জামায়াতে ইসলামীর লক্ষ্য আন্দোলন
জামাল উদ্দিন
আন্দোলন ছাড়া আর কিছুই ভাবছে না জামায়াতে ইসলামী। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখবে তারা। দমন-পীড়ন, নির্যাতন ও গণগ্রেফতার চালিয়ে বিরোধী দলের আন্দোলন দমন করা যাবে না। নির্যাতন ও দমন-পীড়ন যত বাড়বে, আন্দোলন তত তীব্র হবে। আন্দোলন দমনে সরকারের কৌশল পর্যবেক্ষণ করে পরিস্থিতি অনুযায়ী বিরোধী দলের আন্দোলনের কৌশলও বদলানো হবে। তবে কী ধরনের কৌশল নেয়া হবে তা বলতে রাজি হননি দলের নেতারা। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবশ্যই পদত্যাগ করে নির্বাচন দিতে হবে। অন্যথায় সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই। ঠুনকো অজুহাতে কেএম হাসানের মতো একজন প্রধান বিচারপতিকে যেখানে তারা মানেননি, সেখানে আওয়ামী লীগের দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান রেখে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কোনো সুযোগ ১৮ দলীয় জোটের নেই। তাই শেখ হাসিনার সরকারের এ প্রহসনের নির্বাচন দেশবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করবে। দলীয় সূত্রগুলো জানায়, ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলন সফল করতে যে কোনো মূল্যে জামায়াতের নেতাকর্মীরা সংকল্পবদ্ধ। শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকেও মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের ওপর এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তীব্র গণআন্দোলনের মাধ্যমেই বর্তমান সরকারের পতন ঘটানোর জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতেও দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। লাগাতার হরতালের পরিবর্তে বিরতি দিয়ে হরতাল দেয়ার পক্ষপাতী দলটির নেতারা।
এছাড়া ঘেরাও, অবরোধসহ সরকারের আচরণ অনুযায়ী কর্মসূচি নির্ধারণ করার পক্ষে দলের নেতারা। জামায়াতের এক দায়িত্বশীল নেতা যুগান্তরকে জানান, সরকার পতনের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে সেখান থেকে পিছপা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জোটের পক্ষ থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হলে তা বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে জামায়াতের পক্ষ থেকে। এমন সিদ্ধান্তই নেয়া হয়েছে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে। এ ক্ষেত্রে জামায়াত ত্যাগের সর্বোচ্চ ছাড় দেবে জোটকে। জামায়াতসহ ১৮ দলীয় জোটকে বাইরে রেখে এ সরকার একতরফা নির্বাচনের পথ বেছে নিলে দেশ মারাত্মক সংঘাতের দিকে চলে যাবে বলেও মনে করেন জামায়াত নেতারা। তফসিল ঘোষণার পর সরকারের গ্রেফতার ও দমন অভিযানকে মাথায় রেখেই আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করে জামায়াত। খুব শিগগির নেতারা আত্মগোপন থেকে প্রকাশ্যে এসে আন্দোলনে যোগ দেবেন। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় রাজপথই তাদের আন্দোলনের শেষ ঠিকানা বলে মনে করেন জামায়াত নেতারা। এলাকাভিত্তিক আন্দোলনেরও পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। একেক সময় একেক এলাকায় শো-ডাউন করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করবে।
হামিদুর রহমান আযাদ এমপি বলেন, যৌথ ব্যবসা করতে গেলে যেমন লাভ-লস সবাইকে মেনে নিতে হয়, জোটের আন্দোলনেও সবাইকে লাভ-লস মেনে নিতে হবে। আন্দোলনে কেউ বেশি ত্যাগ স্বীকার করবে, কেউ কম করবে- এটাকে স্বাভাবিকভাবেই দেখে তার দল। আন্দোলনের পরিণতির বিষয়ে তিনি বলেন, এ সরকারের জনপ্রিয়তা বর্তমানে যেভাবে তলানিতে পৌঁছেছে, ৮৬ ও ৯৬ সালের সরকারগুলোরও জনপ্রিয়তায় এমন ধস নামেনি। তাই ওই সময়ের নির্বাচন আর ২০১৪ সালের নির্বাচনকে এক মানদন্ডে বিচার করা যাবে না।
পদ্মা সেতু ও হলমার্ক কেলেংকারিসহ বড় বড় দুর্নীতিগুলো এ সরকারের আমলেই হয়েছে। তাই আন্দোলনে সফলতা আসবেই। ফ্যাসিবাদী এ সরকারের সঙ্গে কোনো আপস কিংবা সমঝোতা হবে না। আন্দোলন দমনে সরকারের নির্দেশে আইনশৃংখলা বাহিনীর নানামুখী পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, দমন-পীড়ন করে আন্দোলন দমানো যায় না। নির্যাতন যত বাড়বে আন্দোলন তত তীব্র হবে।