৩ দিনের অবরোধে নিহত ২৩, পঙ্গু কয়েক হাজার
বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে প্রতিদিন প্রতিবাদী নাগরিকদের হত্যা করা হচ্ছে। এমনভাবে পাকিস্তানী আমলেও সরকার বিরোধিতার জন্য নাগরিকদের হত্যা করা হতো না। মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হওয়া একটি দেশের নাগরিকদের গণতন্ত্রের লেবাসে ক্ষমতায় বসে পাখির মত প্রতিবাদী নাগরিকদের হত্যা করা হবে আর তাও নাগরিকদের ট্যাক্সের পয়সায় লালিত বাহিনীর সদস্যরা এমনটি হবে বুঝলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আজ ভিন্ন হতো বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। আজ শুধু নাগরিকই নয়, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের মত মেধাবী ও তরুণ নেতৃত্বকে ঘর থেকে টেনে নামিয়েও হত্যা করা হচ্ছে। ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধের জনগোষ্ঠিকে পরিকল্পনা করেই নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে।
অবরোধ কর্মসূচির শেষ দিনও অচল ছিল সারাদেশ। বিরোধী দলের অবরোধ বিক্ষোভ ভাংচুর অগ্নিংযোগে সারাদেশ ছিল বিস্ফোরণোন্মুখ। অবরোধের শেষদিনে গতকালও ৫ জন নিহত হয়েছেন। অবরোধ কর্মসূচির তৃতীয় দিনেও বিক্ষুব্ধ জনতার টার্গেট ছিল রেলপথ। এ সময় অন্তত ১০ জেলায় ব্যাপক বিপর্যয়ের কবলে পড়ে রেলপথ। কুমিল্লা, লালমনিরহাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নওগাঁ, নোয়াখালী, বগুড়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও দিনাজপুরে রেলপথ ও বগিতে অগ্নিসংযোগ, লাইন উপড়ানো এবং ট্রেনে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটায় জনতা।
তৃতীয় দিনের অবরোধের শুরুতেই সহিংসতার ঘটনা ঘটে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, পটুয়াখালী, কুমিল্লায় বড় সংঘর্ষ সহিংস ঘটনা ঘটে। এসব জেলাসহ অন্তত ৩০টি জেলায় সড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় চার শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে।
এর মধ্যে তৃতীয় দিনে নাটোরে পাথর দিয়ে সড়ক অবরোধ করা হলে ট্রাক উল্টে একজন নিহত হয়। এছাড়া রাজধানীতে মারা যায় বুধবার রাতে লেগুনায় লাগানো আগুনে দগ্ধ চালক মোজাম্মেল হক।
এ নিয়ে তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচিতে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৩ জনে। এর মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে বিক্ষুব্ধ জনতার ৮ জন নিহত হয়েছেন। কুমিল্লায় ফিসপ্লেট খুলে ফেলায় উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়। লালমনিরহাটে ফিসপ্লেট খুলে অবরোধকালে পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিতে আহত হয় অন্তত ২০ জন। টাঙ্গাইলে দুটি বগি পুড়িয়ে দেয় অবরোধকারীরা।
এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে ৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় অবরোধকারীরা। নোয়াখালীতেও গাছের গুঁড়ি ফেলে রেলপথ অবরোধ করা হয়। চাঁদপুরে রেললাইনে আগুন দেয়া হয়। বগুড়ায় ৭২ ফুট রেললাইন উপড়ে ফেলায় ৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকে ট্রেন চলাচল। একইভাবে নওগাঁর আত্রাইয়ে রেলাইন উপড়ে ফেলে অবরোধকারীরা। অবরোধকারীদের বাধায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে দিনাজপুরের সঙ্গে রেলযোগাযোগ।
এদিকে অবরোধের শেষ দিনে বড় সহিংস ঘটনাগুলোর মধ্যে পটুয়াখালীতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে মিছিল বের করা হলে বাধা দেয় র্যাব ও পুলিশ। এ সময় উভয় পক্ষের সংঘর্ষে প্রায় এক কিলোমিটার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের নির্বিচারে গুলিতে আহত হয় অর্ধশতাধিক।
সিরাজগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের মিছিলে পুলিশ শর্টগানের গুলি ছুড়লে মহিলাসহ অন্তত ২৮ নেতাকর্মী আহত হয়। কুমিল্লায় পুলিশ অনুরূপ হামলা চালালে অবরোধকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এতে ২ পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়।
বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে সিলেটে পুলিশের গুলি ও সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক বিক্ষুব্ধ জনতা আহত হয়েছে। রাজশাহীতে অবরোধকারীরা পুলিশের এপিসি কারে পেট্রল বোমা ছুড়লে সেটিতে আগুন ধরে যায়। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়। এছাড়া বরিশালে দুটি গ্যাস সিলিন্ডার বোঝাই ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দিলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে ওষুধ কোম্পানি অপসোনিনের একটি রাসায়নিক গুদাম ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এছাড়া সড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে মাদারীপুর, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, ঢাকার সাভার, মেহেরপুর, বরিশাল, সাতক্ষীরা, রংপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহ, শেরপুর, পঞ্চগড়, খাগড়াছড়িসহ আরও কয়েক জেলায়।
চট্টগ্রামে অবরোধ কর্মসূচির তৃতীয় দিনে সকাল ১০টায় মিছিল নিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে ঢোকার সময় পুলিশ বাধা দিলে জনতার সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করলে ১০-১২ জন আহত হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এদিকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শিবির সভাপতিসহ ৩ জনকে গ্রেফতারের জের ধরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে ২ পুলিশসহ ১৫ জন আহত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঘটে এ ঘটনা।
লালমনিরহাটের মহেন্দ্রনগরে রেলপথ অবরোধ নিয়ে পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে অবরোধকারীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গোটা এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গুলিতে এক পথচারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়।