মানুষ হত্যার দায়ে বিরোধীদলীয় নেতা হুকুমের আসামি হতে পারেন
নির্বাচন সময়মতো হবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি জনগণের ভোট না পাওয়ার ভয়ে, হেরে যাওয়ার ভয়ে নির্বাচনে আসছে না।’ বুধবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী দলের ডাকা অবরোধের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, হরতাল, অবরোধের নামে জ্বালাও-পোড়াও, নাশকতা ও মানুষ হত্যার দায় বিরোধীদলীয় নেতাকেই নিতে হবে। এ দায়ে তিনি হুকুমের আসামি হতে পারেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদীয় বোর্ডের এ বৈঠকটি শুরু হয়। দুপুরে বৈঠক মূলতবি করে আবার সন্ধ্যায় বৈঠক শুরু হয়। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করতেই এই বৈঠক হয়। ৩০০ আসনে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করা যায়নি।
বৈঠকে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, আলাউদ্দিন আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, কাজী জাফর উল্যাহ, ওবায়দুল কাদের ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
উচ্চ আদালতে জামায়াতে ইসলামের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলটি নির্বাচন করতে পারছে না দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা নির্বাচন করতে পারবে না বলে বিএনপিও নির্বাচন করবে না। এটা দুঃখজনক। হাইকোর্ট থেকে জামায়াতের নির্বাচনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। আর বিরোধীদলীয় নেতা যুদ্ধাপরাধীদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিচ্ছেন- এটাও খুবই দু:খজনক।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ তো ভোট চায়। তারা হরতাল চায় না। বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচির সময় ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরে হানাদার বাহিনীর মতো তারা মানুষ মারা শুরু করেছে। নির্বাচন হচ্ছে মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। বিরোধীদলীয় নেতা মানুষের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন করছেন। নির্বাচন অফিসে হামলা করছেন। সাধারণ, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের যানবাহনের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। এখন যদি বিরোধীদলীয় নেতাদের গাড়ির নম্বর জোগাড় করে তা পুড়িয়ে জনগণ যদি প্রতিশোধ নেয় তাহলে কেমন হবে! এ সময় ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি মোকাবেলায় জনগণের সাহায্য ও সহযোগিতাও চান প্রধানমন্ত্রী।
বিরোধীদলীয় নেতাকে আবারো নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন না হলে কী হবে? আমি বিরোধীদলীয় নেতাকে বলব সংবিধানের ৫৭-এর ৪ ধারায় কী লেখা আছে উনাকে পড়তে হবে। তবে উনি কি আবার ওয়ান-ইলেভেন আনতে চান? কার স্বার্থে? উনার কোনো লাভ হবে না।
নির্দিষ্ট সময়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, আমি তাকে অনুরোধ করব, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ বন্ধ করেন। যে আশায় এসব করছেন তা পূরণ হবে না। নির্বাচন সময় মতোই হবে।
বর্তমান নির্বাচনব্যবস্থার স্বপক্ষে নিজের যুক্তি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য এমন একটা ব্যবস্থা রেখে যেতে চাই যেন আগামী দিনে নির্বাচন সংবিধান মোতাবেক হয়। আমরা চাই নির্বাচনের জন্য সাংবিধানিকভাবে একটি স্থায়ী বন্দোবস্ত নিশ্চিত করতে। জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের হয়ে যাওয়া পাঁচ হাজার ৮০৩টি নির্বাচনে ৬৮ হাজারেরও বেশি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক নির্বাচনে বিরোধীদলের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। আমরা জনগণের ভোটের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করেছি। কোনো কারচুপি হয়নি। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা মনে করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টারা নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়ে দফায় দফায় পদত্যাগ করেন। নির্বাচন অনুষ্ঠানে তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছিলেন। ভোটার লিস্টটা পর্যন্ত তারা সংশোধন করতে পারেননি। এমন পরিস্থিতিতে এক-এগারো আসে। জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। তারা দুই বছর থাকে। আমরা সে পরিস্থিতি আর চাই না। বৈঠককে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। বৈঠকের সময় বাইরে বিভিন্ন প্রার্থীর নামে তাদের সমর্থকেরা স্লোগান দেন।