অ্যাঙ্গোলার মুসলমানদের প্রকৃত অবস্থার তদন্ত করবে ওআইসি
গত ২৪ নবেম্বর অ্যাঙ্গোলায় পবিত্র ইসলাম ধর্ম নিষিদ্ধের খবরে দেশটির উপর মুসলিম বিশ্বের দৃষ্টি পড়ে। বিশ্বব্যাপী উঠে নিন্দার ঝড়। উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক মুসলিম সংস্থাসমূহ। এর আগে বার্মা এবং ফিলিপাইন মুসলিম সংখ্যালঘুদের উপর নজিরবিহীন নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের ধিক্কার কুড়িয়েছিল।
পরবর্তীতে অ্যাঙ্গোলা কর্তৃপক্ষ অবশ্য দেশটিতে ইসলাম ধর্ম নিষিদ্ধের খবর অস্বীকার করে। তবে এতে আশ্বস্ত নয় ওআইসি সহ আন্তর্জাতিক মুসলিম অভিভাবক সংস্থাসমূহ। ওআইসি ইতোমধ্যে এ্যঙ্গোলার মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার হরণ, মসজিদ ধ্বংস এবং মুসলিম নির্যাতনের খবরে উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি দেশটিতে মুসলমানদের প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য একটি তদন্তকারী দল পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। ওআইসি মহাসচিব একমেলেদ্দিন এহসানুগ্লু স্পষ্ট করে বলেছেন, ইসলাম ধর্ম নিষিদ্ধের ধরনের কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তা মেনে নেয়া হবে না। সম্প্রতি আল জাজিরা চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘অ্যাঙ্গোলার কর্মকর্তারা খবরটি অস্বীকার করার পর আমরা প্রকৃত ঘটনা তদন্তের জন্য তদন্তদল পাঠাচ্ছি। তারা প্রকৃত অবস্থার তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদান করবে, যাতে তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়।’
তিনি জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন, দক্ষিণ আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট কমিউনিটি এবং কমিউনিটি অব পর্তুগীজ ল্যাঙ্গুয়েজ কান্ট্রিজ (সিপিএলপি)-কেও বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করে অ্যাঙ্গোলায় প্রস্তাবিত ইসলাম ধর্ম নিষিদ্ধের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত রোববার আফ্রিকান এবং অ্যাঙ্গোলার সংবাদ সংস্থা ও সংবাদপত্রসমূহে অ্যাঙ্গোলার সংস্কৃতি মন্ত্রী রোসা ক্রুজের একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে দেশটিতে ইসলাম নিষিদ্ধের খবরটি প্রকাশিত হয়। রোসা ক্রুজ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘ইসলাম ধর্মকে বৈধতা দেয়ার যে প্রক্রিয়া বিচার ও মানবাধিকার মন্ত্রণালয় শুরু করেছিল তা অনুমোদিত হয়নি। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মসজিদসমূহ বন্ধ থাকবে।’ এই মন্ত্রীর সর্বশেষ সুনির্দিষ্ট বক্তব্য হচ্ছে: অবৈধ ধর্মীয় উপদল সমূহ নিষিদ্ধ করার ধারাবাহিক উদ্যোগ চলছে।
এই খবর মুসলমানদের মধ্যে প্রচ- প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাঙ্গোলার প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য তদন্তদল পাঠানোর আহবান জানিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর মুসলিম স্কলারস (আইইউএমএস) এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার জন্য অ্যাঙ্গোলা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি এ ধরনের নজিরবিহীন ঘটনার নিন্দা জানানোর জন্য জাতিসংঘ এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রতি আহবান জানিয়েছে।
পরবর্তীতে অ্যাঙ্গোলার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক ম্যানুয়েল ফারনান্দোসহ কয়েকজন কর্মকর্তা খবরটি সঠিক নয় বলে দাবী করলেও মুসলিম কাউন্সিল অব অ্যাঙ্গোলা’র প্রেসিডেন্ট ডেভিড জ্যা এএফপির সাথে এক সাক্ষাৎকারে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অ্যাঙ্গোলার ৬০টি মসজিদের সবগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং গত দু’বছরে আটটি মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে।
এই মুসলিম নেতা আরো জানান, জনসম্মুখে মুসলিম নারীদের ওড়না পড়তে দেয়া হয় না। তিনি জোর দিয়ে বলেন অ্যাঙ্গোলার আইনে ইসলামিক প্রতিষ্ঠান সমূহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং এটি দীর্ঘ ধর্মীয় বৈষম্যেরই ধারাবাহিকতা মাত্র।
তিনি আরো বলেন, যে কেউ ইসলাম ধর্মের অনুসরণ করতে চাইবে তাকেই ‘অ্যাঙ্গোলার আইনের বিরুদ্ধাচারী’ হওয়ার হুমকিতে পড়তে হবে।