বিশ্বব্যাপী মুসলিম সমাজে ক্ষোভ ও নিন্দা

Angolaঅ্যাঙ্গোলা সরকার সে দেশে ইসলাম ধর্মকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং দেশটির মসজিদগুলোও ধ্বংসের কাজ শুরু করেছে। বিশ্বে একমাত্র অ্যাঙ্গোলা সরকারই এ ধরনের পদক্ষেপ নিল। এদিকে এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। আরব দেশগুলোর সংগঠন আরব লীগ ও ইসলামিক সম্মেলন সংস্থা ওআইসি’র প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে অ্যাঙ্গোলার ঘৃণ্য এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে যেন তারা যথাযথভাবে প্রতিবাদ জানায়। অবশ্য অ্যাঙ্গোলার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইসলাম নিষিদ্ধের কথা অস্বীকার করে বলা হয়েছে, তারা দেশটিতে প্রচলিত ১৯৪টি ‘অবৈধ’ ধর্মবিশ্বাসের ওপর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, শুধু ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে নয়। ইসলাম ধর্ম সরকারিভাবে বৈধতা লাভ না করায় সরকার অস্থায়ীভাবে মসজিদগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত এই দেশটির কয়েকটি সংবাদপত্র অ্যাঙ্গোলার সংস্কৃতি মন্ত্রী রোজা ক্রুসির বক্তব্য উদ্ধৃত করে সম্প্রতি ইসলাম ধর্ম নিষিদ্ধের খবর দিয়েছে। ক্রুসি বলেছেন, তার দেশের বিচার ও মানবাধিকার মন্ত্রণালয় ইসলামকে বৈধ ধর্ম বলে অনুমোদন দেয়নি… তাই পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মসজিদগুলো বন্ধ থাকবে। তিনি বলেছেন, ইসলাম ধর্ম অ্যাঙ্গোলার সাংস্কৃতিক প্রথাগুলোর সঙ্গে বৈপরিত্য রাখে বলে এই ধর্ম নিষিদ্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
ইসলাম ধর্মকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া হিসেবে দেশটির মসজিদসহ ইসলামী স্থাপনাগুলো ধ্বংসের কাজ শুরু করেছে অ্যাঙ্গোলা সরকার। অ্যাঙ্গোলার কর্মকর্তারা ইসলামকে অবৈধ ধর্মীয় সম্প্রদায় বলে উল্লেখ করছেন। তবে দেশটিতে সত্যিই ইসলামের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে কি না তা কোনো নিরপেক্ষ সূত্রে এখনও যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
অ্যাঙ্গোলার সংবিধানে নাগরিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।
গত সোমবার ওয়াশিংটনস্থ অ্যাঙ্গোলার দূতাবাস ইসলাম ধর্মকে নিষিদ্ধ করার খবর নাকচ করে দিয়ে বলেছে, অ্যাঙ্গোলা এমন একটি দেশ যে ধর্মে হস্তক্ষেপ করে না। এই দেশে নানা ধর্ম ও মতের নাগরিক রয়েছে বলে দূতাবাস কর্মকর্তা জানান। গত অক্টোবর মাসে অ্যাঙ্গোলার রাজধানী লুয়ান্ডার ভিয়ানা জাঙ্গো এলাকায় একটি মসজিদের মিনার গুড়িয়ে দেয়। সরকার এ বিষয়ে কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেয়নি।
অ্যাঙ্গোলার বেশিরভাগ নাগরিকই ক্যাথলিক খ্রিস্টান। দেশটির এক কোটি ৯০ লাখ নাগরিকের মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা ৮০ থেকে ৯০ হাজার।
এদিকে অ্যাঙ্গোলার ধর্ম ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের সিদ্ধান্তের খুব দ্রুত প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম, পণ্ডিত এবং বিভিন্ন ইসলামী সংস্থা ও সংগঠনের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তারা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম ইসলামের প্রসারে ভীত হয়ে অনেক ইসলাম ও মানবতা বিরোধী শক্তি এ ধরনের পদক্ষেপ নেবার চেষ্টা চালিয়েছে। তারা আজ ইতিহাসে কুখ্যাত হয়ে রয়েছে। কিন্তু ইসলাম ধর্ম আজও তার ঊচ্চ মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এর রক্ষার দায়িত্ব যেহেতু স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা গ্রহণ করেছেন সুতরাং পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলার ক্ষমতা কারো নেই।
অ্যাঙ্গোলার হঠকারী পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন অনইসলাম ডটনেটের ম্যানেজিং এডিটর ড. ওয়ায়েল শিহাব, ইলিনয় ইমাম ও স্কলার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শায়খ কিফাহ মুসতাফা, আমেরিকা শরীয়াহ একাডেমির ডিন ড. হাতেম আল-হাজ্জ, আমেরিকান ইসলামিক নেতা ড. ওয়ায়েল হামযাহ প্রমুখ। এছাড়া ইসলামিক ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্স ইসলাম নিষিদ্ধ ও মসজিদ ধ্বংসের তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ওআইসি ও ইসলামিক দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের পক্ষ থেকে যথাযথ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটি অ্যাঙ্গোলার পদক্ষেপকে বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button