লন্ডনে নবম ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড ২০১৩ বর্ণাঢ্য উদযাপন
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় অভ্যূদয় ঘটলেও বিকাশের গুণে এ মুহূর্তে তাদের ছাড়িয়ে অনেকদূর পৌঁছে গিয়েছে ব্রিটেনের কারি শিল্প। বস্তুত ব্রিটেনের জাতীয় ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে এটি। কারি শিল্পের নেপথ্য কারিগরদের স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি, ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শেফ রিক্রুটমেন্টজনিত সমস্যা নিরসনে কাজ করার লক্ষ্যে তার সরকারের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।
লন্ডনের বাটারসি এভোল্যুশনে তারকাখচিত এক বর্ণ্যাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ২৫ নভেম্বর লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় ২০১৩ সালের জন্য ব্রিটিশ কারি ইন্ডাস্ট্রির শ্রেষ্ঠ রেস্তোরাঁসমূহের মধ্যে ১২ টি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি এবং পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কারি ইন্ডাস্ট্রি সংশ্লিষ্ট রসনাবিলাসী, বিভিন্ন ক্ষেত্রের জননন্দিত ব্যক্তিত্ব, পার্লামেন্ট মেম্বার, রাজনীতিবিদ এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। উল্লেখ্য, ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পের আওতায় এ মুহূর্তে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার রেস্তোরাঁ যাতে কর্মরত রয়েছে প্রায় ৮০ হাজার কর্মী। ব্রিটেনের জাতীয় অর্থনীতিতে প্রতিবছর এ খাতের অবদান প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন পাউ-।
অ্যাওয়ার্ড আয়োজনের পরিচালক এবং প্রযোজক জাস্টিন আলি বলেন, চলতি বছরের আয়োজনটিকে বলতে হবে এ যাবৎকালের মধ্যে অনবদ্য। ব্রিটেনের সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্পের নেপথ্য নায়কদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন উপলক্ষ্যে সামাজিক পঞ্জিকায় স্থায়ী জায়গা করে নেয়ার পাশাপাশি জননন্দিত ব্যক্তিবর্গ, ভিআইপি এবং রসনাশিল্প খাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির উপস্থিতির কারণে ভিন্ন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে আমাদের এবারকার আয়োজন।
চলতি বছর আয়োজন সম্পর্কে ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ডস এর প্রতিষ্ঠাতা এনাম আলি এমবিই বলেন, নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের গুণেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনন্য হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে ব্রিটিশ কারি। তাদের নিজস্ব উদ্ভাবনের মধ্যে যেসব ডিশ বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে তার মধ্যে রয়েছে অনিয়ন ভাজি, ধানশাক, চিকেন টিক্কা মাসালা, রোগান জোশ, চিকেন ফল এবং বালতি।
মূলধারার অর্থনীতিতে এ ধরনের ভূমিকার পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রসনাশিল্পখাতেও অব্যাহত অবদান রেখে চলেছে এ শিল্প। খাদ্যরসিকদের জন্য প্রতি সপ্তাহে সুনামের সাথে ২৫ লাখ কারি সরবরাহ করে আসছে তারা। ফলত রসনাশিল্পে অনন্য সাফল্য উদযাপনের পাশাপাশি ব্রিটিশ সামাজিক পঞ্জিকায় ইতোমধ্যেই স্থায়ী একটি জায়গা করে নিয়েছে ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড। জাতীয় অগ্রগতির পথে সাফল্যের মাইলফলক স্থাপনের এ অনবদ্য কৃতিত্বের জন্য বার্ষিক এ আয়োজনকে ‘কারি অস্কার’ অভিধায় ভূষিত করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।
রাজকীয় এ আয়োজনের অতিথি তালিকায় ছিলেন ক্রীড়া ও বিনোদনসহ বিভিন্ন খাতের জননন্দিত তারকা, বরেণ্য রাজনীতিক, ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ ও ব্রিটিশ কারি শিল্পের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ। আয়োজিত ভোজসভার পাশাপাশি অতিথিদের জন্য আয়োজন করা হয় স্ট্যা-আপ কমেডিয়ান নাভিদ মাহবুবের উপস্থাপনায় অনবদ্য পরিবেশনা।
শ্রেষ্ঠত্বের বাছাই প্রক্রিয়ায় কারি শিল্পের ভোক্তাসাধারণের মতামত নেয়া হয়। আর এর মাধ্যমে নির্বাচিতজনের হাতে তুলে দেয়া হয় শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা। এ বছর মতামত প্রদানে রজন্য নিবন্ধিত হন ২ লাখ ৬৩ হাজার ভোক্তা। ইমেইল, পোস্ট কিংবা নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে গৃহীত হয় এসব মতামত।
১২ টি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার প্রদান করা হয় এ বছর। এগুলো হচ্ছে, ১. নিউকামার অব দ্য ইয়ার ২. বেস্ট স্পাইস রেস্টুরেন্ট স্কটল্যান্ড ৩. বেস্ট স্পাইস রেস্টুরেন্ট নর্থ ইস্ট ৪. বেস্ট স্পাইস রেস্টুরেন্ট নর্থ ওয়েস্ট ৫. বেস্ট রেস্টুরেন্ট ইস্ট মিডল্যান্ডস ৬. বেস্ট স্পাইস ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস ৭. বেস্ট স্পাইস রেস্টুরেন্ট ওয়েলস ৮. বেস্ট স্পাইস রেস্টুরেন্ট সাউথ ইস্ট ৯. বেস্ট স্পাইস রেস্টুরেন্ট সাউথ ওয়েস্ট ১০. বেস্ট স্পাইস রেস্টুরেন্ট সেন্ট্রাল লন্ডন অ্যান্ড সিটি ১১. বেস্ট স্পাইস রেস্টুরেন্ট লন্ডন আউটার অ্যান্ড সাবার্বস এবং ১২. বেস্ট ডেলিভারি রেস্টুরেন্ট/ টেক অ্যাওয়ে বাই জাস্টইটডটকম
শ্রেষ্ঠ রেস্তোরাঁর স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি রসনাশিল্পের শীর্ষ ব্যক্তিবর্গকে স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে স্পেশাল রিকগনিশন অ্যাওয়ার্ড দিয়ে থাকে ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড। বিগত সময়ে যারা এ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তারা হলেন, মাধুর জাফরে, সাইরাস তোরিওয়ালা ওবিই, আনজুম আনন্দ, হেস্টন ব্লুমেনথাল ওবিই এবং শেলিম হুসেইন এমবিই।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ উদ্যোক্তা এবং রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী এনাম আলি এমবিই এর উৎসাহে এবং উদ্যোগে ২০০৫ সাল থেকে প্রবর্তিত হয় ব্রিটিশ কারি অ্যাওয়ার্ড। গত ৩০ বছর ধরেই ব্রিটিশ কারি শিল্পকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে অক্লান্ত প্রয়াস চালিয়ে আসছেন তিনি।