সরকার ও বিরোধী দলকে সতর্ক করে ৩৫ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি
চলমান রাজনৈতিক সহিংতা ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। এক যুক্ত বিবৃতিতে তারা এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কিত আমাদের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যকার বিরাজমান বিরোধ সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের পথ যেন ক্রমাগতভাবে সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। উভয় দলই যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় যেতে কিংবা ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকতে বদ্ধপরিকর। তারা বলেন, একদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের দোহাই দিয়ে দলীয় সরকারের অথবা নিজেদের নেতৃত্বে সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে অনড়। অন্যদিকে বিএনপি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি থেকে সরে আসতে সম্পূর্ণরূপে নারাজ। তাই মুখে মুখে সংলাপের কথা বললেও কোন দলই যেন এ ব্যাপারে খুব আগ্রহী নয়। এমনি এক প্রেক্ষাপটে সরকার যেন একতরফা নির্বাচনের দিকেই হাঁটছে।
বিবৃতিদাতারা বলেন, বিএনপি এ নির্বাচন ঠেকানোর জন্য একের পর এক হরতালের মতো অনিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করছে। ফলে চারদিকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন ব্যক্তির অহেতুক প্রাণহানি ঘটেছে, কয়েক সহস্র ব্যক্তি আহত হয়েছে এবং সরকারি-বেসরকারি অনেক সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে সকল নাগরিকের নিরাপত্তাই আজ চরমভাবে হুমকির সম্মুখীন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে সরকারি দলও হরতাল প্রতিহত করার চেষ্টায় লিপ্ত হওয়ায় সহিংসতা আরও ব্যাপকতা লাভ করেছে। তারা বলেন, বিরোধী দলের কয়েকজন শীর্ষনেতার সাম্প্রতিক গ্রেপ্তার নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কিত দুই দলের মধ্যকার বিরাজমান বিরোধে যেন নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। আমাদের আশঙ্কা, সরকারের এ ধরনের দমন-পীড়নমূলক পদক্ষেপ সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলবে। ফলে সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক বিরোধ মীমাংসার পথ একেবারেই রূদ্ধ হয়ে যেতে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। আমাদের আরও আশঙ্কা যে, উগ্রবাদী শক্তি এমনি পরিস্থিতিতির সুযোগ গ্রহণ করে শক্তি সঞ্চয় করতে এবং আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার প্রতি চরম আঘাত হানতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের কাছে আমাদের সুস্পষ্ট দাবি:
(১) সরকার যেন আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অযৌক্তিকভাবে বিরোধীদলের নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করা থেকে বিরত থাকে, যাদেরকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের যেন অবিলম্বে মুক্তি প্রদান করে এবং একই সঙ্গে বিরোধীদলকে শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ দেয়া।
(২) বিরোধী দল যেন হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি এবং সহিংস কার্যক্রম থেকে বিরত থাকে।
(৩) উভয় দলই যেন পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার সমস্যা সম্পর্কিত বিরোধ দ্রুত মীমাংসা করে, যাতে নিরপেক্ষতার সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সবার অংশগ্রহণে যথাসময়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে, তাই অনতিবিলম্বে এ উদ্যোগ নেয়ার জন্য আমরা দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন- ভাষাসৈনিক আবুল মতিন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ড. আকবর আলি খান, অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, এস এম আল হোসাইনী, এম হাফিজ উদ্দিন খান, এ এস এম শাহজাহান, সি এম সফি শামী, রাশেদা কে চৌধুরী, অধ্যাপক আব্দুল মতিন পাটোয়ারী, ড. হামিদা হোসেন, অধ্যাপক অজয় রায়, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) এম. সাখাওয়াত হোসেন, সৈয়দ আবুল মকসুদ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আলী ইমাম মজুমদার, ড. শাহদীন মালিক, অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ব্যারিস্টার মঞ্জুর হাসান, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ফারাহ কবীর, সাংবাদিক আবুল মোমেন, ড. তোফায়েল আহমেদ, অধ্যাপক এ এন রাশেদা, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, ব্যরিস্টার সারা হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, ড. বদিউল আলম মজুমদার।