‘‘অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে সেনাবাহিনী হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না’’
বাংলাদেশে সহিংসতা আরো বাড়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও সরকার এবং বিরোধী উভয় পক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে অটল থাকায় দেশটির সেনাবাহিনী হয়তো বেশি সময় হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। বাংলাদেশে এমনটা ঘটে থাকে। শনিবার প্রভাবশালী মার্কিন ম্যাগাজিন ফরেন পলিসির এক প্রতিবেদন এ কথা বলা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের সহিংস রাজনৈতিক অচলাবস্থা সবেমাত্র শুরু হয়েছে। জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি চলতি সপ্তাহেই কার্যকর করা হতে পারে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
জ্যাক স্কুবির লেখা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, কিয়েভ ও ব্যাংককের সরকারবিরোধী বিক্ষোভের দিকে বিশ্বের দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকলেও কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক অচলাবস্থা বিরাজ করছে, সেটা অনেক কম আলোচিত হচ্ছে।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছে।
এতে বলা হয়, বিএনপির মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। চূড়ান্ত সময় শেষ হয়ে গেলেও শেখ হাসিনা ক্ষমতায় রয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে বলা যায়, বাংলাদেশের সহিংস রাজনৈতিক অচলাবস্থার সবেমাত্র সূচনা হয়েছে।
বিক্ষোভকালে সাম্প্রতিক সময়ে অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন।
ফরেন পলিসি জানায়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থকদের মধ্যকার সংঘর্ষে ওই সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন স্থগিত করতে বাধ্য হয় এবং এরপর সেনাসমর্থিত সরকার গঠনের পথ সুগম হয়। পরের বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় লাভ করে।
স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিক্রমার জন্য বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও বিরোধী দলের জয়ের সম্ভাবনায় ভীত হয়ে শেখ হাসিনা তা বাতিল করেন। এর জবাবে বিএনপি নেতারা বলে আসছেন, নির্বাচনের আগে হাসিনা ক্ষমতা ত্যাগ না করলে তারা ভোটে অংশ নেবেন না।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার জন্য গত অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কথা বলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়নি। এরপর বিএনপি দেশব্যাপী ধর্মঘট ও অবরোধের ডাক দেয়।
এতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডাদেশের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, চলতি সপ্তাহান্তেই তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হতে পারে। কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হলে আরো ভয়াবহ আকারে রক্তপাত হতে পারে।
ফরেন পলিসি জানায়, সহিংসতা বন্ধের কোনো লক্ষণ না দেখা যাওয়ায় সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি উঠে আসে তা হলো সামরিক বাহিনীর ভূমিকা কী হবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী কোনো আগন্তুক নয়। এ দেশে অনেকবার সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। ২০০৭ সালের নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এবং সামরিক-সমর্থিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। এর দুই বছর পর আওয়ামী নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জেনারেলরা সতর্ক দূরত্ব বজায় রাখেন।
এতে বলা হয়, নির্বাচন হতে মাত্র এক মাস বাকি এবং সহিংসতা তীব্র হওয়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও উভয় পক্ষের নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ অবস্থানে অটল রয়েছেন। তবে সেনাবাহিনী হয়তো দীর্ঘ সময় হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। এটাই যেন বাংলাদেশের নিয়ম।