতারের পর ফেডারেল কোর্টে সোপর্দ করলে ছয়জন দোষ স্বীকার করেন।
মামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুর্বৃত্তরা জাল পরিচয়পত্র, জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স, যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাসের জাল ভিসা তৈরী করে। এছাড়া ভূয়া কোম্পানি খুলে ভূয়া সোসাল সিকিউরিটি নম্বর ব্যবহার করে তারা টেলিফোন লাইন, গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগও সংগ্রহ করেছিল। একই ব্যক্তি ভিন্ন নামে জাল পরিচয়পত্র এবং জাল সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর ব্যবহার করে ব্যাংকে একাউন্ট খোলেন ওই ভূয়া কোম্পানির নামে। এরপর সেই কোম্পানির নামে চেক বই সংগ্রহ করা হয়। ইউএস এটর্নি উল্লেখ করেন, ওইসব একাউন্টে কিছু ডলার জমা করা হয় এবং দুয়েকটি জাল চেক ভাঙানো হয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের আস্থা অর্জনের জন্যে।
ইউএস এটর্নি বলেন, একইসাথে ওই ১৫টি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় শত শত চেক জমা দেয়া হয় বৃহস্পতি অথবা শুক্রবার। দুদিনের মধ্যে চেকগুলো ক্যাশ করার উপযোগী হওয়া মাত্রই সাপ্তাহিক ছুটির দিন রোববার সমস্ত অর্থ উত্তোলন করা হয়। নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের আটলান্টিক সিটিতে অবস্থিত ক্যাসিনো (জুয়ার আসর বসে) এলাকার ক্যাশ মেশিন থেকে অর্থ ওঠানো করা হয়। ক্যাসিনো সিটির এটিএম থেকে দৈনিক অর্থ উত্তোলন করার কোনো সীমা নেই। এ দুর্বৃত্ত চক্র একইসাথে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত উত্তোলন করে।
ইউএস এটর্নি বলেন, সাপ্তাহিক ছুটি শেষে সোমবার স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হওয়ামাত্রই ওই জাল চেকের হদিস উদঘাটিত হয় এবং ব্যাংক একাউন্ট স্থগিত করে তদন্ত শুরু হওয়ার পর ওই চক্রটি একই পন্থায় আরেকটি একাউন্ট খোলে। জাল চেক ও জাল ডক্যুমেন্টে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চাঞ্চল্যকর এ মামলার তথ্য মিডিয়াকে প্রদান করেন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের তদন্ত সংস্থার ইউএস ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের নিউইয়র্ক ফিল্ড অফিসের স্পেশাল এজেন্ট তথা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জেমস টি হায়েস।
তিনি বলেন, গ্রেফতারের পরই সকলকে ম্যানহাটান ফেডারেল কোর্টে কেভিন নাথানিয়েল ফক্সের এজলাসে সোপর্দ করার পর সকলকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতরা নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটস এবং জ্যামাইকায় রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসার নামে ধান্দাবাজিতে লিপ্ত ছিলেন। এর কয়েক বছর আগে আরো ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয় রিয়েল এস্টেট প্রতারণা, ব্যাংক প্রতারণা, ক্রেডিট কার্ড জারিয়াতিসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত থাকার দায়ে। ওই ১৪ জনের মধ্যে জামিনে মুক্তিলাভের পর দুজন পালিয়ে বাংলাদেশে গেছেন। অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে। -এনা নিউইয়র্ক

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button