১ ট্রিলিয়ন ডলারের নতুন ঋণে বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি
নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে চলতি বছর বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি ১ ট্রিলিয়ন ডলারের নতুন ঋণে পড়তে যাচ্ছে। প্রায় ৯০০ কোম্পানির ওপর পরিচালিত এক জরিপের ভিত্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে। অভূতপূর্ব এ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মোট বৈশ্বিক করপোরেট ঋণের পরিমাণ ১২ শতাংশ বেড়ে ৯ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে। চলতি বছরের কিছু বড় করপোরেশন এত বড় ঋণের বোঝায় পড়েছে যে যা মাঝারি আকারের অনেক দেশের অর্থনীতির সমান।
একীভবন ও অধিগ্রহণ বৃদ্ধি, শেয়ার পুনঃক্রয় ও লভ্যাংশ হস্তান্তরে ঋণ গ্রহণের কারণে গত বছরও ঋণের পরিমাণ ৮ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু চলতি বছর সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে ঋণ বাড়ছে। নভেল করোনাভাইরাস মহামারী যেভাবে বিভিন্ন কোম্পানির মুনাফায় হাত বসিয়ে দিচ্ছে, তা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে এ ঋণ গ্রহণ করা হচ্ছে।
নতুন করপোরেট ঋণ সূচক পরিমাপ ও সংকলনকারী প্রতিষ্ঠান জেনাস হেন্ডারসনের পোর্টফোলিও ম্যানেজার শেঠ মায়ার বলেন, কভিড-১৯ সবকিছু পাল্টে দিয়েছে। এখন করপোরেশনগুলো তাদের মূলধন রক্ষা করতে চাইছে এবং ব্যালান্স শিট সুরক্ষা করতে চাইছে। গত জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে কোম্পানিগুলো বন্ড মার্কেট থেকে ৩৮ হাজার ৪০০ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছে। মায়ার বলছেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় এ ধরনের ঋণ গ্রহণের নতুন রেকর্ড স্থাপিত হয়েছে।
গত মার্চে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো বাদে সব ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ঋণ দেয়া বন্ধ রেখেছিল। কিন্তু ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড), ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) ও ব্যাংক অব জাপানের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো জরুরি করপোরেট ঋণ অনুমোদন করায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ফের তাদের দরজা উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
নতুন ঋণ সূচকে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোর ঋণের পরিমাণ ২০১৪ সালের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। মুনাফা প্রবৃদ্ধির চেয়ে ঋণ প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। জরিপে অংশ নেয়া ৯০০ কোম্পানির করপূর্ব মুনাফা সামষ্টিকভাবে ৯ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
শেয়ারহোল্ডারের ফিন্যান্সের তুলনায় ঋণের পরিমাণ ২০১৯ সালে রেকর্ড ৫৯ শতাংশ বেড়েছিল। অন্যদিকে সুদ প্রদানের বিপরীতে মুনাফার পরিমাণও নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছিল।
বিশ্বের মোট করপোরেট ঋণের প্রায় অর্ধেকের প্রতিনিধিত্ব করেছে মার্কিন কোম্পানিগুলো। গত বছর তাদের ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার। গত পাঁচ বছরে সুইজারল্যান্ড বাদে যেকোনো প্রধান অর্থনীতিগুলোর তুলনায় সবচেয়ে দ্রুতগতিতে এ ঋণ বেড়েছে। গত কয়েক বছরে সুইজারল্যান্ডে একীভবন ও অধিগ্রহণ বাড়ার কারণে করপোরেট ঋণে বড় উল্লম্ফন দেখা গেছে।
করপোরেট ঋণে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি জার্মানি, যার ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার। বিশ্বের সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত তিন করপোরেশনের একটি ফক্সওয়াগনও জার্মানির। সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত এ কোম্পানির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ২০০ কোটি ডলার, যা দক্ষিণ আফ্রিকা বা হাঙ্গেরির মতো দেশের ঋণের চেয়েও বেশি।
বিপরীতে নতুন সূচকের অন্তর্ভুক্ত এক-চতুর্থাংশ কোম্পানির কোনো ঋণ নেই এবং কারো কারো কাছে নগদ অর্থের মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় করপোরেশনটি হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন গুগলের স্বত্বাধিকারী অ্যালফাবেট, যার নগদ অর্থের মজুদ ১০ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।
মায়ার বলেন, ক্রেডিট মার্কেটগুলোর এখনো কভিড-১৯ পূর্ব পরিস্থিতিতে ফেরার সুযোগ রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে এখনো নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিতের সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেক উদ্বেগও রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা দুই মাস আগেও যে ইতিবাচক ছবি কল্পনা করেছিলাম, বর্তমানে তার চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি আমরা দেখতে পাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে।