সিডনীতে কনস্যুলেটের সামনে প্রবাসী বাংলাদেশীদের গণবিক্ষোভ
বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের নগ্ন হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে গত সোমবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনীতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজনে এক বিশাল বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে সিডনীর প্রাণকেন্দ্র মার্টিন প্লেসে ব্যাপক জনসমাগম হয়। অস্ট্রেলিয়ার প্রাণকেন্দ্র সিডনীতে বাংলাদেশীদের এতো ব্যাপক এবং স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি অতীতে কখনও লক্ষ্য করা যায়নি। অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরাসহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলাদেশীরা তাদের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে এই মহাসমাবেশে সমবেত হয়। ভারতের আধিপত্যবাদী ভূমিকার প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের সকল রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা এবং সাধারণ প্রবাসী বাংলাদেশীরা এই প্রথমবারের মতো সকল ভেদাভেদ ভুলে একত্রিত হয়েছিলো। এক ঘণ্টাব্যাপী প্রতিবাদী অবস্থান ও বক্তব্য শেষে সিডনীতে ইন্ডিয়ান কনস্যুলেটে গিয়ে একটি প্রতিবাদসূচক মেমোরান্ডাম হস্তান্তর করা হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে বলা হয়, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। বর্তমানে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে যেভাবে বিদেশী অশুভ হস্তক্ষেপ ঘটছে, তাতে দেশপ্রেমিক মানুষদের আর চুপ করে থাকার সুযোগ নেই। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ একটি দাস উপনিবেশে পরিণত হবে। বাংলাদেশের বর্তমান অস্থিতিশীলতা ও হানাহানি থেকে ভারতকে তাদের ষড়যন্ত্রের হাত গুটিয়ে নিতে হবে। সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ না করে বর্তমান আধিপত্যবাদী আচরণ বজায় রাখলে একদিন ভারতকেও এর অশুভ পরিণতি ভোগ করতে হবে। আরেকটি দেশের নিজস্ব বিষয়ে এহেন হস্তক্ষেপ সকল আন্তর্জাতিক সভ্য রীতিনীতির বিপরীত।
এছাড়া গত কয়েক বছর যাবত বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রচ- অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। ক্ষমতার অসুস্থ টানাটানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাষ্ট্রের প্রতিটি মৌলিক স্তম্ভ। বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীসহ যে সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্তব্য ছিলো জনগণের সেবা করা, তারা এখন সরকারের নির্লজ্জ স্বার্থপূরণে তৎপর। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, ইসলামী টিভি, চ্যানেল ওয়ানসহ বিভিন্ন মিডিয়া। কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে জনপ্রিয় সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে। আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ক্ষমতা হস্তান্তর না করা, পরবর্তী সরকার এবং নির্বাচন কিভাবে হবে তা নিয়ে বিদেশী কূটনীতিবিদদের অশুভ তৎপরতা আজ প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। রাজনীতিবিদদের স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্যায় করার মানসিকতার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে অতীতেও বিদেশী কূটনীতিবিদদের অযাচিত হস্তক্ষেপ দেখেছে জনগণ। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি অতীতের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি এবং করণীয় নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত দিল্লীতে গিয়ে সম্প্রতি বৈঠক করেছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী, সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্বরা ভারতীয় দূতাবাসে গিয়ে ধর্না দিচ্ছে। ভারতের দূতাবাস ও মন্ত্রণালয় দেশের অর্থনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। এমনকি তারা সামরিক খাতের মতো স্পর্শকাতর বিষয়েও সরাসরি নাক গলাচ্ছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি দেশ হিসেবে গণ্য করা কষ্টকর হয়ে দাড়িয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের অন্যায় ও নগ্ন হস্তক্ষেপের ফলে দেশের স্বাধীনতা আজ বিপন্ন। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের এ অবস্থা চূড়ান্ত অবমাননাকর ও লজ্জাজনক। ইতিহাস সাক্ষী, ভারত তার চাণক্যনীতিনির্ভর আধিপত্যবাদী কর্মকা-ে প্রতিবেশী দেশগুলোকে অস্থিতিশীল ও ভারতের প্রতি নির্ভরশীল করে রাখতে চায়। বর্তমানে বাংলাদেশ নামের আমাদের প্রিয় দেশটি আক্ষরিক অর্থে ভারতের দাসে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতির এতোটা অবনতি হয়েছে যে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা ভারতীয় দূতাবাসে গিয়ে ধর্ণা দিচ্ছেন। দেশপ্রেমিক সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলন করে বলতে বাধ্য হয়েছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আগে কখনোই এতোটা হুমকির মুখে পড়েনি।
এ দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সর্বপ্রথমে ভারতকে তাদের নিজেদের পলিসি পর্যালোচনা করতে হবে এবং অন্য দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা বন্ধ করতে হবে। যতদিন ভারত এই ধরনের সংশোধনমূলক কাজ না করছে, ততদিন প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীকে তাদের লেখা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলকে ভারতের এই ঘৃণ্য কাজ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশের দুইজন প্রতিনিধি ভারতীয় কনস্যুলারের সাথে তার কার্যালয়ে সাক্ষাত করেন। প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ নিয়ে মিডিয়াতে যে খবর প্রচার হয়ছে সে বিষয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং এ বিষয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা আরও বলেন, ভারতের মহামান্য প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরের সময় বলেছিলেন ভারত কোন একটি দল নয় বরং দেশের সাথে বন্ধুত্বে বিশ্বাসী। কিন্তু বর্তমান ভারত সরকারের ভূমিকা তার থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত বলে বাংলাদেশীরা মনে করছে। জবাবে ভারতীয় কনস্যুলার জেনারেল বলেন, ভারত কখনও কোন দেশের আভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনা এবং বাংলাদেশের বিষয়েও তারা একই নীতিতে অটল। প্রতিনিধিদল মিডিয়ার বিভ্রান্তি থেকে নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করার জন্য ভারতীয় সরকারকে পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ করলে কনস্যুলার জেনারেল তাদেরকে আশ্বস্ত করেন এবং বিষয়টি ভারত সরকারকে অবহিত করার প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে সাধারণ প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে বিভিন্ন সংগঠনের যে সকল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন : কেয়ার বাংলাদেশের সাইফুল্লাহ খালিদ, জাতীয়তাবাদী দল অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম নেতৃবৃন্দ মনিরুল হক জর্জ, মোঃ আরিফুল হক, মঞ্জুর সরয়ার বাবু, ওলামা ফাউন্ডেশন অস্ট্রেলিয়ার মাওলানা ফেরদৌস, আইসিপিসির জাফর আহমেদ, ক্যানবেরা প্রতিনিধি আহমাদুল্লাহ সাদি। এছাড়া আরও যে সকল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন ডাঃ আব্দুল ওহাব, মোঃ মোসলেহ উদ্দিন আরিফ, লিয়াকত আলি স্বপন, সৈয়দা খানম আঙ্গুর, আবুল হাশেম মৃধা জিল্লু, আবুল হাসান, ইব্রাহিম খলিল মাসুদ, নাফিজ আহমেদ, গোলাম মোস্তফা, নিয়াজ শওকত, আব্দুল মতিন উজ্জ্বল, আহসান হাবিব জ্যোতি। এছাড়াও বিশিষ্ট সমাজ সেবক নূর মুহাম্মদ মিলন, লিটল মুসলিমের জাকির শিকদার ও মোঃ আলমগীর হোসেন, কমিউনিটি লিডার তোরাব উদ্দীন আহমেদ টিপ্,ু বাংলাদেশ কমিউনিটি কাউন্সিলের মোহাম্মদ রাশেদুল হক, ইউনুস আলি ম-ল, মোঃ দবির উদ্দীন, ফারুক আহমেদ, মাহবুব আলম, জাতীয়তাবাদী দলের নেতা মোঃ দেলোয়ার হোসেনসহ আরও অনেকে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।