‘বালি সম্মেলনে বাংলাদেশ লাভবান হয়েছে’
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বালি সম্মেলনে যে সব সিদ্ধান্ত হয়েছে তাতে বাংলাদেশ লাভবান হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ। তিনি বলেন, “স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর বাজারে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা পাবে। এর ফলে বাংলাদেশের রফতানি আরো বাড়বে এতে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে ডব্লিউটিওর বালি সম্মেলন শেষে দেশে ফিরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
গত ৩-৬ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ডব্লিউটিও মন্ত্রী পর্যায়ের নবম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বাণিজ্য মন্ত্রী জিএম কাদেরের পরিবর্তে ১৬ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নের্তৃত্ব দেন বাণিজ্য সচিব। এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা এতে যোগ দেন।
বাণিজ্য সচিব বলেন, বালি প্যাকেজে তিনটি ইস্যু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই ইস্যু তিনটি হচ্ছে- ডেভেলপমেন্ট ইস্যু, বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তি ও কৃষি। এগুলোর মধ্যে ডেভেলপমেন্ট ইস্যুর আওতায় চারটি স্বল্পোন্নত দেশের ইস্যু ও মনিটরিং মেকানিজম রয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশের চারটি ইস্যু হচ্ছে- শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা, রুলস অব অরিজিন, সার্ভিসেস ওয়েভার বাস্তবায়ন ও কটন ইস্যু। এছাড়া দোহা রাউন্ডের এজেন্ডাভুক্ত অবশিষ্ট ইস্যুগুলো নিষ্পত্তির লক্ষে সুষ্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট একটি ওয়ার্ক প্রোগ্রাম তৈরি করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশের চারটি ইস্যুর আওতায় প্রাপ্য সুবিধাগুলো ব্যাখ্যা করে মাহবুব আহমেদ বলেন, “শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, হংকং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেসব উন্নত দেশ এখনো কমপক্ষে ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত দেয়নি, তারা ডব্লিউটিও’র আগামী সম্মেলনের আগে এসব সুবিধা বাড়াবে।”
অন্যদিকে রুলস অব অরিজিন সহজ ও স্বচ্ছ করার জন্য প্রথমবারের মতো একটি গাইড লাইন তৈরি করা হয়েছে। যদিও এই গাইড লাইন অনুসরণ বাধ্যতামুলক নয়, তবুও এটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে স্বল্পোন্নত দেশগুলো।
স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষে গৃহীত সার্ভিসেস ওয়েভার বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সার্ভিসেস কাউন্সিলকে ওয়েভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি এলডিসি গ্রুপের পক্ষ থেকে যৌথ অনুরোধলিপি প্রণয়ন করা হবে এবং এরপর একটি উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে উন্নত দেশগুলো কোন কোন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার সুবিধা দেবে তা জানাবে।”
তুলা ইস্যু প্রসঙ্গে সচিব বলেন, “এলডিসিভূক্ত তুলা উৎপাদনকারী চারটি দেশ রয়েছে। এরা হচ্ছে বেনিন, বুরকানি ফাসো, মালি ও চাঁদ। এই চার দেশের জন্য তুলা রফতানিতে বাজার সুবিধা বাড়ানোর লক্ষে তুলার জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান এবং উন্নত দেশে তুলা উৎপাদনের ওপর ‘ডোমেস্টিক সাপোর্ট’ প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে।”
মনিটরিং মেকানিজম সম্পর্কে তিনি বলেন, “ডব্লিউটিও’র বিভিন্ন চুক্তির আওতায় বিদ্যমান ‘স্পেশাল অ্যান্ড ডিফারেনশিয়াল ট্রিটমেন্ট’ (এস অ্যান্ড ডি) বাস্তবায়ন মনিটরিং করার একটি মেকানিজম প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে এস অ্যান্ড ডি ট্রিটমেন্ট সঠিক বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। প্রায় দশ বছর নেগোসিয়েশন চালানোর পর এটি পাস করা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি জানান ।”
তিনি বলেন, “বালি সম্মেলনে বাণিজ্য সহজিকরণ বিষয়ে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ ও সময় কমবে এবং ব্যবসা আরো প্রতিযোগিতা মূলক হবে। কৃষি সম্পর্কিত বিষয়ে খাদ্য নিরাপত্তার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে পাবলিক স্টকহোল্ডিংয়ের আওতায় উন্নয়নশীল দেশ কর্তৃক খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিতরণ করার লক্ষ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন মেকানিজম প্রবর্তনে সব সদস্য দেশ একমত হয়েছে। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত একটি স্থায়ী ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। অন্তর্বর্তীকালীন মেকানিজমের আওতায় শর্ত সাপেক্ষে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ভর্তুকি দেওয়া হলেও তা ‘ডিসপিউট সেটেলমেন্ট’-এ কোনো মামলা করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ”
বাণিজ্য সচিব বলেন, “লেসেথো ও হাইতি সব সময় বাংলাদেশ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করে আসছে এবং এরফলে অনেক ইস্যুতে প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয় না। এঅবস্থায় দেশ দুটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে এলডিসি’র স্বার্থে এক সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।”
সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি বাণিজ্য সচিব ই্উএসটিআর, ইইউ ট্রেড কমিশন, এলডিসি কো-অর্ডিনেটর নেপাল , ওমান, চিলি, কোরিয়া, প্যারাগয়ে, চীন, মরক্কো, সলোমন আইল্যান্ড, এলডিসি ফেসিলিটেটর ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত স্টিফেন স্মিথের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য সচিব জানিয়েছেন।