কাদের মোল্লার এখন ভরসা কেবল রাষ্ট্রপতি

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা তাঁর রায় পর্যালোচনার কোনো অধিকার পাবেন না বলে নিশ্চিত করে জানিয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়। তবে এখনও ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ আছে জামায়াত নেতার। রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করলেই কেবল এখন পার পাবেন জামায়াত নেতা। তবে এ জন্য অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হবে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলকে।
আইন অনুযায়ী কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা সুপ্রিম কোর্ট থেকে প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যাবে। এরপর তা যাবে জেলখানায়। এই পরোয়ানা পৌঁছার পর অপরাধের দায় স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন কাদের মোল্লা। নাচক হয়ে গেলে সাত থেকে ২১ দিনের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর হবে কাদের মোল্লার।
মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অপরাধ প্রমাণ হওয়ার পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সে সময় ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ না থাকায় এ নিয়ে দেশব্যাপী তৈরি হয় ক্ষোভ। বিশেষ করে তরুণরা নেমে আসে রাস্তায়। গণজাগরণ নামে এই আন্দোলন চলাকালে আইন পাল্টে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ দেয় সংসদ।
পরিবর্তিত আইনে আপিলের পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর দুটি অপরাধে কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয় আন্তর্জাতিক আপিল বিভাগ। আড়াই মাসেরও বেশি সময় পর বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয় পূর্ণাঙ্গ রায়। ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান জানিয়েছেন, আপিল বিভাগের এই রায়ই চূড়ান্ত। তিনি বলেন, একটি বিশেষ আইনের অধীনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে এবং এই আইনে রায় পর্যালোচনার কোনো বিধান নেই। ফলে জামায়াত নেতার এখন রায় কার্যকর হওয়ার প্রস্তুতি নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, কাদের মোল্লা এখনও রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করলে মুক্তি পাবেন এই জামায়াত নেতা। তবে এ জন্য আগে মুক্তিযুদ্ধের সময় করা অপরাধ স্বীকার করতে হবে কাদের মোল্লাকে।
প্রশ্ন হচ্ছে কাদের মোল্লা কি তার অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চাইবেন? জামায়াত নেতাদের কাছে এই প্রশ্নের জবাব পাওয়ার সুযোগ নেই। তবে ফাঁসির দণ্ড হওয়ার পর এই জামায়াত নেতার স্বজনরা জানিয়েছেন, অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চাইবেন না কাদের মোল্লা।
রাষ্ট্রপতির কাছে কাদের মোল্লা ক্ষমা চাইলে সেটা জামায়াতের জন্য বড় ধরনের রাজনীতির ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। কারণ, একাত্তরের অপরাধের দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাইলে জামায়াতের আর কিছু বলার থাকবে না। আর এই ক্ষমা চাইলেও রাষ্ট্রপতি আদৌ তা মঞ্জুর করবে কি না, এই শঙ্কা্ও আছে জামায়াতের মধ্যে।
কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কীভাবে কার্যকর হবে, জানতে চাইলে কাশিমপুর কারাগারের পার্ট-২ এর জেলার মুজিবুর রহমান ঢাকাটাইমস টোয়েন্টি ফোর ডটকমকে বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর কাদের মোল্লাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়েছে। সরকারের পরবর্তী নির্দেশ আসা পর্যন্ত তিনি সেখানেই থাকবেন’।
কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হলে এটাই হবে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে প্রথম দণ্ড কার্যকর। ট্রাইব্যুনাল এরই মধ্যে আরও ছয়জনকে ফাঁসির রায় দিয়েছে। কাদের মোল্লা ছাড়া এরা হলেন জামায়াতের নায়েব আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহম্মদ কামারুজ্জামান, মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের দুই নেতা চৌধুরী মুইনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জান খান, বাচ্চু রাজাকার নামে পরিচিত জামায়াতের সাবেক নেতা আবুল কালাম আযাদ এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এদের মধ্যে আপিল বিভাগে সাঈদীর মামলাও শেষ পর্যায়ে আছে। –ঢাকাটাইমস২৪

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button