নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে বাংলাদেশীদের জয়জয়কার
পুলিশ অফিসার শতাধিক, ৩০০০ ট্রাফিক এজেন্টের ৪০০ জনই বাংলাদেশী
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর শহর হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক শহরের পুলিশ বিভাগে এখন বাংলাদেশী অভিবাসীদের জয়জয়কার। সেখানে তারা পুলিশের সহযোগী ট্রাফিক এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। তাদের মধ্যে শতাধিক বাংলাদেশী পুলিশ অফিসার পদে উন্নীত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমস গতকাল আশাপ্রদ এ খবরটি প্রকাশ করেছে।
নিউইয়র্ক শহরে বসবাস করেন ৭৪ হাজার বাংলাদেশী। পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যস্ত এই শহরটিতে বাংলাদেশী অভিবাসীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার এক শতাংশেরও কম।
পত্রিকাটি জানায়, নিউইয়র্ক শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পুলিশের সহযোগী রয়েছে ৩ হাজার। এর মধ্যে বাংলাদেশীর সংখ্যা প্রায় ৪০০।
এদেরই একজন জ্যাকসন হেইটসের পুলিশে কর্মরত শওকত খান। বেশিরভাগ বাংলায় এবং আধো ইংরেজিতে কথা বলেন তিনি।
তিনি স্বীকার করেন ‘আমেরিকান ড্রিম’ পূরণের জন্যই তিনি পুলিশের সহযোগী হিসেবে চাকরি নিয়েছেন।
তাদের মূল কাজ কেউ ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করলে তাকে জরিমানার টিকিট ধরিয়ে দেয়া এবং প্রয়োজনীয় তথ্য লেখা।
এর আগে নিউইয়র্ক শহরে এসে অনেক বাংলাদেশীই ট্যাক্সি ড্রাইভারের কাজ নিতেন। কিন্তু এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।
ট্রাফিক এজেন্ট ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট রবার্ট কসর বলেন, গত এক দশকে নিউইয়র্কে ট্রাফিক এজেন্ট হিসেবে কাজ নিয়েছেন প্রায় ৪০০ বাংলাদেশী অভিবাসী।
ট্রাফিক এজেন্ট হিসেবে তারা বছরে ২৯ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ২৩ লাখ টাকা টাকা) বেতন পান। এছাড়া রয়েছে আকর্ষণীয় ইন্স্যুরেন্স ও পেনশন সুবিধা।
এখানে চাকরি পাওয়াও অনেক সহজ। এজন্য নাগরিকত্ব থাকার দরকার নেই। উচ্চ মাধ্যমিক পাস হলে এবং যুক্তরাষ্ট্রে কাজের অনুমতি থাকলে সহজেই পাওয়া যায় এই চাকরি। এজন্য আবাসিক অনুমতি থাকারও দরকার নেই।
বাংলাদেশে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে কাজ করতেন শেখ জামান। তিনি এখন নিউইয়র্ক পুলিশের ট্রাফিক এজেন্ট। নিউইয়র্কে এসে প্রথমে তিনি বিমানবন্দরে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে চাকরি নিলেও এরপর তিনি এই পেশায় চলে আসেন।
জামান দেখতে পান যে, অনেক বাংলাদেশী নিউইয়র্ক পুলিশের ইউনিফরম পরে শহরময় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করলে জরিমানার টিকিট ধরিয়ে দিচ্ছেন।
তারা পুলিশের ইউনিফরম পরে গর্বভরে দেশের স্বজনদের কাছে ছবি তুলেও পাঠাচ্ছেন।
জামানও আগ্রহী হলেন। এরপর স্বদেশীদের সহায়তায় অতিসহজেই ২০০৮ সালে তিনি ট্রাফিক এজেন্টের চাকরি পেয়ে যান।
জামান বলেন, ‘আমি আমার এই চাকরিটি ভালোবাসি। আমি এই পেশাককে সম্মান করি। কেউই জরিমানার টিকিট পেতে চায় না। কিন্তু আমি চাকরিটি পছন্দ করি। এটা আমাকে নিরাপত্তা দিয়েছে। আমি আনন্দিত।’
শওকত খান জানান, তার হাত ধরেই বহু বাংলাদেশী এ পেশায় এসেছেন। আগে অনেকের ধারণা ছিল সরকারি চাকরি পেতে হলে আমেরিকান বংশোদ্ভূত হতে হবে। কিন্তু সেটি ভুল ছিল।
শওকত বলেন, ‘আমার যোগদানের পরপরই এ পেশার দরজা বাংলাদেশীদের জন্য খুলে যায়।’
বাংলাদেশীরা যাতে এ পেশায় অংশগ্রহণ করেন, সেজন্য সেমিনারের আয়োজন করেন ট্রাফিক এজেন্ট হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশীরা।
নিউইয়র্কে ১৬ দিন আগে আসা শামিম আল মামুন জানান, সেমিনারে যোগদান করার পর ট্রাফিক এজেন্টের চাকরির প্রতি তিনি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
শওকত খান জানান, গত কয়েক বছরে যারা ট্রাফিক এজেন্ট হিসেবে যোগদান করেছেন, তাদের মধ্যে প্রায় ১০০ জনই এখন পুলিশ অফিসার পদে উন্নীত হয়েছেন।
এর আগে বাংলাদেশীরা নিউইয়র্কের হলুদ ট্যাক্সি ক্যাবের ড্রাইভার হিসেবে অন্য দেশকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। বর্তমানেও এ শহরে দু’শতাধিক বাংলাদেশী ট্যাক্সি ড্রাইভার রয়েছেন।
তবে এখন ট্রাফিক এজেন্টের চাকরিই বাংলাদেশীদের অধিক পছন্দ। ২৪ বছর বয়সী ট্যাক্সি ড্রাইভার আবদুল হাফিজ বলেন, ‘আমি ট্যাক্সি চালাই; কিন্তু আমার মনে হয় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার চাকরিটি আরও ভালো।’
ট্রাফিক এজেন্ট হিসেবে চাকরি করছেন বাংলাদেশী মাহমুদা হাসিন। তিনি বলেন, ‘এটা অত্যন্ত সম্মানজনক চাকরি।’
তিনি জানান, তার সঙ্গে নীল ইউনিফরম পরে তার স্বামীও ছবি তুলে দেশের আত্মীয়স্বজনদের কাছে পাঠিয়েছেন।
শাহ নওয়াজ নামের আরেক বাংলাদেশী ট্রাফিক এজেন্ট বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশীদের কাছে ট্রাফিক এজেন্টের চাকরিটি এখন গর্বের উেস পরিণত হয়েছে।’
শাহ নওয়াজ তার ১৪ বছর বয়সী ছেলে সাদমানের ছবি দেখিয়ে বলেন, ‘সে বলে যে, সে পুলিশ অফিসার হবে। আমি বলি, নিউইয়র্ক পুলিশে চাকরি করাটা সম্মানজনক কাজ, কেন হবে না!’