অবরোধের চতুর্থ দিনে সারাদেশে নিহত ৯
বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে সারাদেশে চলছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের ডাকে চতুর্থ দিনের মতো চলছে রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি। অবরোধের চতুর্থ দিনে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলি ও সংঘর্ষে সাতক্ষীরা ৩ জন, চাঁদপুরে ২ ও চট্টগ্রামে ২ জনসহ মোট ৯ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ।
সাতক্ষীরায় ২ শিবিরকর্মী ও ১ যুবলীগকর্মী নিহত
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সখিপুরে পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষে শিবিরকর্মীসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- শিবিরকর্মী হোসেন আলী (১৯) ও আজিজুল ইসলাম (১৪)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে অবরোধকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। বিজিবির সদস্যরা অবরোধকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করলে দেবহাটা কালিগঞ্জ সড়কে ২০জন গুলিবিদ্ধ হন। পরে এদের মধ্যে দু’জন নিহত হন।
এদিকে, আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫ টার দিকে সাতক্ষীরার মাহমুদপুর বাজারে দূর্বৃত্তদের হামলায় এক যুবলীগকর্মী নিহত হয়েছে। নিহত যুবলীগ কর্মীর নাম গিয়াস উদ্দীন। সে শহরের ইটাগাছা এলাকার মনিরউদ্দীনের ছেলে। সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি ইনামুল হক এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সীতাকুণ্ডে পুলিশের গুলিতে এক বিএনপিকর্মী
মঙ্গলবার মধ্যরাতে সীতাকুণ্ডের বাড়ককুণ্ড ইউনিয়নের শুকলালহাট এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ বিএনপি কর্মী আজ সকালে মারা গেছেন। নিহতের নাম রাসেল (২৬)। তিনি পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি, তার বাড়ি উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামে।
এ ঘটনার পর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে র্যাব পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
চাঁদপুর পুলিশের গুলিতে ছাত্রদল ও শিবিরের ২ কর্মী নিহত
চাঁদপুর শহরের কালিবাড়ি এলাকায় পুলিশের সাথে অবরোধকারীদের সংঘর্ষে ২জন মারা গেছে। আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন। এ ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল বুধবার জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছে বিএনপি।
চাঁদপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মানিকুর রহমান জানিয়েছেন, নিহত রতন শহর ছাত্রদলকর্মী অন্যদিকে সিয়াম ছাত্রশিবির কর্মী। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলার কালীবাড়ী এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নোয়াখালীতে বিএনপিকর্মী নিহত
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদরের পৌরসভা দত্তেরহাট বাজারে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পুকুরে পড়ে বিএনপিকর্মী আবদুস সালাম নিহত হয়েছেন। এতে গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন ২০ জন। আহতদের নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্বাস্থ কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত বিএনপিকর্মী আব্দুস সালাম (৬০) উপজেলার গোপাই এলাকার হানির মিয়ার ছেলে।
সদর পৌরসভা দক্ষিণসংলগ্ন তিনকোনা পুকুর পাড়ে এ ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৫০ রাউন্ড শটগানের গুলি, ২শ রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে।
চট্টগ্রামে কনটেইনার লরিতে ককটেল নিক্ষেপ, চালক নিহত
নগরীর ইপিজেড থানার সল্টগোলা রেলক্রসিং এলাকায় অবরোধকারীদের ছোড়া ককটেলে একটি কনটেইনার লরিতে আগুন ধরে যায়। এ সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সঙ্গে ধাকা খেলে লরি চালক নিহত এবং দুই জন আহত হন।
সোমবার রাত পৌনে ২টার দিকে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহতের নাম মাহবুব (২৫)। তিনি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নুর নবীর ছেলে।
জানা যায়, ইপিজেডে যাওয়ার সময় কনটেইনার লরিটিকে লক্ষ্য করে অজ্ঞাত অবরোধকারীরা ককটেল নিক্ষেপ করে। এতে লরিটিতে আগুন ধরে যায়। চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে সড়কের পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এদিকে, পটুয়াখালীতে অবরোধকালে আবদুস সাত্তার নামে এক অগ্নিদগ্ধ এক ব্যক্তি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
নির্দলীয় সরকারের দাবিতে এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার, আটক ও হয়রানি, মিথ্যা মামলা ও একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে শনিবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে দ্বিতীয় দফায় ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। তবে সোমবার আরো ৫৯ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি বাড়ানো হয়। মোট ১৩১ ঘণ্টার এই অবরোধ কর্মসূচি চলবে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত।