সংগ্রামই একদলীয় গণতন্ত্রের কবল থেকে মুক্তির একমাত্র পথ : লন্ডনে সিরাজুর রহমান

Londonবিশিষ্ট কলামিস্ট ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ যুক্তরাজ্যের প্রধান উপদেষ্টা সিরাজুর রহমান বলেছেন, সংগ্রামই একদলীয় গণতন্ত্রের কবল থেকে মুক্তির একমাত্র পথ।
তিনি গতকাল শনিবার লন্ডনের একটি রেস্তোরাঁয় সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি বাতিলের প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, একটি সাজানো মামলায় বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে খালাস দিয়েছে আদালত। কিন্তু সরকারের প্রভাবিত দুর্নীতি দমন কমিশন এই খালাসের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ গত সাত বছরে দু’টি সরকার মিলে সব রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করেও প্রমাণ করতে পারেনি। সরকার ও সরকারি দল তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ না পেয়ে এখন মরিয়া হয়ে গেছে। তাকে কলঙ্কিত করতে নানা মিথ্যা অভিযোগ সাজানোর পাশাপাশি আজ্ঞাবহ দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্লজ্জভাবে দলীয় এজেন্ডায় ব্যবহার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ যুক্তরাজ্যের প্রধান উপদেষ্টা সিরাজুর রহমান বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। তা না হলে দেশ আধিপত্যবাদের থাবা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেনা। তিনি বলেন, এশিয়ান হাইওয়ে বাংলাদেশ হয়ে মিয়ানমার যেত। এ সরকার এশিয়ান হাইওয়েকে বনগাঁও ও বুড়িমাড়ি দিয়ে আসামের সাথে যুক্ত করেছে। সাম্প্রতিক চুক্তিতে ভারতকে সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথ বিনামূল্যে ব্যবহার করতে দিয়েছে।
বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে সুজাতা সিংয়ের নাক গলানো প্রসঙ্গে সিরাজুর রহমান বলেন, সুজাতা সিংয়ের বাবা ছিলেন ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর পরিচালক। তিনি সিকিমকে ভারতের অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন। সুজাতা সিং অস্ট্রেলিয়ায় থাকার সময় ভারত সরকারকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ হতে সহায়তা করতে অস্ট্রেলিয়া সরকারকে ব্লাকমেইল করে বাধ্য করে।
সিরাজুর রহমান বলেন, স্ট্যালিনের একদলীয় গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সারা বিশ্ব আন্দোলন করেছে, আইয়ুব খানের একদলীয় গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি। নেলসন ম্যান্ডেলা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রথমে আইনগত প্রক্রিয়া নিয়েছিলেন কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। দীর্ঘকাল কারা ভোগ করেছেন। শেষ অবস্থায় তিনি সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছেন।
সিরাজুর রহমান প্রশ্ন রাখেন, দেশে এখন যা চলছে তাকে গনতন্ত্র বলা যায় কিনা? স্ট্যালিন-আইয়ুব খানের আদলে আওয়ামী একদলীয় গণতন্ত্রের কবল থেকে মুক্তির একমাত্র পথ সংগ্রাম।
তিনি আরো বলেন, পুলিশের মাঝে একে ৪৭ আর চাপতি হাতে দলীয় ক্যাডার মানুষকে আক্রমণ করছে। একটা মানুষের প্রাণহানীও গোটা মানব জাতির জন্য বেদনাদায়ক। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ শাহবাগে বাসে আগুন দিয়ে বিএনপি-জামায়াতকে দোষারোপ করার চেষ্টা করেছে। বাসে আগুন লাগায় আওয়ামী লীগ।
তিনি বলেন, রাজপথে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো প্রতিবাদী মানুষের উপর বল প্রয়োগ করছে। সরকার রাজপথে বল প্রয়োগের পাশাপাশি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতার করছে। সিনিয়র ও প্রবীন রাজনীতিকদের গ্রেফতারের পর আজ্ঞাবহ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে ঠুনকো মামলা দিয়ে রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে। যা অতীতে কখনো কল্পনাও করা যেতো না।
সিরাজুর রহমান বলেন, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার মওদুদ, ব্যারিস্টটার রফিকুল ইসলাম মিয়ার মত প্রবীন রাজনীতিবিদদের রিমান্ডে পাঠাচ্ছে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এতেই প্রমাণ করে আমাদের বিচার বিভাগ কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতিবাদী মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে রাষ্ট্রীয় বাহিনী। এতে প্রতিদিনই রাজপথে ঝড়ে যাচ্ছে অনেক তাজা প্রাণ। নিয়মিত স্বাভাবিক প্রতিবাদের রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় নাশকতা বাড়ছে।
বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ যুক্তরাজ্যের আহব্বায়ক অধ্যাপক ড. কে এম এ মালিক বলেন, অপরাধ রোধ করা সরকারের কাজ। অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধের যথাযথ তদন্ত করা অপরাধীকে ধরা ও শাস্তি দেয়া সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু মিথ্যা অভিযোগ করে ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে সরকার বিশ্বাস যোগ্যতা হারিয়েছে।
প্রশ্নত্তোর পর্বে আন্দোলনে প্রাণহানী ও কারখানার ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার আজিজ বলেন, নেলসন ম্যান্ডেলার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তিনি স্বীকার করে বলেছিলেন ‘ভায়োলেন্স আমাদের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু আমাদের অবস্থা আজ এমন পর্যায়ে যে, হয় আমাদের মারা যেতে হবে নতুবা আমাদের সংগ্রাম করতে হবে।’ গত পাঁচ বছরে বিডিআর হত্যাসহ বিভিন্ন সময়ে নির্বিচারে মানুষ মারা হয়েছে। ৫ জানুয়ারী একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ’৭৫-এ গণধিকৃত বাকশালকে পুনঃস্থাপনের চেষ্টা করে আমাদের সংগ্রাম করতে বাধ্য করা হচ্ছে। জনগণ এখন সিদ্ধান্ত নেবে যে তারা চির দাসত্ব স্বীকার করবে, না নব্য বাকশালের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ যুক্তরাজ্যের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক নসরুল্লাহ খান জুনায়েদ, যুগ্ম-আহ্বায়ক আখতার মাহমুদ, শেখ নিউজ ডট কমের সম্পাদক শেখ মহিউদ্দিন, সাংবাদিক সোফিয়া রহমান, ব্যারিস্টার শাজাহান, ব্যারিস্টার আশরাফ চৌধুরী, ব্যারিস্টার আলিমুল হক লিটন, অ্যাডভোকেট ভূঁইয়া সোহাগ, শাহরিয়ার মেহেদি ফেরদৌস, ব্যারিস্টার রহমত আলী, ব্যারিস্টার আবুল সালা, ব্যারিস্টার শহিদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট সৈয়দ আলী রাজা, ইঞ্জিনিয়ার সাজেদুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button