মধ্যরাতের ক্রাইসিস রোড টু কূটনীতিকপাড়া
মিনা ফারাহ:
হচ্ছেটা কী?
সজীবের সাক্ষাৎকার, মনমোহনের থাবা, চীনের উদ্বেগ, ডিগবাজির বেঈমানি, তারানকোর প্রত্যাবর্তন, ৩০০ আসনে মনোনয়ন… দারুণ জমেছে মধ্যরাতের কূটনীতিকপাড়া। মধ্যরাত পর্যন্ত বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে দরকষাকষি। হচ্ছেটা কী. জানতে চেয়ে রওনা হলাম রোড টু ক্রাইসিস ধরে। মধ্যরাতের কূটনীতিকপাড়ার বন্ধ দরজার ভেতর থেকে অদ্ভুত হাসির আওয়াজ। গ্লাসের টুংটাং শব্দ। ফিরে যেতে যেতে ভাবছিলাম, ওয়াশিংটনের বাসে এই মাপে পেট্রলবোমা মারার পরদিন একতরফা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র ওবামা দিতেন কি না।
ইতিহাসের মানসিক বিকারগ্রস্ত ‘জারদের’ কথা পড়েছি। ‘পিটার দ্য গ্রেট’ নিজ হাতে তার সন্তানকে হত্যা করে উল্লাস করেছিল। ‘আইভান দ্য টেরিবল’রা মানুষ খুন করে মতার আনন্দ উপভোগ করত; কিন্তু শত শত উন্নয়ন বিলবোর্ড দিয়ে বাংলাদেশকে ঘিরে ফেললেই কি রানা প্লাজার একটি মৃত্যুর পওে যুক্তি দাঁড় করানো যাবে? সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এক মিনিটের ইচ্ছাতেই সব সমস্যার সমাধান।’ ১৬ কোটি মানুষের ইচ্ছার চেয়ে এক ব্যক্তির এক মিনিটের ইচ্ছাকেই তিনি প্রাধান্য দিলেন। বুদ্ধিজীবীরা যদি উল্টাপাল্টা বলেন, দলে দলে আত্মহত্যা ছাড়া উপায় নেই। দৈত্য সৃষ্টি করেছেন তারাই, সংবিধানের শাপ মোচনের দায়িত্ব তাদেরই। দেশ যখন প্রায় মিসর, তখন যারাই সংলাপ আর সমঝোতার দুঃস্বপ্ন দেখছেন, আমার সন্দেহ, তাদের বাস্তবতার উপলব্ধি কতটুকু? ডুইং নাথিং ফ্রন্টের সংলাপ তাগিদওয়ালাদের আক্কেল দাঁতটি কখনোই গজাবে কি? শুনছি আবারো আসছেন তারানকো। এই দাগে গোয়েবলসের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ তারাই সৃষ্টি করেছেন। জাতিসঙ্ঘের পুলিশ ফেরত পাঠানো কিংবা গার্মেন্ট বন্ধের হুমকিটুকু দিলেই এক মিনিটে সমাধান। এই অকাট্য প্রমাণ অন্য দেশের বেলায় বহুবার দেখিয়েছে পশ্চিমারা। তাহলে এখানে ব্যতিক্রম কেন? প্রশ্ন, আর কত রানা প্লাজা কিংবা মানুষ পুড়ে মরলে বাংলাদেশ তার ‘জার’মুক্ত হবে?
অথচ বাংলাদেশের সৈন্য দিয়ে আফ্রিকার সুষ্ঠু নির্বাচনগুলো করাচ্ছেন বান কি মুন। নিজের ঘরে আগুন জ্বালিয়ে জাতিসঙ্ঘে প্রতি বছরই বিশ্বশান্তির ফর্মুলা দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। দিল্লির চাপে দলে দলে বিক্রি হচ্ছেন রাজনীতিবিদেরা। বড় বুদ্ধিজীবীরা টকশোকে সমাধানের ত্রে বানিয়ে বিভ্রান্তি আরো বাড়াচ্ছেন। মাঝারি ও ুদ্র বুদ্ধিজীবী অনেকেরই মুদি দোকানের মতা না থাকা সত্ত্বেও মধ্যরাতের টকশোতে ফাটাচ্ছেন রাজনীতির বড় বড় বন্দুকের ফাঁকা আওয়াজ। বেশির ভাগেরই আলোচনা যেন বন্দুকের ফাঁকা আওয়াজ। শুরু থেকেই মানসকন্যার আদর্শ, হিটলারের ‘গেস্টাপো’ আর ‘এসএসআর বাহিনী’র মতো ভয়ঙ্কর থেকে ভয়ঙ্করতর। ‘এই আমলে প্রাতিষ্ঠানিক অ্যারিস্টটলরা শাহবাগে গিয়ে মোমবাতি প্রজ্বলন করেন। জনপ্রতিনিধিরা সংশোধনী দিয়ে এর জিহ্বা কেটে ফেলেন।’ এ দিকে ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে রাজনীতির পাগলা ঘণ্টা বাজিয়ে দিলেন শেখ হাসিনা। রানা প্লাজার জন্য প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে দায়ী করলেও একটি ভবন ধসে পড়লে ৫৪ জনের মৃত্যুর দায়িত্ব একাই কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করলেন লাটভিয়ার প্রধানমন্ত্রী। যে কারণে মোবারক ও মুরসির বিচার হচ্ছে, এরচেয়ে বড় কারণ বাংলাদেশে সৃষ্টি হলেও পশ্চিমাদের নতজানু পলিসির কারণ, সর্বাগ্রে সাম্রাজ্যবাদের সুবিধা নিশ্চিত করা। তাদের চাই বঙ্গোপসাগর, সমুদ্রের তলের খনিজসম্পদ এবং প্রায় এক কোটি গরিবের সস্তা শ্রম, ঘাম, পুঁজ, রক্ত, ছাইয়ের সবটুকু। যাদের শক্তিতে সরকারের গায়ে এত জোর, তাদেরকে আমরা চিনি। ওদের প্রয়োজন কারজাই। মানুষ কি এখনো জানে না, কী হতে যাচ্ছে এবং কেন? টলস্টয় বলেছেন, ‘উত্তর চাইলে থামো, চার দিকে তাকাও।’ থামলাম; কিন্তু মধ্যরাতের কূটনীতিকপাড়ায় এসে হতাশা আরো বাড়ল।
যেতে যেতে ভাবছিলাম, ২২ বছর ধরে সাম্রাজ্যবাদীদের খপ্পরে বাংলাদেশকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এমন এক রাজনৈতিক রেড ডিস্ট্রিক্ট যে পল্লীর রাষ্ট্রদূতদের বাসায়, সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে, দিল্লির মসনদে অবাধে বেচাকেনা হচ্ছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। জরাজীর্ণ রাজনৈতিক পল্লীর কুষ্ঠাবস্থায়, নব্য যুবরাজের ৮৬২ মিলিয়ন ডলারের খবর নিয়ে জোর গুজব। এর পরেই উধাও, নীরব ফেসবুক। পঙ্কজের সাথে ২ ঘণ্টা বৈঠকের পরই কলকাতার টেলিগ্রাফ পত্রিকায় জানিয়ে দিলো দিল্লির ব্লুপ্রিন্ট। ‘বাংলাদেশে এমন কোনো জেনারেল বা সেনাকর্মকর্তা নেই যার বা যাদের সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর খায়েশ আছে। সফল একটি অভ্যুত্থান ঘটাতে হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছতে হবে; কিন্তু গণভবনে যে প্রহরীরা রয়েছেন, তারা শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত। তারা কাউকে গণভবনে প্রবেশ করতে দেবেন না। এ ছাড়া যেকোনো সামারিক অভ্যুত্থানে ব্যাপক রক্তপাত হয়। তাই আমি মনে করি, এমন কোনো সেনা কর্মকর্তা নেই যারা এমন ঝুঁকি নেবেন।’ (মানবজমিন ২৫ নভেম্বর)। এ বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ, বেফাঁস কথাবার্তার মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উদাহরণস্বরূপ বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটেনি, বরং জনমনে দৃঢ় বিশ্বাস ঘটানো হয়েছিল এবং ৩০ বিশেষ কারণে। গণভবনে প্রহরীরা হাসিনার বিশ্বস্ত এবং ঘিরে রেখেছেন, এ কথার অন্তর্নিহিত অর্থ, এখন এমনো মনে হতে পারে যে, সেনাবাহিনীর সেখানে আর প্রবেশাধিকার নেই। হয়তো তলে তলে বিদেশী কর্তৃত্বে চলে গেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এমন ধারণা থেকে আশঙ্কা হয়, ভবিষ্যতে হয়তো রাষ্ট্রের বহু কিছু তাদের দখলে যাবে। তার পরও দেশ বিভাগ আদর্শের মানুষেরা দলে দলে রাস্তায় নামল না। এমনকি ‘সত্যাগ্রহের’ অনুকরণে আওয়াজ পর্যন্ত তুলল না সব ভারতীয় পণ্য বর্জনের। বর্তমানটা একেবারেই ফাঁকা। তাই উত্তর খুঁজতে দ্বারস্থ হলাম অতীতের।
কেন টলস্টয়
রোড টু ক্রাইসিস ধরে হাঁটছিলাম আর ভাবছিলাম, ডেমোক্র্যাট পার্টি একতরফা নির্বাচন করলে কী ব্যবস্থা নিত রিপাবলিকান দল? ১৮৮৬ সালে অহিংস আন্দোলন ডায়েরিতে টলস্টয় লিখেছিলেন, ‘মানুষের পিঠে চড়ে তাকে আমার বোঝা বইতে বাধ্য করি; কিছু দুঃখ প্রকাশ করে বলি, বহনকারীর জন্য আমি যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে রাজিÑ একমাত্র তার পিঠ থেকে উঠে যাওয়া বাদে।’ ১৯০০ সালে ‘বদলে যাও’ ডায়েরিতে লিখেছেন, ‘প্রত্যেকেই প্রত্যেককে বদলাতে চান, শুধু নিজে বদলে যাওয়ার চিন্তা বাদে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মানুষ পুড়ে মরলে তার ভেতরে নাকি খুবই কষ্ট লাগে। তিনি কি বুকে হাত দিয়ে বলবেন, সত্যিই জানেন না! তাহলে কেন পুড়তে দিচ্ছেন? ভয়ে আজকাল টিভি খুলতেও বুক কাঁপে।
এত পোড়া, এত বুলেট, এত বুক খালি দেখতে দেখতে উত্তর পাওয়ার আশায় কিছু ঐতিহাসিক বইয়ের আশ্রয় নিয়েছি। লেখকদের মধ্যে হেনরি ডেভিড থরো, টলস্টয়, ড. কিং…। ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ উপন্যাসের লেখক ‘টলস্টয়’ সম্পর্কে জ্ঞান দেয়ার ধৃষ্টতা আমার নেই। তবে কেন তিনি রাজনীতি এবং ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এতটা প্তি হয়ে ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ কিংবা ‘কনফেশনের’ মতো বইগুলো লিখেছিলেন, এর মধ্যেই বাংলাদেশের অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছি। দুঃখজনক যে, যারা এসব চিন্তা ছড়িয়ে মানুষের উৎকর্ষ করবেন, তারাই শাহবাগে গিয়ে মোমবাতি প্রজ্বলন করেন। জিম জোন্সের দরগার বড় উপাসক এরা, উন্নয়নের বিলবোর্ড দিয়ে ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে ব্যক্তিপূজার যে মাতম তুলেছেন, এই মাপের মধ্যযুগীয় দেবদেবীর উপাসনায় কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে মেধাশূন্যতা। ওদের বডি ল্যাংগুয়েজের হাবভাব, দেশটিকে একটি পরিবারের কাছে বিক্রি করেছি এবং বাংলাদেশের জমিদার এখন একা একজন। তার ইচ্ছাই সব, অন্যের ইচ্ছার কোনোই মূল্য নেই। ফিউডাল সিস্টেমের কথা মনে পড়ে? এই তো ’৪৯ সালের কথা, আইন করে বিলুপ্ত করা হলো জমিদারি প্রথা। পাকিস্তানের চেয়েও ভয়াবহ বহিঃশক্তির কবলে বাংলাদেশের পতাকা। টলস্টয় পড়ে তৈরি হয়েছেন লিংকন-গান্ধীরা, আর ষষ্ঠ শতাব্দীর দেবদেবী উপাসকেরা ঘরে ঘরে ট্রেনিং দিচ্ছেন শামীম ওসমানদের।
ডিগবাজি এরশাদ
বারবার রোড টু ক্রাইসিসে হোঁচট খাচ্ছিলাম। এরশাদমার্কা পরাকাষ্ঠার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিতেন মার্কিন ভোটারেরা? যুক্তি দিয়ে কথা বললে ‘প-বিপ’ শক্তির প্রশ্ন অবান্তর। এবার বলুন, স্বঘোষিত বেঈমান এরশাদের তুলনায় একটি ধর্মভিত্তিক দল কতটা খারাপ! এখন তা প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার দাবি রাখে। লোকটা বেঈমানি না করলে দেশ গৃহযুদ্ধের মুখে পড়ত কি? এর সাথে জোট করে যারাই আবারো মতা লুটের তোড়জোড় করছে, চেতনাবাদী দালালদের নতুন করে চিহ্নিত করার সময় এখনই। ৮৩ বছরের মাথা পচা বৃদ্ধ হয়তো মনে করেন, যমদুয়ারে তার জন্য তালা। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩তে আমার লেখা পড়ে ই-মেইলে জানালেন ডিগবাজি, ‘তোমার কথাই ঠিক, আমরা একটি মেরুদণ্ডহীন জাতি। একমাত্র আল্লাহই বাঁচাবেন, আল্লাহ আছেন।’ আমার প্রশ্ন, আপনার ডিগবাজি মেরুদণ্ডের ওপরে কয় শ’ কোটি টাকার বস্তা চাপিয়ে হাড্ডিগুড্ডি চুরমার করল আওয়ামী লীগ? আল্লাহর নামেও মিথ্যা কথা? এ জন্যই তো পাদ্রি-পুরোহিতদের বিরুদ্ধে টলস্টয় লিখেছিলেন, ‘এরা ঈশ্বরের নামে মিথ্যার বেসাতি করে মানুষ নষ্ট করছে।’ ভেবেছিলাম, এত বড় ধর্ম করে এসেই মন পাল্টাবেন। তিনিই তো বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রিত্ব আমার কাছে বড় নয়।’ অথচ ফিরেই শুরু করে দিলেন মৃত্যুর মিছিল! টলস্টয় কী করে ১৫০ বছর আগেই বাংলাদেশের জারদের কথা জানতেন!
আসল কথা, দেবদেবীদের খাতায় সবাই সুরঞ্জিতমার্কা সংখ্যালঘুদের মতো মেরুদণ্ডহীনÑ কেঁচো। গেস্টাপোর দেয়াল ছাড়া কেউ-ই আজ আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারে না। করুণা হয়, যারা মন্ত্রিত্ব আর অর্থের লোভে দেশ এবং মানুষকে গৃহযুদ্ধের মুখে ঠেলে দিয়ে দলে দলে বাহিনীতে নাম লেখায়। কোনো কোনো মন্ত্রীর যোগ্যতা দেখলে বমি আসে এবং এরাই আমাদের নেতা! সুতরাং কত কোটি টাকায় এরশাদকে খরিদ করল সরকার, প্রশ্ন সেটা নয়; বরং মূল্যবান প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেন অগম্য পল্লী বানিয়ে ছাড়ল এ সরকার। ময়লা শার্ট পরা সাংবাদিক অ্যাক্টিভিস্টকে সাগর-রুনির বিচার চাওয়া প্রতিহত করতে গণভবনে এনে উপদেষ্টার পোশাক পরিয়ে দিলো। কথা না শুনলেই নালিশ দেয় মনমোহনকে। নিকৃষ্ট পল্লীতেও মাসিকে না বলার অধিকার আছে, নৈতিকতাও আছে। মহাজোট সরকার দুর্নীতিবাজ সবার সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এর পরও যারা ঢাকঢোল বাজিয়ে লাঙ্গল মার্কার নমিনেশন কেনে, যারা বেঈমান লোকদের বিরুদ্ধে মিসরের মতো রাস্তায় নামে নাÑ মুখে থুতু মারলেও তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। দেখতে চেয়েছিলাম, এরপর তাকে রাজনীতিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণাসহ গণ-আদালতে বিচার করবে নাগরিক সমাজ। জাতির সাবালকত্ব কার পকেটে?
কেন হাসিনাতঙ্ক
রোড টু ক্রাইসিসের কূটনীতিকপাড়ায় কাদের কণ্ঠ? দার্শনিক হেনরি ডেভিড থরো লিখেছিলেন, ‘আমি বলি না সরকার থাকবে না। বলছি, থাকবে; কিন্তু ভালো সরকার হতে হবে। সেই সরকারই ভালো, যে নাকি কিছুই করে না। মানুষ যখন তৈরি হবে তারাই তখন ঠিক করবে, কী ধরনের সরকার তাদের জন্য প্রয়োজন।’ তিনিই বা কী করে ১৫০ বছর পরের দুই ফাইটিং বেগমের ১৬ কোটি ৬০০ শতাব্দীর দেবদেবী উপাসকদের খবর আগাম জানতেন! ক্রীতদাস প্রথাবিরোধী অহিংস আন্দোলনের পথিকৃৎ এই দার্শনিকের সৃষ্টিÑ লিংকন, টলস্টয়, গান্ধী, মেন্ডেলা, ড. কিং…। ড. কিং বলেছেন, ‘মানবতার শত্র“রা আমাদের মনের ওপর জুলুম চালিয়ে ওদের বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করে।’ সুতরাং এসব পড়ার পর ইতিহাস বুঝব না কেন? এখন বুঝি, কেন চেতনাবাদীরা সত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। কারণ এদের হাত ধরেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো এই দাগে হামলে পড়েছে ভারতীয় আধিপত্যবাদীরা। ’৪৮ আর ‘৬৫-এর ফলোআপ যুদ্ধ। দু’টি যুদ্ধেই কাশ্মির নিতে ব্যর্থ ভারত, আগরতলা ষড়যন্ত্রের সিঁড়ি ধরে এগিয়েছে বহু দূর। ’৭১-এর ডিসেম্বরে তেরো দিনের যুদ্ধ প্রকৃত অর্থে ভারতের যুদ্ধ এবং সেটা ছিল বিগত দু’টি যুদ্ধে কাশ্মির না পাওয়ার প্রতিশোধের শামিল। সিমলা চুক্তি তো ফসল তোলার অকাট্য প্রমাণ। আসল উদ্দেশ্য ’৬৫-এর ১১ দিনের ব্যর্থ যুদ্ধের পর, ’৭১-এ ডিসেম্বরে সফল যুদ্ধের মাধ্যমে সাম্রাজ্য বিস্তার। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখে বলছি, ইতিহাসের সূক্ষ্ম কারণগুলো চিহ্নিত করতে ব্যর্থ বুদ্ধিজীবীরাই জাতির মাথার দুরারোগ্য ক্যান্সার। ৪২ বছর ধরেই অর্থের বিনিময়ে ভুল ইতিহাস লেখানো এবং পড়ানো সত্ত্বেও নীরব তারা। আজ যারা চেতনার ঢোল বাজান, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধে যাননি কোনো কোনো নেতানেত্রী এবং আরো অনেকে, ৩৮ বছর পর ‘চেতনাবাদ’ উত্থানের এটাই কারণ। এদের হাতেই মধ্যযুগীয় রাজনীতির সূচনা। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাজতন্ত্রের যাত্রা শুরু করলে ১৫তম সংশোধনী সেই কালসাপেরই লেজ। সুতরাং ২০০৬ সালে খালেদা যা করলেন, শিা না নিয়ে বরং হিটলারের এসএসআর বাহিনীর মতো উগ্র প্রতিশোধের পথে সরকার। তাদের বডি ল্যাংগুয়েজে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন জার্মান স্বৈরাচারের ভাষা। নেতাদের বক্তব্য গোয়েবলস, আর বোরম্যানদের মতো অগণতান্ত্রিক। বিরোধী দলের সাংবিধানিক অধিকারের বিরুদ্ধে সরকারের ভূমিকা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। বিরোধী দলগুলোর কার্যালয়ের সামনের দৃশ্য, ’৪৪ সালের ‘জার্মান কনসেনট্রেশন’ ক্যাম্প মনে করে ভুল করার মতো। চালাকি করে বিরোধী দল থেকে ভাগিয়ে আনতে ‘বিএনএফ’ খুলে নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে কী না করা হলো! অথচ ‘জনতার মঞ্চ’ দিয়ে দেশ অচল করে দেয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার পালনের তিনটি বছর আমাদের দেখা। একদলীয় নির্বাচন বন্ধে ১৩০ দিন হরতালের সাংবিধানিক অধিকার চর্চায় তখন সারা দেশ তছনছ করে ফেলেছিলেন নেত্রী। ভার্জিনিয়া ফলসে ২০০৯-এর নির্বাচনে জেতার ত্রিমুখী পাঁয়তারা। ১/১১-এর সরকার ২৮ অক্টোবরে ১১ জনকে পিটিয়ে মারার বিচার শুরু করলে শেখ সেলিমকে রিমান্ডে নিয়ে উত্তম-মধ্যমও দিয়েছিল, যা ইউটিউবে দেখা যায়। তখন তিনি হরতালের বিরুদ্ধে গালাগাল করেননি! সুতরাং নিজে চালুনি হয়ে সুঁইয়ের বিচার করতে চাইলে সুশীলদের বলা উচিত, বার্ন ইউনিটে যেন আর একজনকেও যেতে না হয়, সে জন্য উচিত এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে পদত্যাগ করা। জীবন চলে গেলে ফেরানো যাবে না। মতা গেলেও মতা আসে। একজন মানুষ মতা আঁকড়ে রাখায় আর কত প্রাণ দেবে মানুষ? তিনি সেটাই করছেন, যা করলে আরো বেশি মানুষ মরে। অন্ধ সুশীলেরা কাঁপছেন সংলাপ জ্বরে। এই সুযোগে হরতাল-অবরোধে যাদের বুক খালি হচ্ছে, শুধু তারাই জানে এর ওজন কত ভারী। ১/১১ থেকে শিা নেয়নি কেউ, নেয়নি, ’৭৫ থেকেও।
এই সরকারের দ্বিতীয় অসুখটির নাম ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গি।’ ড. কিং বলেছেন, ‘মানবাধিকারে খড়গ চালানোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের মতা গণতান্ত্রিক।’ সুতরাং সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা পুনর্নির্মাণ না করলে শহীদ ুদিরাম, চে গুয়েভারাকে সন্ত্রাসের আঁস্তাকুড়ে ফেলতে হবে। এই সরকারের সন্ত্রাস দমনের নানান কৌশলের মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ ‘আনসারুল্লাহ বাহিনী’ উত্থানের চমক। ‘গৃহপালিত’ সন্ত্রাসীদের মধ্যে গডফাদার শামীম ওসমানকে চেনে না এমন মানুষ বাংলাদেশে আছে কি? আর এদের হাতেই বিরোধী দল নির্মূলের কার্যক্রম দিয়ে প্রতিবারই মাঠে নামানো হয় ‘গৃহপালিত’ আনসারুল্লাহ বাহিনী। শামীম ওসমানের ঘোষণা, ২৫ তারিখের পর দেশ থাকবে হাসিনার দখলে…। অতীতে হরতাল-অবরোধে বোমাবাজির বিপুল সাফল্য দেখিয়ে দলীয় মনোনয়ন আদায় করেই ছাড়ল নারায়ণগঞ্জ। সুতরাং হাসিনাতঙ্কের বিরুদ্ধে নির্বাচন বর্জন না করে নির্মূল হওয়ার ঝুঁকি কেন নেবে ১৮ দলীয় জোট? তাদেরও খবর ছিল, নির্বাচনে গেলে আওয়ামী লীগই ‘জিতবে’। সুতরাং হরতাল ডেকে ঘরে বসে থাকা ছাড়া খালেদা জিয়া আর কী করতে পারেন! তবুও শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কিছু করছেন! রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির হাবভাব, প্রতিদিন টকশোতে এক ঘণ্টা অভিযোগ করলেই ভোটারেরা প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে দেবে। নেপোলিয়ান বলেছিলেন, ‘বুদ্ধিজীবীরা বোবা হয়ে গেলে দেশ অন্ধকার হয়ে যায়।’ বলেননি, বুদ্ধিহীন হয়ে গেলে কী হয়!
পুঁজিবাদ বুঝি বলেই মধ্যরাতের সন্দেহের ত্রেটি এত বড়। তাহরির স্কোয়ারে গুলিবর্ষণের কারণে মুরসি, মোবারকের বিচার হলেও এখানে ব্যতিক্রম। সাঈদীর ফাঁসি এবং হেফাজতকে কেন্দ্র করে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করল পেটোয়া বাহিনী, এর সাথে মিসরের পেটোয়াদের পার্থক্য না থাকা সত্ত্বেও হাসিনাকে তারানকোদের তোয়াজের অর্থ বুঝব না কেন? মিসরের মতো সরকার বদলে দিলে সস্তা শ্রমে ব্যাঘাত ঘটবে, তাতে ইউরো আর ওয়ালস্ট্রিটের গায়ে রক্ত ঝরবে। এক ডলারে বানিয়ে ২৫ ডলারে বিক্রি করা শার্টের মজুরি একমাত্র মর্জিনাদেরকেই চীন-ভারতের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ দেয়া যায়। তাজরীন আর রানা প্লাজার পরও ২৭ ভাগ গার্মেন্ট আয় বাড়ার রহস্য এটাই। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের বিশাল বাজার আর সস্তা শ্রম, ওয়ালমার্টওয়ালাদের মোটা দাগের পুঁজি। সুতরাং মতা কামড়ে ধরে রাখতে মধ্যরাতের কূটনীতিকপাড়ায় এই যে বেহায়াপনা, এটা কি সাম্রাজ্যবাদীদের গর্ব নয়? সহজ-সরল সত্যগুলো বুঝতে এত কষ্ট!
নিশার মিশনে ক্রাইসিস আরো তীব্র হয়েছে। ১৮ নভেম্বর যখন দুই নেত্রীর সাথে বৈঠক করছেন, পুলিশের গুলিতে দুই শ্রমিক মারা গেলেও নীরব নিশা। মাঝে মধ্যে ড. ইউনূস আর আমিনুল ইসলাম হিক্কা ওদের আইওয়াশ। গণভবনকে সোজা করার হাজার সুযোগ হাতছাড়া করে বরং হাবভাবÑ ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’। একতরফা নির্বাচন বন্ধে এখন পর্যন্ত জাতিসঙ্ঘের শান্তিরা বাহিনী ফেরত আর গার্মেন্ট বন্ধের হুমকি দেয়া হয়নি। সাম্রাজ্যবাদ রায় বিএনপির আমলে মার্কিনিদের অভিজ্ঞতা সুখের নয়। এই দাগে হাসিনাতঙ্ক সৃষ্টির অন্যতম প্রাপ্তি, টিকফা সই। অর্থাৎ হাসিনা আসলেই কোনো আতঙ্ক নয়, বরং সাম্রাজ্যবাদীদের একটি ভরসা। ফাঁকা বর্তমানে উত্তর মেলেনি, আবারো ফিরছি অতীতে।
১৬ আগস্ট ১৯৪৬ সালে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ডাকে ‘প্রত্য সংগ্রাম দিবস’কে কেন্দ্র করে রক্তবন্যা শুরু হলে অবিভক্ত ভারতের সংখ্যাগুরুরা আপত্তি করলেও ইংরেজরা সাথে সাথে বুঝে ফেলল, এর পর দেশ ভাগ না করলে মেরুদণ্ডের সব ক’টা হাড় গুঁড়া করে বস্তায় ভরে পাঠিয়ে দেবে। এর পরেই ডাকা হলো আইনবিদ স্যার সিরিল রেডকিফকে। দেশ বিভাগ হয়েছে শতকরা ৯৬ ভাগ বাঙালি মুসলমানের ভোটে, পশ্চিমাদের মাত্র ৪৯ ভাগ। কোনো জাতি, দল, ধর্মের পে সাফাই গাইছি না, বরং ইতিহাসের শিাই প্রধান। অর্থাৎ ’৪৭ সালে দেশ বিভাগ আদায় এবং ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ করা বাঙালি মুসলমানেরা ৬৬ বছরে বহু অনাকাক্সিত ও বিপজ্জনক ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে গেছে। কখনো নিজেরাই যুদ্ধ-দাঙ্গায় জড়িয়েছে, কখনো বাধ্য করা হয়েছে তাদের। ‘তবে ৬৬ বছর ধরেই নানান নেতা, নানান অবতার অবতীর্ণ হয়েছে, কাছে কিংবা দুই হাজার মাইল দূর থেকে তাদেরকে নানাভাবে বোঝানো হয়েছে; কিন্তু কখনোই জানতে চাওয়া হয়নি, তারা তৈরি কি না!’ হেনরি ডেভিডের কথায় ফিরে যাই। তিনি বলেছিলেন, ‘শুধু মানুষ সৃষ্টি হলেই তারা ঠিক করবে, কী ধরনের সরকার তাদের চাই।’ ৬৬ বছর ধরেই আমরা এই একটি কঠিন সত্য থেকে বহু দূরে এগিয়ে গেছে অন্যেরা। আমরা কখনোই সৃষ্টি হতে পারিনি বলেই দেবদেবীরা নিজেদের লোভ, উচ্চাভিলাষ আমাদের ঘাড়ের ওপর চাপিয়ে দিয়ে মতা ভোগ করছেন অনন্তকাল। আমরা তাদের সেবাদাস। পাঁচ বছর পরপর এক দল অভিযোগ করেÑ আহসানউল্লাহ মাস্টার, অন্য দল বলে- বিশ্বজিৎ। দুর্ভাগ্য আমাদের, আমরা সৃষ্টি না হলে আহসানউল্লাহ মাস্টার কিংবা বিশ্বজিতের সংখ্যা কেবল বাড়বেই।
মধ্যরাতের কূটনীতি
রোড টু ক্রাইসিস পেছনে ফেলে অবশেষে একটি কথাই ভাবছিলাম, ৯/১১-এর পর বোমাবাজিতে ক্যাপিটল হিলের রাস্তায় দু-চারজন ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান অগ্নিদগ্ধ হয়ে মরলে কী ব্যবস্থা নিত মার্কিন প্রশাসন? তখনো কি বলত সংলাপের কথা? সুতরাং মোড়লদের সায় না থাকলে দেশ এই পর্যায়ে কখনোই পৌঁছত না। মধ্যরাতের কূটনীতিকপাড়ায় সংলাপের নামে চলছে অন্যরকম বাংলাদেশ তৈরির ষড়যন্ত্র, যার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভারত বনাম পশ্চিমাদের খোলামেলা দরকষাকষি। সিরিয়া, মিসরে সমস্যা হলে জাতিসঙ্ঘে আলোচনা হয়, কংগ্রেসে বিতর্ক হয়, ব্যবস্থা নেয়া হয়। শুধু বাংলাদেশের বেলায় ব্যতিক্রমের কারণ, তাদের স্কেলে ১৬ কোটি শ্রমভিত্তিক মানুষ খোল-ভুসি খায় কিংবা সিকি মানুষ যারা শ্রম আর দরজিগিরি ছাড়া আর কিছুই বিক্রি করতে পারে না। তাই দাউ দাউ করে যখন পুড়ছে বাংলাদেশ, তখনো ‘সংলাপ চাই সংলাপ’। কিসের সংলাপ? সংলাপ, আশা, সম্ভাবনা, সমঝোতার শব্দগুলো কি গাছের ডালে ঝুলতে দেখেছেন? অথচ কথায় কথায় ইরান-উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা। কথাগুলো ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতে হবে।
টলস্টয় লিখেছেন, ‘আমি বহু পণ্ডিতের বই পড়ে এবং তাদের সাথে সাাৎ করে একটি প্রশ্নেরও উত্তর পাইনি বরং ফিরতে হয়েছে নিজের কাছে।’ এই সূত্রে বলছি, দয়া করে কূটনীতিকপাড়ায় দৌড়ঝাঁপ আর দেবদেবী উপাসনা বন্ধ করে একবার নিজেরা ফয়সালা করুন, কী ধরনের সরকার চাই। ‘দুঃখজনক যে, ’৪৭ সাল থেকেই বলতে পারিনি, কী ধরনের সরকার চাই।’ এবার ব্যর্থ হলে দেবদেবীরা আমাদের ঘাড় থেকে কোনো দিনও এক চুল নড়বে না। এখন দায়িত্ব একটাই, রাজনীতিতে দেশী-বিদেশী কুষ্ঠনর্দমাগুলোর মুখ চিরতরে বন্ধ করে ফেলা। অতীতের মতো মেধাসম্পন্ন নেতৃত্ব সৃষ্টি করা। যে স্বাধীন দেশের ওপর দাঁড়িয়ে আছি, জন্মই হতো না, যদি না শেরেবাংলা এবং ভাসানীদের মতো মেধাসম্পন্ন জাতীয়তাবাদী নেতারা ‘লাহোর প্রস্তাব’ দিতেন। সুতরাং মেধাহীন বাচাল ৬০০ শতাব্দীর দেবদেবী বর্জনের জন্য এখনই উপড়ে ফেলা উচিত মেধা ধ্বংসকারী পোস্টার দিয়ে দেশ অন্ধকার করার মতো যেকোনো কার্যক্রম। অন্যথায় লাখ লাখ টকশোতে ঘণ্টা পার করব, বিশ্বজিৎ আর আহসানউল্লাহ মাস্টারের সংখ্যা বাড়বেই, ফলাফল শূন্য।
বি: দ্র: লেখাটি অ্যাক্টিভিজমের ভিত্তিতে
নিউ ইয়র্ক প্রবাসী